রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি (Alexey Navalny)-কে চায়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ। বৃহস্পতিবার এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন তাঁর মুখপাত্র কিরা ইয়ামুশ। ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক ৪৪ বছর বয়সী নাভালনিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
অ্যালেক্সেই নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ বলছেন তাদের সন্দেহ মি. নাভালনির চায়ে কিছু মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে তার অবস্থা স্থিতিশীল তবে সঙ্কটজনক।
চুয়াল্লিশ বছর বয়স্ক মি. নাভালনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক ছিলেন।জুন মাসে সাংবিধানিক সংস্কারের ভোটকে তিনি একটা “অভ্যুত্থান” বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ওই সংস্কার “সংবিধানের লংঘন”। ওই সংস্কারের ফলে মি. পুতিন আরও দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।
মি. নাভালনি ২০১১ সালে যে দুর্নীতি বিরোধী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিরা ইয়ারমিশ তার তথ্য সচিব। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেছেন: “আজ সকালে মি. নাভালনি টোমস্ক শহর থেকে মস্কোয় ফিরছিলেন।
“ফ্লাইটে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিমানটিকে ওমস্ক শহরে জরুরি অবতরণ করতে হয়। অ্যালেস্কেই-কে বিষ খাওয়ানো হয়েছে।”তিনি আরও বলেন: “আমাদের সন্দেহ তার চায়ের সাথে কোনরকম বিষ মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি সকাল থেকে ওই চা ছাড়া আর কিছু খাননি।”চিকিৎসকরা বলছেন বিষাক্ত পদার্থ গরম পানীয়ের মাধ্যমে শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি এখন হাসপাতালে অচেতন।”
ওমস্কের-জরুরিকালীন-হাসপাতাল-যেখানে-মি.-নাভালনি-চিকিৎসাধীন.
মিস ইয়ারমিশ পরে টু্ইট করে জানিয়েছেন যে মি. নাভালনিকে ভেন্টিলেটারে রাখা হয়েছে এবং তিনি কোমায় আছন্ন। হাসপাতালে এখন প্রচুর পুলিশ রয়েছে।তিনি বলেন চিকিৎসকরা প্রথম দিকে তাদের সাথে তথ্য শেয়ার করছিলেন, কিন্তু এখন তারা বলছেন বিষ সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে দেরি হবে।
“তারা এখন কাল ক্ষেপণ করতে চাইছে। এবং তারা যা জানে সেটা আমাদের বলছে না।”তিনি স্থানীয় সময় দুপুর ২:৫৮-তে (গ্রেনিচ মান সময় সকাল ৮:৫৮) টুইট করে বলেন মি. নাভালনির অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। তিনি এখনও অচেতন।
তাস বার্তা সংস্থা ওমস্ক জরুরিকালীন হাসপাতালের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে: “অ্যালেক্সেই আনাতোলেইভিচ নাভালনি – জন্ম ১৯৭৬। পয়সনিং ইনটেনসিভ কেয়ার।”
তবে হাসপাতালের একজন শীর্ষস্থানীয় ডাক্তার পরে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে মি. নাভালনিকে বিষ দেওয়া হয়েছে কি না সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। যদিও “স্বাভাবিক বিষক্রিয়া” হয়ে থাকতে পারে এমন একটি ধারণা করা হচ্ছে।
ওই ডাক্তার আনাতোলি কালিনিচেঙ্কো বলেছেন মি. নাভালনির অবস্থা স্থিতিশীল, যদিও তার অবস্থা গুরুতর। প্রাণ সংশয় আছে কি না সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে মি. নাভালনিকে বিমানবন্দরের রানওয়েতে স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে।
আরেকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে বিমানের ভেতর মি. নাভালনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
বিমানের যাত্রী পাভেল লেবেদেফ বলছেন: “বিমান যাত্রার শুরুতেই তিনি টয়লেটে যান এবং ফিরে আসেননি। তিনি খুবই অসুস্থ বোধ করছিলেন। তারা তাকে সাহায্য করতে পারছিল না। তিনি যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন।”সোশাল মিডিয়ায় আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে মি. নাভালনি টোমস্ক বিমানবন্দরের একটি ক্যাফেতে বসে এক কাপ কফি খাচ্ছেন।ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা বলছে ক্যাফের মালিক দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখছেন সেখান থেকে কোন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় কিনা।
গত জুলাই মাসের শেষের দিকেও একবার অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষপ্রয়োগ করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। সেবার তাঁর চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখ থেকে অবিরাম জল পড়তে থাকে ও শরীরের উপরাংশে র্যাশ বের হতে শুরু করে। হাসপাতালে স্টেরয়েড দেওয়ার পরে তিনি খানিক সুস্থ হয়ে ওঠেন। এক মাসের মধ্যে ফের তাঁর উপরে বিষপ্রয়োগের অভিযোগ উঠল। যা ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। এই ‘চক্রান্তে’ অভিযোগের আঙুল উঠেছে সরাসরি প্রেসিডেন্ট পুতিনের দিকে। যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে ক্রেমলিন। বরং নাভালনের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে তারা।
অ্যালেক্সেই নাভালনি?
আলেক্সেই-নাভালনি
সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করে দেবার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে তার নাম উঠে আসে। তিনি মি. পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া দলকে উল্লেখ করেছিলেন “অসৎ ও চোরেদের দল” বলে, এবং বেশ কয়েকবার তাকে জেলে যেতে হয়েছে।
মি. পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া সংসদীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপি করেছে বলে প্রতিবাদ করার পর তাকে ২০১১ সালে ১৫ দিনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়। মি. নাভালনিকে ২০১৩র জুলাইয়ে তছরূপের অভিযোগ অল্পদিনের জন্য জেলে পাঠানো হয়, তবে তিনি বলেন এই দণ্ডাদেশ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
তিনি ২০১৮র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রতারণার দায়ে তিনি আগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এই কারণ দেখিয়ে তাকে প্রার্থিতা দেয়া হয়নি। মি. নাভালনির মতে এটাও ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।জুলাই ২০১৯য়ে মি. নাভালনিকে আবার কারাগারে পাঠানো হয় অননুমোদিত প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠনের জন্য।
কারাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা বলেন তার “কোন কিছুর স্পর্শ থেকে চামড়ার প্রদাহ” হয়েছে। কিন্তু মি. নাভালনি বলেন তার কোনদিন কোন কিছু থেকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া আগে হয়নি।
তার নিজের চিকিৎসক বলেন তিনি “কোন বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে” এসেছিলেন। মি. নাভালনিও বলেছিলেন তার ধারণা তাকে বিষ দেয়া হয়েছে।মি. নাভালনির ওপর ২০১৭ সালে অ্যান্টিসেপটিক রং দিয়ে হামলা চালানো হলে তার ডান চোখ রাসায়নিক থেকে গুরুতর পুড়ে যায়।
মর্থকদের-মধ্যে-নাভালনি
গত বছর তার দুর্নীতি বিরোধী ফাউন্ডেশনকে সরকারিভাবে “বিদেশি গুপ্তচর সংস্থা” বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে এই সংস্থার কর্মকাণ্ডের ওপর সরকার কঠোর নজরদারি শুরু করে।