আ.লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চালাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, করছে ভয়াবহ পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকার বিভাগে এখনও রয়ে গেছে আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের সুবিধাভোগী অনেক কর্মকর্তা। এদের অনেকেই ভোল পাল্টে এখন স্রোতের সাথে চলার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কর্মকর্তারা নিয়মিত পতিত স্বৈরাচারের কাছে স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নথিপত্র সরবরাহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসর এসব দুর্নীতিবাজ আওয়ামী কর্মকর্তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশ। গতিশীল হবে না সরকারের কাজ। এমনটাই জানিয়েছেন দীর্ঘদিন নিপীড়নের শিকার হওয়া কর্মকর্তারা।

জানা যায়, শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচার সরকার বিগত ১৫ বছর স্থানীয় সরকার বিভাগে স্থায়য়ী নিয়োগ দেয় ১০৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী। বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৯৩ শতাংশ জনবলই জনবলই আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগকৃত। এরমধ্যে জনবলের ৯৭ শতাংশ স্থায়ী জনবল আওয়ামী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আশিবার্দপুষ্ট কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকার বিভাগে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার রদবদল হলেও এখনও রয়ে গেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের সুবিধাভোগী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ। তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছেন। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সারাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি পাহাড়সম।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মোফাজ্জল হোসেন মায়ার নির্দেশে স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব, পরবর্তীতে সিনিয়র সচিব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এর তদবিরে জেলা কোটা না থাকা সত্ত্বেও ভূয়া আনসার কোটায় হোসাইন আহমদকে স্থানীয় সরকার বিভাগে চাকরী দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তার স্ত্রীকেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগে উপজেলা ১ শাখা এবং উপজেলা-১ শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকাকালে ফাইল অনুমোদনের পূর্বে অথবা ফাইল অনুমোদন ছাড়াই উপসচিবের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বিদেশ সফরের সরকারি আদেশ জারী করেন হোসাইন আহমদ।

এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার জমি অধিগ্রহণের টাকা বরাদ্দের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন হোসাইন আহমদ। ১০ লক্ষ টাকা ঘুষের জন্য হোসাইন আহমদ গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট উপস্থিত হয়। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ সরকারকে অবহিত করেন। অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ সরকার প্রশাসন অধিশাখাকে বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা-১ শাখা হতে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের মাধ্যমে প্রশাসন-২ শাখায় পদায়িত হয়। প্রশাসন-২ শাখা হতে ভুয়া বিলের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হোসাইন আহমদ।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ প্রশাসন-২ শাখায় কর্মরত থাকায় নামে বেনামে লাইসেন্স করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সমস্ত কেনাকাটা করেন। তার নিজস্ব ঠিকাদার ছাড়া কেউ মালামাল সরবরাহ করতে পারে না। বিগত অর্থ বছরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে মিলে স্হানীয় সরকার দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে ভুয়া বিল দাখিল করে ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।

আওয়ামী ব্যাকগ্রাউন্ডের হোসাইন আহমদের সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিলে জানা যায়, তার নামে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি বিল্ডিংয়ে ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। আমিন বাজারের মধুমতি মডেল টাউনের কাছে তার ১০ কাঠার একটি জমি রয়েছে। এছাড়া তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর বাহেরচর, ২নং ওয়ার্ডে (হোল্ডিং নং-৬১০/১) এ ১৭ শতকের একটি জমি, ৭ শতক জায়গায় একটি বাড়ী রয়েছে হোসাইন আহমেদের। নামে বেনামে হোসাইন আহমেদের ঢাকা শহরের আশে পাশে প্রায় ৫০০ কোটি (পাঁচশত কোটি) টাকার সম্পদ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও চাঁদপুরে রয়েছে পাