বিনা কারণে ঢাকায় আসতে র‌্যাবের মানা

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটের সময় বিনা প্রয়োজনে নাগরিকদের ঢাকায় অবস্থানে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি নগরবাসীর সুবিধার্থে ঠিকানা নির্দেশক ফটো আইডি সঙ্গে রাখার আহ্বান জানিয়েছে র‌্যাব।

পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক নজরদারীর পাশাপাশি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন: ইতোমধ্যে প্রার্থীদের উৎসবমুখর ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য পরিপূর্ণ চিত্র আমরা দেখেছি। নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। যাতে প্রতিটি ভোটার নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট প্রদান করতে পারে।

গত নির্বচনের চেয়ে এবার বেশি র‌্যাব সদস্য মাঠে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন: প্রতিটি কেন্দ্রে র‌্যাবের একটি পেট্রোলিং টিম থাকবে। ঢাকায় পাঁচটি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে, সেখানে স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ থাকবে। যাতে যে কোন আপদকালীন পরিস্থিতি অল্প সময়ের মধ্যে মোকাবেলা করা যায়।

এছাড়া কমান্ডো বাহিনী, হেলিকপ্টার টিম প্রস্তুত থাকবে। বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। তাছাড়া ২৪ ঘণ্টা পুরো পরিস্থিতি স্পেশাল মনিটরিংয়ে থাকবে।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুয়ায়ী আজ থেকে র‌্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবে। ইতোমধ্যে সকল হুমকি এবং ঝুঁকি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করা হচ্ছে।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং প্রবেশ পথে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি করা হবে। ভোটগ্রহণ, গণনা থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে র‌্যাব মাঠে থাকবে।

ওয়ার্ড কাউন্সিল নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে ভোটারদের অনুরোধ জানিয়ে র‌্যাবের ডিজি বলেন: ছিনতাইকারী, ম্যানহোলের ঢাকনা চোর শ্রেণীর লোক যাতে নির্বাচিত হয়ে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এটা খুব দুঃখজনক যে, আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও ম্যানহোলের ঢাকনা চোর কাউন্সিলর হয়ে আসে।

‘সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেগুলো কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেদিকে র‌্যাবের বাড়তি নজর থাকবে। তবে আমরা‌ আগে থেকেই কিছু করতে চাচ্ছি না। কারণ অপব্যাখ্যা হতে পারে। দেশের ভোটার, আইন-বাহিনীর সদস্যরা ভোটদান ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। আমি মনে করি না কেউ নির্বাচনকেন্দ্রিক অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করবেন।

এরপরেও যদি কেউ করার চেষ্টা করেন তাহলে দেশে যে প্রচলিত আইন আছে সেই আইনের আওতায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

ভোটের মাঠের পরিবেশ সুসংগত রাখতে বিনা প্রয়োজনে কাউকে ঢাকায় না থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন: নির্বাচনে ভাই-বোন আত্মীয় প্রার্থীর ক্যাম্পেইন করার জন্য যারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাদের থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, এবার আপনারা চলে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় কোন লোকের অপতৎপরতা আমরা চাই না। কারণ আজ রাতে প্রচারণা শেষ হয়ে যাবে। যদি কেউ থেকেও যান, আশা করবো আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন। তবে যারা জেনুইন ভোটার তাদের চলাফেরা ভোটদানে সমস্যা করবেন না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব ডিজি বলেন: বাইরের কেউ ঢাকায় অবস্থান করলে তাদেরকে জেলে পাঠাবো বিষয়টা এমন নয়। প্রত্যেকটা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, জেল জুলুমের ভীতি আমরা দেখাতে চাই না। আমার মনে হয় না আমরা সেই পর্যায়ে রয়েছি। আমরা আহ্বান রেখেছি যাতে করে শহরে যারা জেনুইন ভোটার তারা সহজে শান্তিপূর্ণভাবে ও সচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে এবং নিরাপদ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্যই। মূলত শৃঙ্খলা রক্ষায় হচ্ছে আমাদের আহবানের মূল লক্ষ্য কাউকে জেলে পাঠানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে যদি কেউ জেলে পাঠানোর মত কাজ করেন, তাহলে তো জেলেই যাবেন।

কাল-পরশু যারা রাজধানীতে চলাফেরা করবেন তাদেরকে সঙ্গে ঠিকানা নির্দেশক ফটো আইডি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

নির্বাচনী সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি বলেন: অতীতের ইতিহাস যদি দেখেন তাহলে এই ধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ছাড়া কিছুই না। এসব ঘটনাকে বড় করে দেখার কিছু নাই আবার এটাও ঠিক তুচ্ছ ঘটনাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যদি আইন বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড ঘটে তাহলে সংক্ষুব্ধ হয়ে যে কোন প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করতে পারেন কিংবা থানা অভিযোগ করতে পারেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন বিএনপির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী ঢাকায় এনেছেন এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন: আমি রাজনৈতিক বক্তব্যের বিষয়ে কোন মন্তব্য করব না। তবে আমি বলবো আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় কোন লোকের অপতৎপরতা চাইনা।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সহিংসতার আশঙ্কার ব্যাপারে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন: ওনারা আশঙ্কা করতে থাকুক, আর আমরা নির্বাচন করি অসুবিধা নাই।