বিচারপ্রার্থীর পেছনে বিচারকের হাঁটা, এমন ঘটনা আর নেই!

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ বলেছেন, বিচারপ্রার্থীর পিছনে আদালতে বিচারক হাঁটা, পৃথিবীতে এ রকম ঘটনা আর একটিও নেই।

আজ রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) মাহমুদুর রহমানের কারাগারে পাঠানোর আদেশের পরে জয়নাল আবেদিন মেজবাহ এ দাবি করেন।

এসময় আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ সাংবাদিকদের কাছে একটি ছবি দেখান। ছবিতে দেখা যায়, এ মামলায় ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন বিচারক আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে চলে যাওয়ার সময় তার পিছনে হাঁটছিলেন মামলার তৎকালীন বিচারক আসাদুজ্জামান নূর। এ ছাড়া তৎকালীন ঢাকার সিএমএম সৈয়দ রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরের তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ও আওয়ামী লীগের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু হাঁটছিলেন।

সাংবাদিকদের জয়নাল আবেদিন মেজবাহ বলেন, স্বৈরাচারী সরকার বিচার ব্যবস্থার নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা করেনি। আপনারা দেখেন, স্বৈরাচার সরকারের আমলে বিচার বিভাগ কতটা নিচে নেমে গিয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের পেছনে এই আদালত যিনি রায় দিয়েছেন (বিচারক) তিনি বাদীর পেছনে হাঁটতেছেন। বিচারপ্রার্থীর পেছনে আদালতের বিচারক হাঁটা, পৃথিবীতে এরকম ঘটনা আর একটিও নেই। আমরা আশা করব মাননীয় প্রধান বিচারপতি এটা দেখবেন।

মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী আরও বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের পেছনে অনেক অন্যায় অবিচার হয়েছে। এই বিচারকরা এভাবেই রায় দিয়েছেন এবং যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা রাখছি।

এদিন আদালত প্রাঙ্গণে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। মেরুদণ্ড সোজা রাখবার জন্য আমি এসেছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আজকে আত্মসমর্পণ করেছি। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে। এ মামলা পুরোটাই সাজানো। তৎকালীন সরকার ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা চালু রাখতে আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে।

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘আইনে যেটা আছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আমি আত্মসমর্পণ করব। আমার লড়াই অব্যাহত রাখব। যদিও এই মামলা মিথ্যা এবং একটা উদ্ভট ব্যাপার। আমার লড়াই অব্যাহত থাকবে।’

মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ শুনানি শেষে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ সকালে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে আদালতে আসেন মাহমুদুর রহমান। এ সময় তার পক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।’

জয়নাল আবেদিন মেজবাহ বলেন, ‘এবার অতি দ্রুত ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হবে। সেই সঙ্গে জামিনের আবেদনও করা হবে।

নথি থেকে গেছে, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন—জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভুইয়া।

এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে শেখ হাসিনার ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। এ অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।