‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’র বাজেট

করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার ও অতীতের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় বাজেট উপস্থাপন।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয় এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।

করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক জনবল ও সংসদ সদস্যদের নিয়েই বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে।

করোনার কারণে অতিরিক্ত খরচ মাথায় রেখে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে যা ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।

নতুন এ বাজেটের আকার চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ন্যায় জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

এবারের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৩ কোটি টাকা। যেটাকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছে এনবিআর।

এ ছাড়া কর বহির্ভূত অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

এবারের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। বাজেটে এটি হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘাটতি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ও আজকের বাজেটের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই সময় বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। ওই বাজেট দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং তখনকার অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ৪৯ বছরের ব্যবধানে সেই বাজেট ৭২২ গুণের চেয়েও বেশি বেড়ে হয়েছে এখন ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে হয়তো বাজেটের আকার হবে ৬ লাখ কোটি টাকা।

তবে গতিশীল এই অর্থনীতিকে বছরের শুরুতেই থমকে দিয়েছে করোনা। তাই এই বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সরকারকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: তরতর করে বড় হওয়া প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। কারণ ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও এবার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এছাড়া বিনিয়োগ সংকট, সুশাসনের ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতিসহ অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে।

আজ বাজেট ও অর্থ বিল উত্থাপন হবে। এরপর ১২ ও ১৩ জুন সংসদের বৈঠক মুলতবি রাখা হবে। ১৪ জুন রোববার সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা। এদিন থেকে প্রতিটি কার্যদিবস সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলবে।

১৫ জুন সোমবার সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা, নির্দিষ্টকরণ সম্পূরক বিল পাস। ১৬ জুন মঙ্গলবার ও ১৭ জুন বুধবার মূল বাজেটের ওপর আলোচনা হবে।

১৮ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি। ২২, ২৩ ও ২৪ জুন বাজেটের ওপর আলোচনা। ২৫ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি। ২৯ জুন বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা এবং অর্থবিল পাস। ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস। ৮ অথবা ৯ জুলাই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটবে।