ঈদ যাএায় উপচেপড়া ভিড়ে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যবিধি

শেষ মুহূর্তে ঈদযাত্রায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চে কোরবানির ঈদে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে ভ্রমণ করার আহ্বান জানানো হলেও সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছে অধিকাংশ মানুষ।ঈদের ছুটিতে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা চিকিৎসা সেবা খুবই সীমিত পরিসরে চালু থাকে। স্বাস্থ্যসেবা পেতে কোথায় যাবেন?
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনা সংক্রমণ ও বন্যার কারণে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় কম। সড়ক-মহাসড়কের কোথাও দীর্ঘ ভোগান্তির চিত্র নেই।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেলপথের যাত্রীদের পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেছে । রেল কর্তৃপক্ষও এটি নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেছে।
সড়কপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অধিকাংশ জায়গাতেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না মানুষ। কিছু কিছু গণ-পরিবহণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রী নেয়া হলেও অধিকাংশই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি দেখা গেছে নৌপথে যাতায়াতে। ঢাকার সদরঘাট থেকে অন্যান্য জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সবকটি লঞ্চেই ছিল ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী। যেভাবে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে লঞ্চ, স্টিমারগুলো ভ্রমণ করছে, ঐ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো সুযোগই নেই।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করেছিল যেন ঈদের সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার সাথে দেশের অন্যান্য জেলার যাতায়াত বন্ধ থাকে।
এই চারটি শহরে কোভিড রোগীর তুলনামূলক-ভাবে বেশি থাকায় ঈদের সময়ে এসব জায়গা থেকে মানুষের মাধ্যমে সারাদেশে যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, সেলক্ষ্যে ঐ সুপারিশ করেছিল জাতীয় কমিটি। তবে শেষপর্যন্ত সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি, ফলে ঝুঁকি থাকলেও এসব জেলা থেকে অবাধে নিজেদের গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে মানুষ।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির গত বছর রোজার ঈদের আগে এক গবেষণায় বলা হয়েছিল যে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের চারটি সিটি কর্পোরেশনের প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঐ ঈদে অন্য জেলায় সফর করবেন।

এবছর করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঐ সংখ্যাটা সেই তুলনায় বেশ কম হবে বলে ধারণা করা হলেও যেই পরিমাণ মানুষ কর্মস্থল ছেড়ে বাড়ির দিকে যাবেন, সেই সংখ্যাটাও অনেক।
সাভার, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ এলাকার হাইওয়ে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায় অনেক বাসেই সরকার নির্দেশিত ভাবে এক সিট ফাঁকা রেখে নেয়া হচ্ছে না যাত্রী।
এছাড়া সিএনজি, লেগুনা, মাইক্রোবাসে ভ্রমণ করা মানুষের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করেন হাইওয়ে পুলিশ সাভারের একজন কর্মকর্তা।
আবার সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহীর দিকে যাত্রা করা যাত্রীবাহী বাসগুলোর অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করছে বলে মন্তব্য করেন সেসব এলাকার হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।
তবে সড়কপথে কিছু কিছু জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াতের খবর পাওয়া গেলেও নৌপথের ছিল সম্পূর্ণ বেহাল দশা।
শুধু ঈধে যাতায়াতই নয়, কিছুদিন আগে ঈদের কেনাকাটা করার সময়ও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি মানুষকে (ঢাকার একটি মার্কেটের সামনের চিত্র)
গতকাল থেকে ঢাকা থেকে বরিশাল, চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যেসব লঞ্চ, স্টিমার ছেড়ে গেছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোতেই গাদাগাদি করে গিয়েছে মানুষ।

পাশাপাশি ঢাকা থেকে সড়কপথে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার সময় ব্যবহৃত ফেরিগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই ঠাসাঠাসি করে যাত্রী উঠতে দেখা গেছে।
জরুরী স্বাস্থ্যসেবা পেতে কোথায় যাবেন?
ঈদকে ঘিরে যে আন্তঃজেলা যাতায়াত হচ্ছে এবং বন্যার কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক।
এবার ঈদে গণপরিবহন, লঞ্চ, ট্রেন এবং অন্যান্য পরিবহন খুলে দেওয়া এবং ঈদযাত্রায় লঞ্চঘাট ফেরিঘাট এবং বাস টার্মিনালগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মানার খেসারত দিতে হবে অনেক লম্বা সময় ধরে। সংক্রমিত মানুষ আর সুস্থ মানুষের একসঙ্গে যাতায়াত করোনা ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হয়ে উঠবে। আবার শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এসব মানুষ কাল পরশুই পশুর হাটে যাবে, সেখানেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। গতবারের ঈদের নামাজের জামাতের ক্ষেত্রে যে বাধ্যবাধকতা ছিল, এবার সেটিও নেই। ফলে ঈদের জামাত হবে সংক্রমণের আরেকটি জায়গা।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই গ্রামে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এখন শহর থেকে যদি একজন আক্রান্ত ব্যক্তি যান তিনি কতজনের মধ্যে ছড়াবেন তা অনুমানই করা যাবে না। আবার যারা সুস্থ অবস্থায় শহর থেকে যাবেন, তারাও আসার সময় ভাইরাসটি বহন করে নিয়ে আসতে পারেন। এভাবে ঈদযাত্রায় পশুরহাট এবং ঈদের জামাতগুলো এবার ভয়েরই কারণ। অর্থনীতির চাকার কথা বলে, সরকার সব খুলে দিয়েছে। এর পক্ষে যুক্তি থাকলেও অন্ততপক্ষে ঈদে বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে কঠোরতার প্রয়োজন ছিল। আর কোরবানির পশুর খামারিদের কথা যেভাবে বলা হচ্ছে, তারও পরিকল্পনা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সরকার চাইলে খামারিদের কাছ থেকে ন্যায্যামূলে পশু কিনে নিতে পারত। এরপর পর্যায়ক্রমে কোরবানির ব্যবস্থা করতে পারত। কোরবানি দিতেও মানুষের সুবিধা হতো। কোনো কিছুতেই গোছানো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। আর স্বাস্থ্য খাতের অস্থিরতার কারণে সেখান থেকেও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। তারা প্রত্যেকে নিজেদের অনিয়ম, দুর্নীতির নথিপত্র নিয়ে ব্যস্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের শিথিল আচরণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের অহেতুক আশাজগানিয়া বক্তব্যের কারণেই মানুষও সচেতন থাকছে না। মাস্ক ছাড়াই তারা যাতায়াত করছে। এতে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। আর এবার যদি গ্রামে এবং আবার শহরে সংক্রমণ বাড়ে তাহলে বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই এখন জনগণকেই নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হতে হবে।
রোগতত্ত্ববিদ ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন “প্রিয়দেশ নিউজকে”বলেন, এখনো সংক্রমণ স্থিতাবস্থায়। নিম্নমুখীও নয়। তারপরও সবকিছু খুলে দেওয়া ঠিক হয়নি। আবার ঈদযাত্রায় কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে যে পদ্ধতিতে যাত্রী যাওয়ার কথা ছিল সেটি মানা হচ্ছে না। মানুষ মাস্ক পরছে না। যাত্রাপথ থেকেই রোগের সংক্রমণ হতে পারে। অর্থনৈতিক কারণে অনেক কিছুই খুলে দিতে হয়েছে। কিন্তু ঈদযাত্রার বিষয়টি না করলে ভালো হতো। তারপরও আমরা বলেছি, স্বাস্থ্যবিধি যেন মানা হয়। তিনি বলেন, শহরে এখন সংক্রমণ কমছে। এই শিথিলতার কারণে গ্রামে সংক্রমণ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে যদি আবার গ্রাম থেকে শহরে এবং শহর থেকে গ্রামে রোগটি ছড়ায়, তাহলে সেটি মোকাবিলা করা আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে। যেখানে এশিয়ার দেশগুলো ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক জায়গায় ভয়াবহ পরিস্থিতি, ইউরোপে আবার নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে, কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রসৈকত খুলে দিলে আবার সেখানে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। চীনে দ্বিতীয় দফা রোগটি ছড়িয়েছে। এতকিছু দেখার পরও আমরা কীভাবে বলি যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আমাদের বড় অর্জন হলো, এই মহামারী সংক্রমণের গতিকে আমরা ধীর করতে পেরেছি। এখনো ধীরগতিই রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মৃত্যুর সংখ্যা কম বলে যে তৃপ্তির কথা বলা হচ্ছেএ প্রশ্নে ড. মুশতাক বলেন, হ্যাঁ এখানে মৃত্যুর সংখ্যা এবং হার কম। এর অন্যতম কারণ হলো শুরুর দিকে আমরা এই মহামারী পরিস্থিতি স্লো করতে পেরেছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। চার মাসেও আমরা এটাকে নিম্নমুখী করতে পারছি না। আর এখন এই সময়ে সবকিছু খুলে দেওয়ায় বিপদ আসতে পারে। এখন গ্রামের মানুষকেও বিষয়টি বুঝে ঈদে বাড়ি যাওয়া, আসা, জামাতে ও হাটে অংশ নিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা হলেও সংক্রমণের সূচক এখনো নিম্নমুখী নয়। এবারের ঈদে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এটাই প্রমাণ করে, আমরা এই মহামারী মোকাবিলার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে গিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত আমাদের আবারও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে সব কিছু খুলে দেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধির যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো ঠিকমতো মনিটরিং না করার অর্থ দাঁড়ায় করোনা নিয়ে বেশি কিছু ভাববার নেই। মাস্ক না পরেই গাদাগাদি করে লঞ্চে উঠছে মানুষ। রাস্তায়, মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পশুর হাটে যাচ্ছে। আবার ঈদের জামাত নিয়েও কোনো কঠোরতা নেই। ফলে যারা সচেতন তারা হয়তো জেনেশুনে পথে বের হবেন। আর বেশিরভাগ মানুষ যারা অভাব অনটনে আছেন, আবার বেশিরভাগ মানুষ আছেন যারা একেবারেই কখনোই স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন না তারাও আগের মতোই চলবেন। তবে এখন মানুষের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে।
রোগতত্ত্ববিদ ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ঈদযাত্রা অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। কোন এলাকায় যাওয়া যাবে না। কোন এলাকায় যাওয়া উচিত সেটি যদি সরকার বলে দিত, তাহলে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারত যাওয়া উচিত কি উচিত নয়। এখন পুরোটাই মানুষের নিজের সচেতনতার ওপর নির্ভর করছে। আর সরকার যদি এই নির্দেশনা দিত তাহলে জনগণও আস্থা পেত। আর সরকার এ ব্যাপারে একেবারে দায়সারা নির্দেশনা দিয়ে জনগণের আস্থার জায়গা থেকে সরে এসেছে। যেমন হাটে-বাজারে নির্দেশনা দিয়েছে, নিয়ম বিধি মেনে বেচাকেনা করতে হবে। অথচ বাস্তবে তা দেখা যায়নি। ফলে জনগণ মনে করছে এটা কথার কথা।
এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরও বলেন, জনগণের মধ্যে নিয়ম ভাঙার প্রবণতা কাজ করছে। এই যে মাস্ক পরার বিষয়টি সরকার নির্দেশনা দিলেও তা কেউ মানছে না। তিনি বলেন, এখন জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে তারা সংক্রমণ ঝুঁকি কমাবে। যেমন গ্রিন জোনে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে বা স্থানীয় প্রশাসন থেকে যদি মনিটরিং করা হতো, যারা গ্রামে যাবে তারা সচেতন থাকার চেষ্টা করবে। এই পর্যায়ে এসে আমরা এখন অবজ্ঞা এবং উদাসীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছি তা কাম্য না। এই পরিস্থিতিকে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তত তাড়াতাড়ি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করা যাবে। তাই বারে বারে ভুল করা যাবে না।
জেনে নিন ঈদের ছুটিতে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসাসহ যদি জরুরী স্বাস্থ্যসেবা দরকার হয় তাহলে কোথায় যাবেন।
পরীক্ষা দরকার হলে
মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষজন সরকারি ব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারছেন। কিন্তু লক্ষণ দেখা না দিলে সাধারণত কেউ পরীক্ষার জন্য দরকারি তথ্য সংগ্রহ করেন না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঈদের ছুটিতেও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তাদের সকল কার্যক্রম একইভাবে চালু থাকবে।
যদি সরকারিভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে চান তাহলে সেটি হতে পারে নির্ধারিত বুথে গিয়ে অথবা বাড়িতে এসেও নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে।
বাড়িতে বসেই পরীক্ষা
সরকারিভাবে পরীক্ষার জন্য প্রথমে আপনাকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। আর এই ফি এখন শুধুমাত্র ডাক বিভাগের ‘নগদ’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
নগদ ওয়েবসাইটে গিয়ে সেটি করতে পারেন। অথবা অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করেও ফি জমা দিতে পারেন। এতে শুরুতে জাতিয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে একটি নগদ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
জাতিয় পরিচয়পত্রের সকল তথ্য সরাসরি চলে যাবে নগদ অ্যাপের কাছে। এরপর অন্য সকল মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার মতোই এজেন্টের কাছে গিয়ে নগদ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করতে হবে।
