ডাকসুতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

ঢাবির বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা, উৎসবমুখর পরিবেশ এবং ছাত্রদের মধ্যে দৃশ্যমান আগ্রহ। সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে লাইনে অপেক্ষা করছেন।

চলমান এই নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে একযোগে ভোট গ্রহণ চলছে। ভোটারদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ৬ পৃষ্ঠার ওএমআর ব্যালট, যার ৫ পৃষ্ঠা কেন্দ্রীয় সংসদের এবং ১ পৃষ্ঠা হল সংসদের জন্য নির্ধারিত। প্রতিটি ভোটারকে দুটি আলাদা ব্যালট বক্সে ব্যালট পেপার জমা দিতে হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী, এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন। ভিপি পদে ৪৫ জন, জিএস পদে ১৯ জন, এজিএস পদে ২৫ জনসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদ ও সদস্য পদে আছেন আরও শতাধিক প্রার্থী। ১৮টি হল সংসদের ২৩৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নয়টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। ছাত্রদল, বামপন্থি ছাত্র সংগঠন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আদর্শিক ধারার প্যানেল এবার মাঠে রয়েছে। বেশ কিছু প্যানেল আংশিক মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্রতিটি হলেই প্রচারণা শেষে এখন চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়।

নির্বাচন ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে মোতায়েন আছেন ২ হাজার ৯৬ জন পুলিশ সদস্য, সাথে রয়েছে সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড, ডিবি পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, আর ফলাফল সরাসরি দেখানোর জন্য রয়েছে এলইডি স্ক্রিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন জাতির জন্য উদাহরণ হবে। নির্বাচনী প্রস্তুতির সব কাজ শেষ হয়েছে, এখন শিক্ষার্থীরা যেন স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন সেটাই মূল লক্ষ্য।

নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ডাকসু হবে মডেল নির্বাচন। ভোটগ্রহণ শেষে ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে ৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলো সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। কেবল আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রবেশ করতে পারবেন।

সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি বুথে পোলিং কর্মকর্তা, সহকারী, পর্যবেক্ষক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে।

এই ঐতিহাসিক ডাকসু নির্বাচন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এখন নজর ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার দিকে— কে হচ্ছেন নতুন ভিপি, কোন প্যানেল পাচ্ছে নেতৃত্বের ভার, সেটাই জানাবে এই দিনের শেষ প্রহর।