নিজস্ব প্রতিবেদক
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকার বিভাগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রদবদল হলেও এখনও রয়ে গেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। এদের মধ্যে অন্যতম প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ। তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে তারা সারাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি পাহাড়সম।
স্থানীয় সরকারের একাধিক সূত্রে জানা যায়, সচিবের দপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ না থাকার পরও স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব মুহমদ ইব্রাহিমের ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বসানো হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমানকে। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব মুহমদ ইব্রাহিমের নির্দেশে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীদের থেকে মাসিক টাকা উত্তোলন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য ৫ থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন, ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ঠিকাদারদের থেকে টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র আরও জানায়, এলজিইডির একজন দক্ষ প্রধান প্রকৌশলী মহসীনের নামে বদনাম রটিয়ে আলী আকতার হোসেনকে প্রধান প্রকৌশলী করার জন্য সচিবের নির্দেশে ৫০ কোটি টাকা গ্রহণ করে টাকার ভাগবাটোয়ার দায়িত্ব নেয় খলিলুর রহমান। ৫ আগস্টের পর এ বিভাগের সকল গোপনীয় তথ্য আওয়ামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকদের নিকট নিয়মিত প্রচার করাই এখন তাদের মুখ্য কাজ। মুহমদ ইব্রাহিম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পিএস থাকাকালে খলিলুর রহমান তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও সে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদের একজন অন্যতম সহযোগী। আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট সাবেক জনপ্রতিনিধিদের নামে অভিযোগ আসলে গ্রহণ ও প্রেরণ শাখার অফিস সহায়ক তাপসের মাধ্যমে খলিলুর রহমান গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিগণের নিকট ফেরত পাঠায়।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব, পরবর্তীতে সিনিয়র সচিব দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এর তদবিরে হোসাইন আহমদকে স্থানীয় সরকার বিভাগে চাকুরী দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তার স্ত্রীকেও দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাকুরি দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগে উপজেলা-১ শাখা এবং উপজেলা-২ শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকাকালে ফাইল অনুমোদনের পূর্বে অথবা ফাইল অনুমোদন ব্যতীত উপসচিবের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বিদেশ সফরের সরকারি আদেশ জারী করেন হোসাইন আহমদ।
‘এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার জমি অধিগ্রহণের টাকা বরাদ্দের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন হোসাইন আহমত। ১০ লক্ষ টাকা ঘুষের জন্য হোসাইন আহমদ গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট উপস্থিত হয়। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ সরকারকে অবহিত করেন। অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ সরকার প্রশাসন অধিশাখাকে বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা-১ শাখা হতে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের মাধ্যমে প্রশাসন-২ শাখায় পদায়িত হয়। প্রশাসন-২ শাখা হতে ভুয়া বিলের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হোসাইন আহমদ।’
প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ প্রশাসন-২ শাখায় কর্মরত থাকায় নামে বেনামে লাইসেন্স করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সমস্ত কেনাকাটা করেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তিন মাসে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আপ্যায়ন বিল পরিশোধ করেন তিনি। বিগত অর্থ বছরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে মিলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে ভুয়া বিল দাখিল করে ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।
আওয়ামী ব্যাকগ্রাউন্ডের হোসাইন আহমদের সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিলে জানা যায়, তার নামে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি বিল্ডিংয়ে ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। আমিন বাজারের মধুমতি মডেল টাউনের কাছে তার ১০ কাঠার একটি জমি রয়েছে। এছাড়া তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর বাহেরচর, ২নং ওয়ার্ডে (হোল্ডিং নং-৮১০/১) এ ১৭ শতকের একটি জমি, ৭ শতক জায়গায় একটি বাড়ী রয়েছে হোসাইন আহমদের।
এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। হোসাইন আহমদের নেতৃত্বে সেই কমিটির সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন হোটেল/রেস্তোরায় সমবেত হয়ে অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য খলিলুর রহমান ও হোসাইন আহমদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই কল রিসিভ করেননি।