ইসরায়েল ইস্যুতে মার্কিন একচোখা নীতির বিরুদ্ধে আরব বিশ্ব যা পারেনি সেটাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ভাবছেন কী হয়েছে? হ্যাঁ, আমেরিকাকে এই ইস্যুতে বলতে গেলে নাকে খত দিয়ে ছেড়েছে বাংলাদেশ। দখলদার ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে রাখঢাক না রেখে সরাসরি ইহুদীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস নিজেদের পতাকা অর্ধনমিত রেখে শোক দিবস পালন করতে বাধ্য হয়েছে। এ যেন আমেরিকার নাকে খত দিয়ে যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের দোষ স্বীকার করে নেওয়া।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে কথার মারপ্যাঁচ রেখেছেন। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বরাতে বলছে, ‘পৃথিবীতে বিভিন্ন সংঘাত এবং যুদ্ধে নিহত হওয়া প্রত্যেক নিরপরাধ এবং নিরীহ ব্যক্তিদের জন্য শোক দিবস পালন করবে মার্কিন দূতাবাস। আমরা যেকোন ধর্মের নাগরিকদের এবং সংঘাতে নিহত যেকোন জাতীয়তার নাগরিকদের জন্য শোক জানাই।’ অর্থাৎ তারা কৌশলে নিহত ইসরায়েলিদের জন্যও সহমর্মিতা জানিয়ে রেখেছে। তবে তাদের এই বক্তব্যেও তারা ধরা। আফগানিস্তান, ইরাকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তারা যে লাখ লাখ নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের বেলায়ও কি আমেরিকা এই মত পোষণ করে?
সে যাই হোক এই অঞ্চলে আমেরিকা যে এমন মার খাবে সেটা হয়তো তারা নিজেরাও কখনও কল্পনা করেনি। কারণ, এবারকার ঘটনায় শুরু থেকেই ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানও ততটা সোচ্চার ভূমিকা রাখতে পারেনি গাজার জন্য। চীন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ালেও আমেরিকাকে নাকে খত দেওয়াতে পারেনি। এছাড়া এই অঞ্চলে আর কেউ ফিলিস্তিনের মুসলমানদের নিয়ে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। সেখানে বাংলাদেশ এমন ভূমিকা রাখবে সেটা হয়তো কল্পনাও করেনি আমেরিকা। তবে যুক্তরাষ্ট্র এটা জানে যে, স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই ইসরায়েলের পক্ষ নেয়নি বাংলাদেশ। মুসলিম এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষেই ছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বাংলাদেশে যেমন নাকে খত দিয়ে পতাকা অর্ধনমিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, ঠিক তেমনই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হালে পানি পায়নি আমেরিকা। গাজায় হাসপাতালে হামলা করে শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বৈঠকও বাতিল করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনায়কেরা। এটাও ছিল আমেরিকার জন্য গালে থাপ্পড় মারার মতো অবস্থা। এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন খবরদারির দিন অনেকটাই শেষ করে দিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। একই সময়ে বাংলাদেশও তাদের নাকে খত দিয়ে ছেড়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে। ধন্যবাদ বাংলাদেশ। গাজা, ফিলিস্তিন এবং মসজিদুল আকসা মুক্ত হোক।