প্রবাল-শৈবাল, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে অনলাইন নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। এমনকি নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তি সেন্টমার্টিনে গেলে শাস্তি কিংবা অর্থদণ্ড দিতে হবে বলেও ২০১৯ সালে সরকারি সিদ্ধান্তের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনে যেতে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করেছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ইচ্ছা করলেই যেতে পারবেন না। যেতে হলে লাগবে অনলাইনে নিবন্ধন। আগামী মৌসুম থেকে চালু হবে এই নিয়ম। নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তি সেন্টমার্টিনে গেলে শাস্তি কিংবা অর্থদণ্ড দিতে হবে। এর লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। তিনি বলেন: সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সেন্ট মার্টিনকে প্রাকৃতিক কাজে লাগানো গেলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু এখন সেন্টমার্টিনের অবস্থা বেহাল। প্রবাল-শৈবাল, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়েছে দ্বীপটি। এখন মাস্টারপ্ল্যান তৈরির মাধ্যমে প্রবালদ্বীপটি রক্ষার চেষ্টা চলছে।
ফোরকান আহমেদ বলেন: ইতিমধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে। আগামী পর্যটন মৌসুম (ডিসেম্বর-এপ্রিল) থেকে এ নীতিমালা চালু হবে। তখন কতজন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন, কতজন থাকতে পারবেন, কতটা জাহাজ চলাচল করতে পারবে, তার সবকিছু নির্দিষ্ট করা থাকবে।
পরিবেশ অধিদফতরের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। দ্বীপটিতে ১৫৪ প্রজাতির শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৯১ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬ প্রজাতির প্রজাপতি, ২৩৪ প্রজাতির মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। দ্বীপে ৭৭ প্রজাতির স্থানীয় পাখি, ৩৩ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিসহ মোট ১১০ প্রজাতির পাখি ও ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। এখন অনেক বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এছাড়াও বিগত সরকারের আমলে এমন সিদ্ধান্তের বহু খবর সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে।
অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে সেন্টমার্টিন দ্বীপে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে কনসালটেশন সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ বলেন: সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় অনেকগুলো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্য রয়েছে, পর্যটক সীমিত করার পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন বা অনুমতি ছাড়া কোন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবে না।
এ বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরপরই আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ পন্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেন্টমার্টিন মার্কিন নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে সংবাদটি প্রচার করতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ আলোচনার জন্ম দেয় খবরটি। তবে এই ইঙ্গিতটি ছিল সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়: সেন্টমার্টিনে যেতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।