ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং তাতে ৪০ জন নিহতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র্যাব। লঞ্চটির মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে এই এলিট ফোর্স।
র্যাব জানায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ গত নভেম্বর মাসে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। এর জন্য নেওয়া হয়নি কোনো অনুমোদন। এ ছাড়া যাত্রীদের জন্য লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। মালিক লঞ্চে আগুন লাগার খবর পেয়েও কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবার কোথাও জানাননি। পালিয়েছিলেন লঞ্চের ক্রুরাও।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে হামজালাল শেখকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর রাতে এ বিষয়ে ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানায় র্যাব।
লঞ্চটিতে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার মোবাইল ফোনে মালিক হামজালালকে আগুন লাগার বিষয়টি জানান। কিন্তু তিনি কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবা কোথাও জানাননি, বরং চুপচাপ থাকেন। আগুন লাগার পর লঞ্চের ক্রুরা (২৬ জন) জ্বলন্ত ও চলন্ত লঞ্চ রেখে পালিয়ে যান। এতেই ঘটনাটি আরও মর্মান্তিক হয়।
কমান্ডার মঈন জানান, লঞ্চে কর্মরত তিনজনের (মাস্টার ও ড্রাইভার) সরকারি কোনো চালনার অনুমোদন ছিল না।
যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না জানিয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, লঞ্চে শুধু কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে গ্রেপ্তার মালিক জানিয়েছেন। তবে অধিকাংশ বয়াই যথাস্থানে ছিল না। এ ছাড়া লঞ্চটির কোনো ইনসুরেন্সও করা ছিল না বলে গ্রেপ্তার হামজালাল শেখ জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিন তলা বিশিষ্ট লঞ্চটি পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়।
আগুন লাগার পরই প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ট্রলার নিয়ে লঞ্চের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, রাত ৩টা ২৮ মিনিটে তারা অগ্নিকাণ্ডের খবর পান। এরপর তাদের কর্মীরা ৩টা ৫০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন।