বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে আগের শোভন-রাব্বানী কমিটির কলংক মোচন হতে যাচ্ছে। এই কলংক মোচন করে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতাকর্মীদের শিগগিরই পদায়ন করা হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনের গোলঘরে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন পদবঞ্চিত নেতারা। ওই বৈঠকে তাদের পদায়নের বিষয়ে আশ্বাস দেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতি যখন মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল, ঠিক তখনই বর্বরোচিত শাসক গোষ্ঠীর করাল গ্রাসে আবদ্ধ হলো বাঙালি জাতি। আর এই পাষণ্ড গোষ্ঠীর হাত থেকে বাঙালিকে মুক্ত করার জন্য হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, শতাব্দীর মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম দিয়েছিলেন।
ছাত্রলীগের জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত পর্যন্ত সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে এই সংগঠন। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬ ছয় দফা, ৬৯ গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ১৭ হাজার নেতাকর্মীর আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করেছে।
গৌরবোজ্জ্বল এই ইতিহাসকে পাশ কাটিয়ে ছাত্রলীগ তার সুনামের ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে শোভন-রাব্বানী কমিটি। ছাত্রলীগের ২৯তম কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নিবাচিত করা হয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পছন্দে। দীর্ঘ এক বছরের মাথায় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়। ৩০১ সদস্যের কমিটির মধ্যে প্রায় ৯৯ জন নেতাকে নিয়ে শুরু হয় নানা রকম বিতর্ক। মাদক, হত্যা মামলার আসামি, চাকরিজীবী, বিবাহিত, বিএনপি নেতার সন্তান, জামাত নেতার ছেলেকে রাখা হয় শোভন-রাব্বানীর পূর্ণঙ্গ কমিটিতে। আন্দোলনের মুখে ১৯ জন বিতর্কিত নেতার নাম প্রকাশ করতে বাদ্য হন শোভন রব্বানী। এ নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। ত্যাগী, পরিশ্রমী, আওয়ামী পরিবারের সন্তানরা বাদ পড়েন ছাত্রলীগের কমিটি থেকে। কমিটি থেকে বাদ পড়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। হতাশা ব্যক্তকরেন আওয়ামীলীগের নেতারাও।
এ নিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। ছাত্র রাজনীতির আতুরঘর মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিত নারী নেত্রীদেরকে করা হয় রক্তাক্ত। শুরু হয় পদ বঞ্চিতদের অবস্থান কর্মসূচি। প্রায় এক মাস আট দিন পরে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শমতে, পদবঞ্চিতরা তাদের আমরণ অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর নিদেশনার পূর্বে ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে সমাধান না করে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। শোভন-রাব্বানীর নানা অন্যায়, অনিয়ম, চাঁদাবাজি এবং অপকর্ম প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আসলে, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের বিতর্কিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই জয়-লেখক পদ বঞ্চিতদের পদায়নের ব্যাপারে এবং বিতর্কিতদের কমিটি থেকে অপসারণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন বলে একাধিকবার গণমাধ্যমকে জানালেও পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণে সমাধান করতে পারছেন না বলে গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
পদবঞ্চিতদের তালিকায় যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন: সাইফ উদ্দিন বাবু, জেসমিন শান্তা, রাকিব হোসেন, জহিরুল কবির জহির, শাহেদ খান, আরিফ হোসেন রিফাত, মুরাদ হায়দার টিপু, রানা হামিদ, গোলাম মোস্তফা, আনন্দ শাহা পার্থ, কৃষ্ণ মজুমদার, তানভীর হাসান সৈকত, আল আমিন রহমান, নকিবুর রহমান সুমন, শ্রাবনী দিশা, ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, আহসান পিয়াল, শাহজালাল শাওন, সৈয়দ আরাফাত, এস এম মামুন, ইমদাদ হোসেন সোহাগ, জারিন দিয়া, শেখ আবদুল্লাহ, ইসমাইল হোসেন, শামীম মীর মালত, লাবলু, আশরাফুল ইসলাম জয়, নোবেল, জীবন খান, খন্দকার রবি।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদোন্নতি পেতে পারেন বি এম লিপি আক্তার, নিপু তন্মী, শ্রাবনী শায়লা, ফরিদা পারভীন, এনামুল হক তানান প্রমূখ।