গোপালগঞ্জে বিএনপি নেতা খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যা জানা গেল

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে হাসিনার জন্মভূমি গোপালগঞ্জ। সেখানে এর আগেও আওয়ামী লীগের মহড়া হয়েছিল। সেই মহড়ার ধারাবাহিকতায় এবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দলবদ্ধ হামলায় শওকত আলী (দিদার) নামে বিএনপির এক নেতা নিহত ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এসএম জিলানিসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার পর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, শুক্রবার বিকেল ৫টার পর কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস.এম জিলানী শহরের বেদগ্রাম এলাকায় দলীয় পথসভা শেষ করে গাড়িযোগে নিজ গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছিলেন। তার গাড়ির বহরটি জেলা শহরের ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে স্থানীয় লোকজনের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী (দিদার) নিহত ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস.এম জিলানী ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্নাসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। রাত ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো, আনিচুর রহমান শহকত আলী দিদারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গুরুতর আহতদের গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র: মির্জা ফখরুল
গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ঘটনাকে দেশি–বিদেশি চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হামলাকারীরা নেতাকর্মীদের বহনকারী গাড়িবহরেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। হিংস্র সন্ত্রাসীদের কতৃর্ক এ ধরনের পৈশাচিক ও কাপুরুষোচিত রক্তাক্ত ঘটনা এটি।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও দেশে এখনও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে পরাজিত শক্তির দোসররা। তারা গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অবৈধ আওয়ামী শাসনামলে এই সন্ত্রাসীরা অনেক কালো টাকা উপার্জন করেছে, সেই কালো টাকা তারা এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাজে লাগাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিজয়কে মেনে নিতে পারছে না বলেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর জন্যই বিএনপি এবং অন্যান্য সমমনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে খুন ও তাদেরকে গুরুতর জখম করা হচ্ছে।

তিনি বলেন আজ গোপালগঞ্জে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা এস এম জিলানীর গাড়িবহরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী সহ অনেক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করার ঘটনা একটি গভীর দেশী-বিদেশি চক্রান্তের বহি:প্রকাশ। এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করার কোনো বিকল্প নেই। হামলা ও রক্তাক্ত পথ অনুসরণ করে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেজন্য ছাত্র-জনতাসহ সকল গণতন্ত্রমণা মানুষকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এখনও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে। আর তাহলেই দেশ থেকে ষড়যন্ত্রকারী ও দুষ্কৃতিকারীদের মূলোৎপাটনসহ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এস এম জিলানীর গাড়িবহরে পৈশাচিক হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন এবং এস এম জিলানী ও তার সহধর্মিনী সহ নেতৃবৃন্দের ওপর হামলাকারী দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান। তিনি নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।