স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের পর বন্দুকধারীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন তিনি। বুধবার (১৫ মে) বিকালে তিনি এই বন্দুক হামলার শিকার হন।
স্লোভাকিয়ার টিএ৩ টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) উত্তর-পূর্বে হ্যান্ডলোভা শহরের হাউস অব কালচারের বাইরে তাকে লক্ষ্য করে চারটি গুলি চালায় বন্দুকধারী। এসময় ৫৯ বছর বয়সী ফিকো পেটে গুলিবিদ্ধ হন। হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে।
ফিকোর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘নেতাকে বেশ কয়েকবার গুলি করা হয়েছে এবং বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই মুহুর্তে তাকে হেলিকপ্টারে করে বাঁশকা বাইস্ট্রিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কারণ জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কারণে ব্রাটিস্লাভা যেতে খুব বেশি সময় লাগবে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে স্লোভাকিয়ায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটল। এই নির্বাচনে ২৭ জাতির ব্লকের জনপ্রিয় এবং কট্টর ডানপন্থী দলগুলো জয়ী হওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে করা হচ্ছে।
স্লোভাকিয়ার টিএএসআর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার লুবোস ব্লাহা স্লোভাকিয়ার পার্লামেন্টের অধিবেশনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি স্থগিত করেছেন।
স্লোভাকিয়ার প্রধান বিরোধী দল, প্রগ্রেসিভ স্লোভাকিয়া এবং ফ্রিডম অ্যান্ড সলিডারিটি, পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্কারের জন্য একটি বিতর্কিত সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে একটি ঘোষিত প্রতিবাদ বাতিল করেছে।
প্রগ্রেসিভ স্লোভাকিয়ার নেতা মাইকেল সিমেকা বলেন, ‘আমরা সহিংসতা এবং প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো আজ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে এমন কোনো ধরনের অভিব্যক্তি ও পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সব রাজনীতিবিদকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
দেশটির প্রেসিডেন্ট জুজানা কাপুতোভা প্রধানমন্ত্রীর ওপর ‘নৃশংস ও নির্মম’ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেন, ‘আমি মর্মাহত। আমি রবার্ট ফিকোর এই সংকটময় মুহূর্তে অনেক শক্তি এবং এই আঘাত থেকে দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
রাশিয়ানপন্থী এবং আমেরিকা-বিরোধী বার্তা প্রচারণার মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া ফিকো এবং তার বামপন্থী স্মার বা ডিরেকশন দল স্লোভাকিয়ার ৩০ সেপ্টেম্বরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সমালোচকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, ফিকোর অধীনে স্লোভাকিয়া দেশের পশ্চিমাপন্থী পথ ত্যাগ করবে এবং জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের অধীনে হাঙ্গেরির নির্দেশনা অনুসরণ করবে।
ফিকোর নীতির প্রতিবাদে রাজধানী ও স্লোভাকিয়া জুড়ে হাজার হাজার মানুষ বারবার সমাবেশ করেছে। ইউরোপের নেতারা দ্রুতই এই রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। যদিও হামলার কোনও উদ্দেশ্য তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট ছিল না।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এই হামলাকে ‘জঘন্য হামলা’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। এক্সে এক পোস্টে ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘আমাদের সমাজে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান হলো সাধারণের কল্যাণ।’
চেক প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা এ ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমি আশা করছি প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা সহিংসতা সহ্য করতে পারি না, সমাজে এর কোনো স্থান নেই। চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চেকোস্লোভাকিয়ার অংশ ছিল।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘স্লোভাকিয়া থেকে দুঃখজনক খবর পাওয়া গেছে। রবার্ট, এই কঠিন মুহূর্তে আপনার কষ্ট আমি অনুভব করছি।’