বিআরটিএ একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হলেও রাজবাড়ি জেলা বিআরটিএ অফিসকে মোটরযান পরিদর্শক মেহেদী হাসান দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি দালালের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে সেবা দেওয়াকে যেন নিয়মে পরিণত করেছেন। এর মাধ্যমে পরিদর্শক মেহেদী হাসান কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নিজ নামে ছাড়াও শ্বাশুড়ি ও ভগ্নিপতিসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের নামে নামে তিনি সম্পদ গড়েছেন।
রাজবাড়ি জেলা বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুদকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছে। ভোগান্তির শিকার একাধিক ভুক্তভোগী এই মোটরযান পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ‘বিআরটিএ পরিদর্শক মেহেদী হাসান (কামরুল) গত বেশ কয়েক বছর পূর্বে চাকরিতে যোগ দেন। এসময়ে ঘুষ, দুর্নীতি ও নানা প্রকার অপকর্মে জড়িত হওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বদলী হয়ে বর্তমানে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে আছেন। সেখানে তিনি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান বিআরটিএকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন।’
জানা যায়, বিআরটিএর এই পরিদর্শকের বেতনের সাথে নামে বেনামে তার সম্পদ ও লাইফস্টাইলের সাথে কোনো মিল নেই। চাকরী জীবনে তিনি কোটি কোটি মানুষের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেছেন। এসব টাকায় তিনি বাড়ীর পাশেই সাত্তারের কাছ থেকে ৬ শতাংশ জমি প্রায় ৫০ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন। ভবেশ এর ৫-৬ শতাংশ জমি ৫০ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন। এছাড়া সমেপুর বাজারে ৩টি দোকান ৩০-৩৫ লক্ষ টাকায় ক্রয় করেছেন বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে, সমেপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে পুকুরের ভিতরে পিলারসহ কয়েক শতাংশ জমি রয়েছে মেহেদী হাসান (কামরুল) এর। তিনি ২০-২৫ লাখ টাকায় এই জমি ক্রয় করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ৩ তলা ফাউন্ডেশনের বাড়ির ১ তলা সম্পূর্ণ করেছেন ৫০-৬০ লাখ টাকায়। এছাড়া বাড়ির পাশে দুলাল সরদারের সাড়ে ৫ শতাংশ জমি ৫০-৬০ লাখ টাকায় ক্রয় করবেন মর্মেও ২ লক্ষ টাকা বায়না দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বড় বোনের বাড়ির পাশে পুকুরসহ ক্রয় করেছেন তিনি, যার মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও ৪০ লাখ টাকায় তার আন্তঃজেলা ২টি ট্রাক (ঢাকা-মেট্রো-ক-২০-৫৮৩১, ঢাকা মেট্রো-ট-১৩-৩৩৭০) রয়েছে।
মেহেদী হাসান (কামরুল) ঘুষের টাকায় সম্পদ গড়া যেন নেশায় পরিণত করেছেন। এমনটাই উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগপত্রে। শুধু নিজের বাড়ি বা বোনের বাড়িতেই নয়, ভগ্নিপতি মো. জহির শেখকে ১৫ লক্ষাধিক টাকায় ফরিদপুরের মধুখালীর মাঝকান্দি বাজারে সেনেটারী, হার্ডওয়্যার ও টাইলস এর দোকান করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শ্বশুরবাড়ি এলাকায়ও তিনি একটি বাগান ক্রয় করেছেন, যার মূল্য ২৫-৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়া ফরিদপুর ও ঢাকায় নামে-বেনামে অনেক ফ্ল্যাট বাড়ী রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এছাড়াও তার আরও অনেক সম্পদ রয়েছে। সেসবের তথ্যপ্রমাণ অভিযোগপত্রের সাথে দেওয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান (কামরুল) এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মোটরযান পরিদর্শক মেহেদী হাসান এর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এমন অভিযোগের বিষয় আমাদের জানা নেই। তিনি রাজবাড়িতে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। এখন যেহেতু তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জানতে পেরেছি আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নেব। দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ যেকোন অনিয়মের প্রমাণ পেলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।