অনলাইন ডেস্ক
সম্পাদনা :জিয়াউদ্দীন চৌ:(জেড সেলিম)
এ যেন ভয়কে জয় করা।হামলা, গ্রেপ্তার, হুমকি। কোনো কিছুই পরোয়া করছেন না তারা।শামিল হয়েছেন জনবিক্ষোভে।মিয়ানমারের শহর থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়েছে এ বিক্ষোভ। দাবি একটাই গণতন্ত্র চাই।অং সান সুচির সরকারকে উৎখাতের পর বৃহসপতিবার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সব থেকে বড় বিক্ষোভ হয়েছে।
গণ-আন্দোলন থামাতে এরইমধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।তবে এসব আশ্বাসে বিশ্বাস নেই জনগণের।
তারা বারবার দেখেছে এই সেনাবাহিনী কতটা ক্ষমতা পাগল।তাই প্রতিদিন আন্দোলনে মানুষের সংখ্যা বাড়ছেই। আন্দোলনের পাশাপাশি চলছে ধর্মঘট। অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের রেলওয়ে কর্মীরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মানদালেতে রেলওয়ে কর্মীদের সমাবেশে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ।তারা ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে সরকারি অফিসগুলোতেও।কর্মকর্তারা অফিস বর্জন করে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। অচল হয়ে পড়েছে সরকারি অফিসগুলো।
এদিকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দিতে উৎসাহিত করার অভিযোগে প্ররোচনাবিরোধী আইনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে মিয়ানমারের ৬ তারকার বিরুদ্ধে।যে অভিযোগ আনা হয়েছে, বিচারে তা প্রমাণিত হলে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। গ্রেপ্তার হওয়াদের একজন অভিনেতা লিউ মিন এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, আমাদের জনগণের ঐক্য দেখে বিমোহিত।জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে অবশ্যই ফেরত আসবে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে আন্দোলন শুরু হয়। এ স্থানটি বড় বড় আন্দোলনের জন্য পরিচিত। সাবেক রাজধানীর বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয় ঘিরেও চলতে থাকে আন্দোলন। রাজধানীতেও সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু হতে দেখা গেছে। ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় গাড়ির গতি কমিয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় মানুষদের। তারা কচ্ছপের গতিতে এগুচ্ছিলেন রাস্তায়। কেউ কেউ গাড়ি নষ্ট হয়েছে ভান করে রাস্তা আটকে রাখেন। এর মাধ্যমে তারা শহরে আর্মি ও পুলিশের চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা করেন। এরকম একজন স্লো-কার আন্দোলনকারী কো সু মিন বলেন, আমি ঘুম থেকে উঠে দেখতে চাইনা দেশে স্বৈরশাসন চলছে। আমরা আমাদের জীবনের বাকি সময় ভয়ের মধ্যে বাঁচতে চাই না।আমি এখন চাই সরকারের লোকেরা সময়মতো অফিসে না যেতে পারুক।একটি অধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের ৯০ শতাংশ শহরেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। যদিও দেশটির সেনাবাহিনীর দাবি, দেশের বেশির ভাগ মানুষ তাদের অভ্যুত্থান সমর্থন করছে।
বৃহসপতিবার দেখা যায়, ব্যস্ততম সড়কের গতিরোধ করে জড়ো হয়ে জান্তা সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের সরে যেতে নির্দেশ দেয় পুলিশ। চলে সংঘর্ষও।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অব্যাহত রয়েছে ধরপাকড়। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ধরপাকড় বেড়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টার্গেট করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এসিস্ট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, বৃহসপতিবার পর্যন্ত মিয়ানমারজুড়ে ৪৯৫ জনকে আটক করেছে জান্তা সরকার।
বারবার প্রমাণিত হয়েছে, আদর্শ গণতন্ত্রই হচ্ছে সব থেকে কার্যকরি শাসনব্যবস্থা। তাই এখন মিয়ানমারের জনগণের কাছে এক হয়ে লড়াই করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।জান্তা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা সহজ কাজ নয়। তবে কিছুটা দেরিতে হলেও মিয়ানমারকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সোচ্চার হচ্ছে জনগণ। সুচির দল এনএলডি এই লড়াইকে বলছে, গণতন্ত্রের জন্য শেষ যুদ্ধ।এ দফায় যদি সেনাবাহিনীর থাবা থেকে দেশকে বাঁচানো না যায় তাহলে হয়তো আবারো কয়েক যুগের অন্ধকারে ডুবে যাবে মিয়ানমার।
এদিকে,মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ চলাকালে গুলি চালিয়েছে পুলিশ।এতে আহত এক নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।২০ বছর বয়সী ওই নারীর নাম মিয়া থতে থতে খাইং।মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে এই প্রথম কোনো বিক্ষোভকারী প্রাণ হারালেন।৯ই ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভকালে আহত হন মিয়া থতে থতে খাইং।এদিন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান, রাবার বুলেট ও গুলি করে। আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
মিয়া থতে থতে খাইংয়ের অবস্থা শুরু থেকেই গুরুতর ছিল।তিনি নেপিডোর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মিয়া থতে থতে খাইংয়ের মাথায় আঘাত রয়েছে।
এক্স-রেতে দেখা গেছে, এই আঘাত গুলির। মিয়া থতে থতে খাইং চিকিৎসাধীন থাকাকালে পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন,তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ।মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর ভাষ্য,মিয়া থতে থতে খাইংয়ের মাথায় যে আঘাত, তা দেখে মনে হচ্ছে, তাঁকে সরাসরি গুলি চালানো হয়েছে।