বাবা ঠিক মায়ের মতো নয়। সাধারণত একটু দূরের, কঠিন চেহারা, ঘরের বাইরে থাকেন বেশি সময়, অত সহজে হাসেন না। এই বাবাকেই কোনো না কোনো সময় ঠিক চিনে ফেলে সন্তান।বাইরে তিনি যত কঠিন ভেতরে ততটাই কোমল। ভরসা ও ছায়ার নাম বাবা। পরম নির্ভরতার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে হাসিমুখে উৎসর্গ করা এই বাবাকে আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন।প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার দিবসটি উদযাপন করা হয়। সে হিসাবে আজ ২১ জুন রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস।পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপিত হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান সোনোরা লুইস ডডের মা। ডডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন সবে যুদ্ধ থেকে ফিরেছেন। ডডের বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর। তারপর থেকেই সে দেখছে তাদের ছয় ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য তার বাবা রাত-দিন কি কঠিন পরিশ্রমই না করছেন।
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান সোনোরা লুইস ডডের মা। ডডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন সবে যুদ্ধ থেকে ফিরেছেন। ডডের বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর। তারপর থেকেই সে দেখছে তাদের ছয় ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য তার বাবা রাত-দিন কি কঠিন পরিশ্রমই না করছেন।
বাবার আদর-স্নেহের ছায়াতলে থেকে তারা তাদের মায়ের অভাব বুঝতেই পারেনি। বাবাই একইসঙ্গে মা ও বাবা’র ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
তারপর ১৯০৯ সাল। ডডের বয়স তখন ২৭ বছর। সে দেখলো মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য সারাবিশ্বে মা দিবস পালিত হয়। কিন্তু বাবাকে ভালোবাসা জানানোর কোনো বিশেষ দিনক্ষণ নেই। তখন তার মাথায় বুদ্ধি এলো। ডড ভাবলো মা দিবসের মতো ‘বাবা দিবস’ থাকলে বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর সুযোগ ঘটবে।
ডডের এমন ভাবনাকে কেউ-ই গুরুত্ব দিতে চাইলো না। উল্টো হাস্য-রসিকতা করে উড়িয়ে দিলো। তাতে ডড কিন্তু মোটেও দমে যায়নি। তার আগ্রহ আরো প্রবল হয়ে উঠলো। বাবার প্রতি তার ভালোবাসার দৃষ্টান্ত সে স্থাপন করবেই। কারণ বাবাই তার সব। তারপর থেকে সে প্রকাশ্যে বাবা দিবস পালনের পক্ষে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালালো।
প্রচেষ্টা বৃথা গেলো না ডডের। পরের বছর ১৯১০ সালে ডডের নিজ শহর ওয়াশিংটনের স্পোকান শহরে কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পালিত হলো ‘বাবা দিবস’। ১৯১৬ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিবসকে সমর্থন করেন। তাদের জাতীয় আইনসভাতেও স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি সন্মান জানাতে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ পালিত হয়।
বাবা দিবস পালনের ইতিহাস খুব বেশি দিনের না হলেও বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ দিবসটি পালন করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব দেশ একই দিনে বাবা দিবস পালন করে না। বরং বেশির ভাগ দেশের ভিন্ন ভিন্ন দিন রয়েছে বাবাকে ভালোবাসা জানানোর জন্য। এমনকি দেশভেদে বাবা দিবসের রীতিতেও রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য।
বাবা দিবস পালনে ভিন্ন দেশের ভিন্ন রীতি:
বাংলাদেশ: আমাদের দেশে বাবা দিবস পালনের ব্যাপক প্রচলন নেই। শহরে আধুনিকমনস্ক তরুণ-তরুণীরা এই দিবসটি পালন করে নিজেদের মতো করে। তবে ঘটা করে পারিবারিক আয়োজন খুব একটা হয়না এখানে। তবে আমরা বাঙালিরা বাবাকে খুব বেশি ভালোবাসি প্রতিদিন প্রতিক্ষণ।
অস্ট্রেলিয়া :সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার অস্ট্রেলিয়ায় বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিন বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে সন্তানরা বেছে নেয় ফুল, নেকটাই, চকোলেট বা বাবার প্রিয় কোনো কিছু। শুধু তাই নয়, এদিন বাবাসহ পরিবারের সবাই একত্রে সকালের নাস্তা করে। এছাড়া সারাদিন বাবার সঙ্গে কাটায় অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা। তাদের বিশ্বাস এতে সন্তানদের সঙ্গে বাবার ভালোবাসার বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়।
