কিছু পত্রিকার কাটিং জোগাড় করে রিপোর্ট তৈরি করেছে সিপিডি: তথ্যমন্ত্রী

এম. মতিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া অন্যকিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলছেন, সিপিডি কোন গবেষণা করে নাই। সিপিডি কিছু পত্রিকার কাটিং জোগাড় করে একটা রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেই রিপোর্টের আলোকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। যদিওবা গবেষণার কথা বলা হয়েছে, গবেষণা করতে অনেক সময় লাগে, অনেক তথ্য উপাত্ত থাকে। সিপিডি এই রিপোর্ট তৈরি করে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অনেক লুকোচুরি করেছে এবং অনেক ভুল অসত্য তথ্য তারা পরিবেশন করেছে।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। শুরুতে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৫৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং বৃক্ষরোপণ করেন। পরে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করেন।

তিনি সিপিডির উপস্থাপিত বিভিন্ন তথ্যের প্রেক্ষিতে বলেন, সিপিডি বলেছে, আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৭৫% হচ্ছে বিদেশ নির্ভর। আসলে আমাদের চলতি বাজেটের ৩৫% হচ্ছে সাহায্য নির্ভর কিংবা বিদেশ নির্ভর। এক সময় এটি ২০ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু লোন নেওয়ার কারণে অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক লোন নেওয়ার কারণে এটি ৩৫% -এ উন্নীত হয়েছে। অথচ সিপিডি বলেছে এটি ৭৫%। সিপিডির এই বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া অন্যকিছু নয়।

তিনি আরও বলেন, সিপিডি বলেছে বেসিক ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা লোন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যে আদায় করা হয়েছে এবং বাকী দুই হাজার কোটি টাকার জন্য মামলা করা হয়েছে, মামলা চলমান। সেগুলো আদায়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সিপিডি তাদের বক্তব্যে আরেকটি কথা বলেছে, যেমন নাবিল গ্রুপ। তারা ২৭০০ কোটি টাকা লোন নিয়েছে। কিন্তু সেই লোন যে সবগুলো আদায় হয়েছে, সেগুলো সিপিডির রিপোর্টে বলেনি। ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলোকে লোকানো হয়েছে। সিপিডি এস আলম গ্রুপের কথা বলেছে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে চেক করেছি, এস আলম গ্রুপের কোন লোনই ক্লাসিফাইড নয়। একই সাথে সিপিডি বলেছে ভ্যাট লোন বেড়েছে। অর্থাৎ ক্লাসিফাইড লোনের আকার বেড়েছে। কিন্তু তারা আকারের কথা বলেছে, পারসেন্টেসের কথা বলে নাই।

আমাদের অর্থনীতি ৬ গুনের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের জিডিপির সাইজ ছিলো ২০০৯ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলার। এখন জিডিপির সাইজ হচ্ছে ক্লোস টু হাফ এ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৫০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এভাবে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬ গুণ বৃদ্ধি পেলে তো ব্যাংক লোনও বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংক লোনের আকারও বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পারসেন্টেইস কত, সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়। ২০০৯ সালে ক্লাসিফাইড লোনের পারসেন্টেইস ছিলো ১০.৫%, আর এখন ক্লাসিফাইড লোনের পারসেন্টেইস হচ্ছে ৯.৯৩%। অর্থাৎ তখনকার তুলনায় কমেছে। সিপিডির কেউ কেউ তো দেশ পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন ২০০৭-২০০৮ সালে। তারা যখন দেশ পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলো তখন ভ্যাট লোন ১০% উপরে ছিলো। এইভাবে মিথ্যা অসত্য এসমস্ত তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

বিএনপির তিনদিনের কর্মসূচী ঘোষণার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কর্মসূচী হচ্ছে গতানুগতিক কর্মসূচী। তিনদিন যে কর্মসূচী দিয়েছে জনগণও জানে না, কেউ খেয়ালও করে নাই। হয়তবা সাংবাদিকরা খবরাখবর রাখেন বলেই খেয়াল করেছে। তাদের কর্মসূচী কোনদিন দেয়, কোনদিন হরতাল দেয়, কোনদিন অবরোধ দেয় কেউ কিন্তু নোটিশ করে নাই। বাংলাদেশের মানুষও নোটিশ করে নাই, কাকপক্ষীও নোটিশ করেছে কিনা আমি জানি না। সুতারং এগুলো গতানুগতিক কর্মসূচী এবং হাস্যকর।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি খ্রিষ্টানদের শুভ বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মের সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানান।