ভারত গোমতী-মুহুরি নদীর ব্যারাজ খোলায় বিপর্যয়কর বন্যা: নদী বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক

‘এবারের অতিবৃষ্টির বন্যা যে ড্যাম-ব্যারাজ খোলার জন্যই বিপর্যয়কর হয়েছে, সেটা স্রোত দেখে বোঝা যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন নদী নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক শেখ রোকন। তিনি বলেন: স্বাভাবিক বন্যার পানি নদীতে স্রোত তৈরি করতে পারে, মাঠে ও বসতিতে স্রোত তৈরি করার কোনও কারণ নেই।

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি একথা জানান। সাংবাদিক শেখ রোকন নদীবিষয়ক সংগঠন ‘রিভারাইন পিপল’ এর সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন: অনেকে ফেসবুক, ফোন, হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে নক করেছেন। সময়ের অভাবে সবাইকে একসাথে বলি- ভাইরে বা আপারে, বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেন। অতিবৃষ্টি হলে বন্যা হয়; বন্যার পানি গড়িয়ে নিচে নামে, বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার মানে না; এটা তো যে কেউ জানে! বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। কুমিল্লার গোমতীর পানিতে যে ফেনীর মুহুরিতে বন্যা হবে না, সেটাও কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়। এসব নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। এখানে ভারত-বিরোধিতা বা ভারত-বন্ধুত্বেরও কিছু নেই। প্রশ্নটা অন্যত্র।
.
প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, গোমতী বা মুহুরীতে ভারতীয় ড্যাম বা ব্যারাজ আছে কিনা? উত্তর হচ্ছে, আছে। যারা বলছেন মুহুরীতে ব্যারাজ নেই, তারা ভুল বলছেন। মুহুরী নদীতে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার কলসিতে একটি ব্যারাজ রয়েছে। মুহুরী অববাহিকার উপনদীগুলোতেও রয়েছে একাধিক ড্যাম। না জেনে কথা না বলাই ভালো। এবারের অতিবৃষ্টির বন্যা যে ড্যাম-ব্যারাজ খোলার জন্যই বিপর্যয়কর হয়েছে, সেটা বোঝা যায় স্রোত দেখে। স্বাভাবিক বন্যার পানি নদীতে স্রোত তৈরি করতে পারে, মাঠে ও বসতিতে স্রোত তৈরি করার কোনও কারণ নেই। এবারের বন্যা কতটা বিপর্যয়কর হয়েছে, পানি নেমে যাওয়ার পর আরও বেশি বোঝা যাবে।
.
দ্বিতীয় প্রশ্ন, গোমতীর ডম্বুর ড্যাম বা মুহুরীর কলসি ব্যারাজ থেকে পানি ছাড়ার আগে উজানের দেশ ভারত ভাটির দেশ বাংলাদেশকে আগাম সতর্ক করেছিল কিনা? উত্তর হচ্ছে, করেনি। এটা ঠিক, বৃষ্টিপাত ও বন্যার আগাম তথ্য বাংলাদেশকে জানিয়ে থাকে। কিন্তু ডম্বুর-কলসি ব্যারাজ বা ড্যাম খুলে দেওয়ার তথ্য বাংলাদেশকে জানায়নি।
.
তৃতীয় প্রশ্ন, না জানিয়ে ড্যাম বা ব্যারাজ খুলে দিলে কী অসুবিধা? বন্যা তো এমনিতেই হচ্ছে। স্বাভাবিক বন্যা হতেই পারে, তাতে খুব একটা অসুবিধা নেই। কিন্তু যখন হঠাৎ ড্যাম বা ব্যারাজ খুলে দেওয়া হয়, তখন সেই বন্যা বিপর্যয়কর হতে বাধ্য। স্বাভাবিক বন্যায় হয়তো তিন দিন ধরে পানি বাড়ে ও চলে যায়। কিন্তু ড্যাম বা ব্যারাজ খুলে দিলে তিন দিনের বন্যা তিন ঘণ্টার ঘনত্বে চলে আসে। আর যদি ভাটির দেশকে না জানিয়ে ব্যারাজ ছাড়া হয়, তাহলে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি ও দুর্গতদের উদ্ধার তৎপরতার সময়ও থাকে না। জান ও মালের ক্ষতি অনেক বেশি হয়। এবার সেটাই ঘটেছে।
.
চতুর্থ প্রশ্ন, না জানিয়ে ড্যাম-ব্যারাজ খুলে দেওয়ার জন্য যৌথ নদী কমিশনে বাংলাদেশ পক্ষ কি ভারতীয় পক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে? উত্তর, সম্ভবত না। সেজন্যই আমি বলেছিলাম, যৌথ নদী কমিশন ঘুমাচ্ছে কিনা?