আজও ফিরেনি সেন্টমার্টিনে আটকা ৩ শতাধিক পর্যটক

হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ প্রতিনিধি: লঘুচাপের প্রভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কসংকেত জারি করায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। ফলে আজও পর্যটকেরা ফিরতে পারবেন না।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. সেলিম হোসেন।

গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন তিন শতাধিক পর্যটক। আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কসংকেত বলবৎ রাখায় তারা ফিরতে পারেননি।

আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দুই দিন পর সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ৩ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। ৩ ও ৪ অক্টোবর সারা দেশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এরপর বৃষ্টির প্রবণতা কমবে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর বাংলাদেশের স্থলভাগ অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) টেকনাফ ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সতর্কসংকেত থাকায় আজ রোববার দ্বিতীয় দিনের মতোও জাহাজ, সার্ভিস ট্রলারসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়ার সতর্কসংকেত কেটে গেলে পুনরায় জাহাজ ও ট্রলার চলাচল শুরু হবে। তখন টেকনাফ থেকে জাহাজ গিয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের ফেরত আনবে।

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, গতকাল শনিবার রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সকালেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টার পর সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে। সাগর উত্তাল থাকায় স্থানীয় প্রশাসন কোনো ধরনের নৌযান চলাচল করতে দিচ্ছে না।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কসংকেত জারি করায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটক ও পারিবারিক কাজে টেকনাফে যাওয়া লোকজন আটকা পড়েছেন। আটকে পড়া পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন সমুদ্রসৈকত, জেটিঘাট, বাজার, ছেঁড়াদিয়া, গলাচিপা, পশ্চিম সৈকতের হুমায়ূন আহমেদের সমুদ্রবিলাসে সময় কাটাচ্ছেন। আর টেকনাফে আটকে পড়া সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, আটকে পড়া পর্যটকেরা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দল বেঁধে সমুদ্রস্নান করছেন।

সৈকতকর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, সৈকতের বিপজ্জনক স্থানে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে, যাতে কোনো পর্যটক এ নির্দেশনা অমান্য করে গোসল করতে না নামেন। গত শুক্রবার বিকেলে সতর্কসংকেত জারি হওয়ার পর হোটেল-রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের টেকনাফে চলে যাওয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হলেও পর্যটকেরা কানে নেননি। ফলে অনেকে দ্বীপে আটকে পড়েন।

ঢাকার মুন্সিগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবারসহ সেন্ট মার্টিন বেড়াতে এসে আটকে পড়ে গেলাম। পায়ে হেঁটে সমুদ্রসৈকত ঘোরা ও সমুদ্রস্নান ছাড়া আর কিছু করার নেই। কবে ফিরতে পারব, জানি না।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সাগরের সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে রোববার দুপুর পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে যাবতীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেন্ট মার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

(ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন,আজ রোববার বিকেলের পর সতক সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে।আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আগামীকাল (সোমবার) সকালে টেকনাফ থেকে জাহাজ গিয়ে আটকেপড়া পযটকদের ফেরত আনা হবে।