আমেরিকা :১৯৭২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন বাবা দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রোববার আমেরিকায় বাবা দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিনটি আমেরিকার পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলনীর মতো। তাই যারা বাড়ি থেকে দূরে থাকে তারা এ দিন বাড়ি আসার চেষ্টা করে, যাতে সবাই মিলে একসঙ্গে বাবা দিবস পালন করা যায়। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে আমেরিকানদের পছন্দের তালিকায় আছে ফুল, কার্ড, চকোলেট, নেকটাই।
ভারত:ভারতে বাবা দিবস পালনের রীতি খুব বেশি দিনের নয়। মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর অনুকরণে ভারতে বাবা দিবস পালিত হয়। সাম্প্রতিককালের হলেও ভারতে ক্রমেই এই দিবসটি প্রসার পাচ্ছে। তবে তা এখনো শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ। ভারতে জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালিত হয়। এই দিন বাবার সঙ্গে কাটায় ভারতের পরিবারের সদস্যরা। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে কার্ড, ফুল বা অন্যকিছু বেছে নেয়া হয়। তাছাড়া পরিবারের সবাই মিলে দূরে কোথাও পিকনিক বা সিনেমা দেখাটাও বেশ প্রচলিত।
দক্ষিণ আফ্রিকা :অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসীরা তাদের বাবাকে ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে না। তাই তারা প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রোববার বেশ ঘটা করেই বাবা দিবস পালন করে। বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে তারা কার্ড, ফুল, নেকটাই বা হাতে বানানো কিছু উপহার দেয়। তাছাড়া এ দিন পরিবারের সবাই একসঙ্গে সময় কাটায়। অনেকেই এদিন বাবার সঙ্গে পিকনিক, মাছ শিকারে বা রেস্টুরেন্টে খেতে যায়।
এদিকে ইরান বাবা দিবস পালন করে ১৪ মার্চ। আবার মার্চ মাসের ১৯ তারিখে বাবা দিবস পালন করে বলিভিয়া, ইতালি, হন্ডুরাস, পর্তুগাল ও স্পেন।
প্রতি বছর মে মাসের ৮ তারিখে বাবা দিবস পালন করে দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে জুন মাসের প্রথম রোববার বাবা দিবস পালন করে লিথুনিয়া, ৫ জুনে ডেনমার্ক এবং জুনের দ্বিতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে অস্ট্রিয়া, ইকুয়েডর ও বেলজিয়াম। এল সালভেদর ও গুয়েতেমালা বাবা দিবস পালন করে ১৭ জুন। নিকারাগুয়া, পোল্যান্ড ও উগান্ডা ২৩ জুন পালন করে বাবা দিবস।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উরুগুয়ে জুলাই মাসের দ্বিতীয় রোববার পালন করে বাবা দিবস। ডমিনিকান রিপাবলিক জুলাই মাসের শেষ রোববার দিবসটি পালন করে।
ফুটবলের জন্য জনপ্রিয় দেশ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল বাবা দিবস পালন করে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় রোববার। আগস্টের ৮ তারিখে বাবা দিবস পালন করে তাইওয়ান ও চীন। ফুটবল প্রিয় আরেক দেশ আর্জেটিনা বাবা দিবস পালন করে ২৪ আগস্ট।
পশ্চিম ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ বাবা দিবস পালন করে ৫ অক্টোবর এবং একই মাসের দ্বিতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেন। আর এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ড ৫ ডিসেম্বর বাবা দিবস পালন করে।
এছাড়া প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে বেশ কিছু দেশ। অ্যান্টিগুয়া, বাহামা, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, কলাম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, গায়ানা, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মরিশাস, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পুয়ের্টো রিকো, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে।