অবশেষে জিতলো ভালোবাসা!

প্রেম মানে না জাত-ধর্ম। তবে জাত ও ধর্মকে এড়িয়ে ভালোবেসে ঘর বাঁধতে গিয়ে কারাবরণ করতে হয়েছে তুষার নামে এক যুবকের। তুষারের বাড়ি শরিয়তপুর সদর থানার ধানুকা গ্রামে। তার বাবা পেশায় একজন মেথর।

মেথরের ছেলে হয়ে ব্রাহ্মণের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি সুস্মিতার পরিবার। সুস্মিতার বাড়ি শরিয়তপুর পৌরসভার আংগাড়িয়ায়।

ব্রাহ্মণ ও হরিজন জাত বিদ্বেষের কারণে শ্বশুরের দায়ের করা মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ থেকে তুষার দাসকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিচারপতি জাহাঙ্গির হোসেন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে তুষার দাসের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন-ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করায় তুষারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা করে ২০১৭ সালে। আদালত থেকে জামিন নিয়ে সুখেই কাটছিল সুস্মিতা আর তুষারের সংসার।

ফুটফুটে কন্যা সন্তান তাতে যোগ করে বাড়তি আনন্দ। কিন্তু মন গলেনি মেয়ের পরিবারের। ধর্ষণের মামলায় খালাস পেলেও অপহরণের মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ড হয় তুষারের।

শুধু হরিজন সম্প্রদায় হওয়ার কারণে বিয়ে মেনে নেয়নি ব্রাহ্মণ পরিবার। উল্টো শ্বশুর করা অপহরণের মামলায় জেল খেটেছেন স্বামী তুষার।

সনাতন হিন্দু ধর্মের হরিজন সম্প্রদায়ের তুষার বিয়ে করেন ব্রাহ্মণ মেয়ে সুস্মিতা দেবনাথকে। তিন মাসের সন্তান কোলে নিয়ে স্বামীর মুক্তির জন্য উচ্চ আদালত ঘুরেছেন সুস্মিতা।

আদালত বলেন, আইনের চেয়ে জাত-পাত বড় হতে পারে না। একইসঙ্গে তুষারকে সাজা দেয়া শরিয়তপুরের আদালতের ওই বিচারকের ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্ট।

সুস্মিতা নিজের ইচ্ছেয় বিয়ের কথা জানালেও আমলে নেননি আদালত।

তুষারের আইনজীবী জানান, নিজের ইচ্ছায় বিয়ের কথা আমলে না নিয়ে অপহরণের মামলায় ১৪ বছরের সাজা দেওয়া আইন বহির্ভূত হয়েছে।

সুষ্মিতা দেবনাথ বলেন, ‘আমার একটাই অপরাধ, আমি ব্রাহ্মণ বর্ণের মেয়ে হয়ে হরিজন বর্ণের ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের জীবন আজ বিপন্ন। আমাদের একটি শিশু সন্তানও রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে আমরা খুশি। জিতে গেছে আমার ভালোবাসা।’