জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় অভিযুক্ত ১৩ আসামিকে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। পরে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের করার সময় ১৩ আসামির মধ্যে ছিলেন সাবেক আইসিটির প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকও। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার সময় তিনি দুই হাত মোনাজাতের মতো তুলে ধরেন এবং উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান। পরে হেঁটে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে চড়েন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের সামনে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক আদালত থেকে বের হয়েই সাংবাদিকদের উদ্দেশে দুই হাত উঁচু করে দোয়া চান। এসময় তার পেছনে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। তবে তাকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই হাঁটতে দেখা গেছে।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রথমে বের হন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক।
সবার পরে বেরিয়ে আসেন পলক। অন্যরা হাত নেড়ে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও পলক দুই হাত মোনাজাতের মতো করে সবার কাছে দোয়া চান। এ সময় তার গায়ে ছিল একটি আকাশি রঙের সোয়েটার এবং সাদা শার্ট।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের টিনশেডর এজলাসে একসঙ্গে বসেছিলেন আসামিরা। ১২ জন পুরুষ আসামি কাঠগড়ার ভেতরে বসলেও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি বসেন কাঠগড়ার বাইরে। টানা প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানি হয়। এ সময় তারা পেছনে বসে সব কিছু দেখছিলেন। শুনছিলেন আইনজীবীদের সাবমিশন। ফাঁকে ফাঁকে একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা গেছে। পরে এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ ওইদিন এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ঠিক করা হবে।
দুপুরে শুনানি শেষে এক ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসেই নয়, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই গুম-খুন ও হত্যার বীভৎসতা সৃষ্টি করে। হিটলারের সময়ের ক্যাম্পের মতো ক্যাম্প তৈরি করে তাতে নিষ্ঠুরভাবে বন্দিদের নির্যাতন করা হয়েছে। তারা শুধু গণহত্যাই করেনি, নির্যাতনের যত রকম পন্থা রয়েছে সবই বাস্তবায়ন করেছে, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের মধ্যকার ১৩ জনকে আজ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আগামী দিনে যারা ফ্যাসিস্ট হতে চান, তাদের জন্য আজকের দিনটি একটি শিক্ষার দিন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, বিচারের মুখোমুখি হতে হয় তা আজকের দিনের এক বড় শিক্ষা।