মডেল থেকে যেভাবে রাতের রাণী পিয়াসা

১২ বছর আগে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটা মেয়ের ঢাকায় আগমণ। এরপর ঢাকায় একটা কাজ খুঁজে বেড়ানো। বেসরকারি একটি টেলিভিশনে কাজ পেয়েও যান তিনি। ওই চাকরি পাওয়ার পর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। আমরা বলছিলাম বারিধারায় নিজ বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার কথা।

ঢাকার বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের কথা মনে আছে? নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা। তখনও আলোচনায় এসেছিল এই মডেল পিয়াসার নাম। সেখানে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদারের ছেলের বউ ছিলেন পিয়াসা। মিডিয়ায় তখন মুখরোচক নানা গুঞ্জন ছিল। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মডেলিং সূত্রে শুরুতে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদারের সাথে মূলত সম্পর্ক ছিল পিয়াসার। তবে পরে সম্পর্ক হয় তার ছেলে সাফাতের সঙ্গে। এরপর ধনীর দুলাল সাফাতকে বিয়ে করেন পিয়াসা।

সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছিল, এই বিয়ে কোনমতেই মানতে পারেননি আপন জুয়েলার্স এর দিলদার। সে পিয়াসাকে বারবার বলেছিল তার ছেলেকে যেন বিয়ে না করে। বিয়ের পরও ডিভোর্স দিতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু মডেল পিয়াসা ধনীর দুলালকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না। এরপর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণকাণ্ড সামনে আসে। এর একপর্যায়ে তারও নানা স্ক্যান্ডাল সামনে আসতে থাকে। পরবর্তীতে তার শ্বশুর দিলদারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করে এই পিয়াসা।

রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণকাণ্ডে প্রথমে ভুক্তভোগীদের মামলা করাতে উৎসাহী থাকলেও পরে সে পুরোপুরি ঘুরে যায় বলে বাদীদের অভিযোগ। এমনকি সেই মামলার এজাহারে পিয়াসার নামও ছিল। সে তার স্বামী সাফাতের কাছে বিভিন্ন মেয়েকে বান্ধবী পরিচয়ে নিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করত বলেও সেসময় খবর বেরিয়েছিল।

সেই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন আলোচনার বাইরে ছিল পিয়াসা। এরপর আবারও তার নাম উঠে আসে মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের সময়। বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সাবেক গার্লফ্রেন্ড সে। এমনই খবর বেরিয়েছে সংবাদ মাধ্যমে। এ কারণেই সে মুনিয়ার ইফতারের ছবি আনভীরের বউ এবং মায়ের কাছে সরবরাহ করে। এতে মুনিয়ার সাথে আনভীরের মনোমালিন্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যার শিকার হয় মুনিয়া। পিয়াসা যদি সেই ছবি সরবরাহ না করত তাহলে হয়ত আজও বেঁচে থাকত মুনিয়া।

এবার ভিন্ন আলোচনায় পিয়াসা। রোববার রাতে হঠাৎ করেই সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের কাছে খবর আসতে থাকে একটি অভিযানের। সেখানে বলা হয় রাজধানীর বারিধারার একটি বাসায় অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে সেই বাসাটি কার? অভিযান চলছে কার বাসায়? জানা গেল, বাসাটি মডেল পিয়াসার। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তার বাসায় অভিযান চলছে। এরও পরে দেখা সেই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণে মাদকদ্রব্য। পুলিশ বলছে, তার বাসাটি যেন ছোটখাটো একটি বার।

এ কাজে তার আরও সঙ্গী রয়েছে। এমনই একজন মডেল মৌ আক্তার। তার বাসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। পিয়াসার বাসায় অভিযানের পর মৌ এর বাসায়ও চালানো হয় অভিযান। সেখানেও একই কাণ্ড। বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ ওয়াইনসহ মাদকদ্রব্য। সেই বাসাটিও যেন একটি মিনি বার।

করোনার সময়ে বাসায় কেন বিদেশি মদের বার? এমন প্রশ্নের জবাব মেলে পুলিশের কথায়। পুলিশ জানায়, মডেলিংয়ের নামে তারা মূলত রাতের রাণী। সারাদিন তারা ঘুমায়। আর রাত হলেই তারা বিভিন্ন ক্লাবে যায়। সেখানে তাদের টার্গেট ধনীর দুলালেরা। এরপর তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় বাসায়। এখানে এলেই ধনীর দুলালদের মদ খাইয়ে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড করা হয়। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। এভাবেই তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন অনেক মডেল ও নায়িকা নামধারীরা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

এমন অবস্থায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে শোবিজ অঙ্গন। প্রকৃত মডেল, নায়িকা ও শিল্পীরা এখন পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে শোবিজ অঙ্গনে সংকট নেমে আসবে বলে তাদের শঙ্কা। তারা বলছেন, মডেলিংয়ের নামে যারা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। তবে নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন।