নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইন পাস করার বিষয়ে কোনো ধরনের তড়িঘড়ি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘এটা তড়িঘড়ি করে করার আইন নয়, এটা সত্য। বর্তমান কমিশনের মেয়াদের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয় এটাও বলেছি। কারণ, আমি বলেছিলাম করোনার সময় যে সীমিত সময়ের জন্য সংসদ বসে, এর মধ্যে এই আইন পাস করা কঠিন হবে। সংসদকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এটা বলেছিলাম।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের একটি প্রতিনিধি দল আমার কাছে গিয়ে আইনের একটি খসড়া দিয়ে পাসের প্রস্তাব করেন। আমি আইনটি পাস করার জন্য সময় লাগবে বলে তাদের জানাই। তারা অরডিন্যান্স করে এটা করার প্রস্তাবও দেন। আমি বললাম সংসদকে পাস কাটিয়ে এই আইন করব না। সংসদে নেওয়া ছাড়া এ আইন আমরা করব না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়, তখনই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখনই প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি করার জন্য বলেছিলেন।’
বৃহস্পতিবার সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দেন আইনমন্ত্রী।
এসময় আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির পথে হাঁটে না বলে দাবি করেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, ইনডেমনিটি কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিএনপি ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রোটেকশন দেওয়া হয়নি।
আইনমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার ও খুনিদের পুনর্বাসিত করার বিষয়টি স্বীকার করে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্যে আসবে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের দুই কমিশনকে হেফাজত প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা নয়। ইনডেমনিটি হচ্ছে অন্যায় করার পরে তাকে প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য আইন করা। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে যেকোনো বৈধ কাজ যেটার লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না সেটা তার আওতায় আনা। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ইনডেমনিটি আওয়ামী লীগ দেয় না, এটা বিএনপি দেয়। তারা ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে ২১ বছর আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে। ইনডেমনিটির কথা আর আমাদের কাছে শোনাতে আসবেন না। আমরা ওই পথে হাঁটি না। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে যে কাজটা করা হয়েছে সেটা থেকে শুরু করে সেটার লিগ্যাল কাভারেজ। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রোটেকশন দেওয়া হয়নি। সেই কারণে তাদের যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় না। তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করব। না হলে সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করব এসব প্রস্তাব ভোটে হারিয়ে দেওয়ার জন্য।’
আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিল। তখন থেকেই এই সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। এটা কল্পনা থেকেও আসেনি, আকাশ থেকেও পড়েনি। এটা তো নতুন আবিষ্কার নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন হয়েছে। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো দশ বছর ধরে হয়ে গেছে। বিষয়টি হলো তালগাছটি না পেলে অনেক অভিযোগ থাকে।
আনিসুল হক বলেন, ‘দুজন বিশিষ্ট নাগরিক কারা হবে সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা তো আইনে কোথাও বলিনি যে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেওয়া হয়নি। আমরা কেবল রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি।’
বিএনপির সংসদ সদস্যদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘উনারা তো তালগাছ চান। উনারা কিছুই মানেন না, যতক্ষণ তালগাছটা উনাদের না হয়। উনারা আদালতের রায়ও মানেন না। উনাদের কথা হলো, যেটা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী করেছেন, সেটা ভালো। কিন্তু যুদ্ধ করে জাতির পিতা যেটা করে দিয়েছেন সেটা ভালো না।’
বিএনপি এমপিদের ঐকমত্যের দাবির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ঐকমত্য করতে হলে উনাদের সত্যকে স্বীকার করতে হবে। আর সত্যটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উনারা ইনডেমনিটি অরডিন্যান্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেননি। খুনিদের পুনর্বাসিত করেছেন। এসব সত্য মেনে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আমরা ঐকমত্যে আসব।
এর আগে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা একটি অস্বাভাবিক সরকার আনতে চায়। তাদের এমপিরা (সংসদ সদস্য) এখানে সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও বিএনপি নেতারা এরই মধ্যে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা নিশ্চিত করা তাদের উদ্দেশ্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অনেক ফাঁক ছিল। এর মধ্য দিয়ে ইয়াজউদ্দীনকে ক্ষমতায় এনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছুতোয় বিএনপি একটি অস্বাভাবিক সরকার গঠন করতে চায়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এর আগে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আইনটি করার জন্য সময় প্রয়োজন। এই আইনটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বিএনপি আইন নয় সরকারের উৎখাত চায়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে লাভ নেই।