গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে যে প্রশ্নটি বেশি উঠেছে, তা হলো- নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর কবে? বিভিন্ন সময় একাধিক উপদেষ্টা একেকভাবে কথা বললেও এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, সবকিছু সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে এর আগে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের আমূল সংস্কারের মাধ্যমে একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের আবাসিক প্রধানদের উদ্দেশে কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র-জনতা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে সচেষ্ট, যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে, থাকবে বাক স্বাধীনতা, থাকবে মানবাধিকার। একইসঙ্গে জাতিগত নৃগোষ্ঠী, লৈঙ্গিক ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা থাকবে।
গণমাধ্যম সংস্কার বিষয়ে ড. ইউনূস কূটনীতিকদের বলেন, শেখ হাসিনার সরকার মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টসহ বিভিন্ন নির্বতনমূলক আইন করেছিল। এখন গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সমাজ ও জন-আকাক্সক্ষা ধারণ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই মুহূর্তে আর্থিক খাতে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। তবে কেউ বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ কাঠামো বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে তা কোনোভাবে সহ্য করা হবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এমন সময় দায়িত্ব নিয়েছি যখন দেশের অনেক কিছু চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছেন। বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ দেড় দশকের নির্মম দপন-পীড়নে গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলন্ঠিত হয়েছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময়ে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে ভোটাধিকার ছাড়াই বড় হতে হয়েছে। গত ১৫ বছর সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে ব্যাংক লুট এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন করা হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা একটা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করতে যাচ্ছি। আমাদের বীর ছাত্র-জনতা দেশের আমূল পরিবর্তন চায়। এটি একটি কঠিন যাত্রা। এই যাত্রায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ তিনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের বাংলাদেশের প্রতি আস্থা অটুট রাখার আহ্বান জানান।
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক চুক্তি করেছে, যত আইনি বাধ্যবাধকতা আছে সেগুলো মেনে চলা হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়াসহ মানবিক সাহায্য অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