এই অ্যাপ অথবা নগদ ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যাংকের ডেবিট কার্ড দিয়ে বা সরাসরি অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমেও টাকা পরিশোধ করা যায়।
বুথে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করালে ২০৫ টাকা আর বাড়িতে করাতে চাইলে ৫০৫ টাকা পরিশোধ করার পর মোবাইলে একটি ফিরতি মেসেজ পাবেন। যাতে একটি ট্র্যানজ্যাকশন আইডি নম্বর আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ০১৭৯৫০২৯১৬০ এই জরুরী নম্বরে এসএমএস করে ট্র্যানজ্যাকশন আইডি নম্বর, রোগীর নাম, বয়স, বাসার ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠাতে হবে।
অ্যাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা যায়।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বাসায় কেউ চলে আসার কথা। বুথে পরীক্ষা করাতে চাইলে অর্থ জমা দিয়ে একই তথ্য ও রোগী নিয়ে সরাসরি সেখানে যেতে হবে। রিপোর্ট প্রস্তুত হয়ে গেলে ইমেইল ও এসএমএসের মাধ্যমে তা পাঠিয়ে দেয়া হবে।
অনলাইনে নিবন্ধন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ফিভার ক্লিনিকে অথবা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের বুথে গিয়েও নমুনা দিতে পারেন।
তবে এই দুটি সংস্থার ক্ষেত্রে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হবে। ফিভার ক্লিনিকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে ভিজিট করুন। ( https://old.bsmmu.edu.bd/e_ticketing/f/fc_appointment)
আর ব্র্যাকের বুথে নমুনা দেবার জন্য নিবন্ধন করতে হলে যেতে হবে। ( https://coronatest.brac.net/ )
ওয়েবসাইটে আপনার এলাকায় সবচেয়ে কাছের বুথ নির্বাচন করে নিবন্ধনের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সেখানে যেতে হবে। তবে একদিন আগে এই দুটি যায়গায় নিবন্ধন করতে হবে।
সরকার নির্ধারিত বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে ফি হবে সাড়ে তিন হাজার টাকা।
করোনাভাইরাস হাসপাতালগুলো খোলা থাকছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে এবারের ঈদেও স্বাস্থ্যসেবা খাতের সাথে জড়িতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র ঈদের দিন সকালে কিছুটা সময় বাদে বাকি সময়টা স্বাভাবিকভাবেই সকল কার্যক্রম চলবে।
আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন করোনাভাইরাসের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের ৬০ শতাংশ বিছানাই এখন খালি পড়ে আছে।তবে সমস্যা হল রোগীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হলে, আইসিইউ দরকার হলে বিভাগীয় শহরের বড় সরকারি হাসপাতাল ছাড়া উপায় নেই।
সারা দেশে ২৮টি সরকারি হাসপাতাল এবং ৩৩টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যায়।তবে সরকারি হাসপাতালের ১৬ টি আর বেসরকারি হাসপাতালের ২৫টিই ঢাকাতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া বেসরকারি হাসপাতালের তালিকায় নাম থাকা সবগুলোতে অবশ্য করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা পাওয়া যায় না।
অ্যাম্বুলেন্স কোথায় পাবেন
অনেকেই জানেন না বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অ্যাম্বুলেন্স খুব কম খরচে পাওয়া যায়।যদিও সংখ্যায় কম হওয়ায় সবসময় চাইলেই সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্স বাড়িত পৌঁছে যাবে তেমন নাও হতে পারে।
তবুও তথ্যটি নিশ্চয়ই জানা থাকা ভাল। এই সেবা পেতে চাইলে উদ্ধারকারী এই প্রতিষ্ঠানটির নম্বর ৯৫৫৫৫৫৫-এ ফোন করতে হবে।দেশের সকল মেট্রোপলিটান শহর এলাকায় প্রথম আট কিলোমিটারের জন্য খরচ পরবে ১০০ টাকা।
আট থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৫০ টাকা। আন্তঃজেলা হলে প্রতি মাইল ১৫ টাকা।অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হলে তার খরচ ৬০০ টাকা। দমকল বাহিনীর অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া গেলে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে পারেন।
দেশের যেকোনো বড় হাসপাতালের বাইরে বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরে সারি সারি পার্ক করা থাকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স।
পরীক্ষা কেন্দ্র, হাসপাতালের তালিকা ও করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অন্যান্য আরও অনেক জরুরী তথ্য, ফোন নম্বর ও লিংক পাবেন সরকারি ওয়েবসাইট এই ঠিকানায়। (http://corona.gov.bd/)