
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর চালের মোকামে অন্যতম বড় চালের মিল গোল্ডেন অটো রাইস মিল। এই মিলে ১৪ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে সাত টাকা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই মিলটা (গোল্ডেন) গত শুক্রবার সকাল থেকে মিলগেটে মিনিকেট চাল বিক্রি করছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা দরে। যা গত ১ মার্চ ছিল ৭৭ টাকা। এখানে দাম আপাতত থেমে আছে। সামনে থামবে কিনা জানি না। তবে বাজারে ধানের দাম উর্ধ্বমুখী। আর বাজারে ধানও নেই। এজন্য চালের দাম বাড়ছে।
খাদ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গোল্ডেন অটোরাইস মিলে ১ মার্চ মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৭৭ টাকায়, ৪ মার্চ ৭৮ টাকায়, ৭ মার্চ ৭৯ টাকায়, ৯ মার্চ ৮০ টাকা আর ১৪ মার্চ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা দরে। এ ছাড়ারও খাজানগর মোকামে গোল্ডেন অটোরাইস, সুবর্ণা অটোরাইস, দেশ এগ্রো ফুড, জাফর এগ্রোফুডের মতো বড় কিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে গোল্ডেন অটো রাইস মিলের মালিক জিহাদুজ্জামান জিকু জানান, চালের দাম তুলনামূলকভাবে কমই বাড়ানো হয়েছে। দাম কেজি প্রতি ১৫ থেকে ১৭ টাকা বাড়ানো উচিত। তারপরও কম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে ধান নাই। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম গড়ে মণ প্রতি বাড়তি ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
খাজানগর এলাকায় মিলমালিক ও খাদ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বর্তমানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে ধান ও চালের মজুদ অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। বিশেষ করে সরু ধান ও চালের মজুদ তলানিতে। কিছু মিলে মোটা ও মাঝারি মানের ধান ও চালের মজুদ আছে। সেটাও অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা।
গত কয়েকদিনের তুলনায় সরু ধানের দাম নতুন করে প্রতি মণে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে করে চালের দাম গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৭ টাকা বেড়েছে। মিলগেটে বর্তমানে সরু চাল ৮৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসে ১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ দফায় দাম বেড়েছে।
এদিকে, চালের দাম বাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খাজানগরের বড় যে ১৫ থেকে ২০টি মিল আছে সেখানে বারবার অভিযান পরিচালনা ও মজুদ খতিয়ে দেখছে খাদ্য বিভাগ। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা অনুযায়ী যে পরিমান ধান ও চাল মজুদ রাখার সুযোগ আছে তার অর্ধেকেরও কম মজুদ পেয়েছে খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাজানগরে অটো রাইসমিলের সংখ্যা ৬৪টি। তবে এর মধ্যে অর্ধেক মিল প্রায় বন্ধ। এসব মিলে কি পরিমাণ ধান মজুদ আছে তার প্রতিদিনের একটি হিসাব মিল মালিকরা অফিসে প্রেরণ করে। সেই হিসাব ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে খাদ্য পরিদর্শকরা নিয়মিত মিল পরিদর্শন করেন।
মিল মালিক ও খাদ্য অফিসের তথ্য মতে, তিন ডায়ারের একটি অটো রাইসমিলে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩,৬০০ মণ ধানের প্রয়োজন আর ১টি ডায়ার চালাতে লাগে ৬০০ মণ। স্বাভাবিক সময়ে একটি মিলে ৩,০০০ টন থেকে ৪,৫০০ টন পর্যন্ত চাল মজুদ থাকে। এখন সেখানে মজুদ আছে ৩৬০ টন থেকে ৪০০ টন পর্যন্ত।
মিল মালিক আরশাদ আলী বলেন, “দেশে ধান ও চালের মজুদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আর বাইরে থেকে যে এলসির চাল আসছে সেটা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এবার অভ্যন্তরীণ সংকট প্রকট হওয়া ধানের ক্রাইসিস ও দাম বৃদ্ধি অন্যতম কারণ।”
বাংলাদেশ মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, “গতকাল উত্তরবঙ্গের কয়েকজন মিল মালিকের কাছ ধান কিনেছি ২,২০০ টাকা মণ দরে। গত সপ্তাহেও এই সরু ধানের দাম ছিল ১,৯০০ টাকা। ফড়িয়া ও কৃষকদের ঘরে সরু ধান নেই এই মুহূর্তে। উত্তরবঙ্গের অনেক মিল মালিকের কাছে কিছু ধান মজুদ আছে। তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। বোরো ধান বাজারে না আসা পর্যন্ত সংকট থাকবে।”
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) তৌফিকুর রহমান বলেন, “খাজানগরে সোমবার সকাল থেকে অভিযান চালানো হয়েছে। মিনিকেট চালের দাম কমানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।