মীরসরাইয়ের সাহেরখালী-ডোমখালী ঘাটে ইলিশপ্রেমীদের ভীড়

মাঈনুল ইসলাম ডিউক, মীরসরাই: ইলিশ মাছ পছন্দ করে না এমন বাঙালী নেই৷ আবহমান বাংলার সংস্কৃতির একটা অংশে ইলিশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে নববর্ষকে স্বাগতম জানানো হয় পান্তা ইলিশ দিয়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেক পূজা পার্বণে ইলিশের ব্যবহার রয়েছে। স্বাদে, গন্ধে, বৈশিষ্ট্যে এ মাছ ভিন্ন হওয়ায় আলাদা কদর এই মাছের।

জানিয়ে রাখা ভাল বাংলাদেশ শুধু ইলিশ উৎপাদনে প্রথমই না, বাংলাদেশে ইলিশ উৎপাদন হয় ৬৫ শতাংশ, ভারতে ১৫ শতাংশ, মিয়ানমারে ১০ শতাংশ এবং বাকী ১০ শতাংশ আরব সাগর, প্যাসিফিক এবং আটলান্টিকে হয়। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের ভূমিকা অনেক হওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তর ২০১৭ সালে সনদ প্রদানের মাধ্যমে ইলিশকে জিআই (Geographical Indicator)/ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ইলিশ সাধারণ সারা বছর সামান্য পরিমাণ ধরা পড়ে কিন্তু বছরের এই সময় (জুলাই এর মাঝামাঝি) থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম। ইলিশ নোনাপানির মাছ হলেও প্রজননের জন্য মিঠা পানির প্রয়োজন পড়ে সেজন্য জুন-জুলাই মাসে মা ইলিশ ডিম দেয়ার জন্য নদীতে গমন করে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাকে ঘিরে থাকা চাঁদপুর, শরিয়তপুর, ভোলা, পটুয়াখালী এবং নোয়াখালী অঞ্চলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। দক্ষিণে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার সাহেরখালী-সন্দ্বীপ চ্যানেল পয়েন্ট ডিম ছাড়া এবং পোনা উৎপাদনের ‘হটস্পট’।

জাটকা ধরা বন্ধকল্পে সরকার ২১ জুলাই পর্যন্ত ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর লাগতে শুরু করলো ইলিশ। ২২ তারিখ থেকে সাহেরখালী এবং ডোমখালী ঘাটে লক্ষ করা গেছে ইলিশপ্রেমীদের ভীড়। ঘাটে মাছ প্রায় সব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। মাঝারি সাইজের ইলিশ (৩৫০-৪০০ গ্রাম) ৩০০ টাকা বড় সাইজের ইলিশ কেজি ৪০০ টাকা করে। একটার পর একটা ইলিশের নৌকা ঘাটে ভিড়ার সাথে সাথে ক্রেতাদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে জেলেরা।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বড় বড় নদীগুলোর (প্রজননক্ষেত্র) গতিপথ ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদনও কিছুটা ব্যহত হচ্ছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের এই অমূল্য সম্পদ যেন কিছুতেই বিলুপ্ত না হয় সেজন্য মৎস্য অধিদপ্তর কৃত্রিম উপায়ে ইলিশ প্রজননকেন্দ্র, হ্যাচারী, এবং ইলিশ রক্ষার খাতিরে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ইন্সটিটিউট গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজও চলমান রয়েছে।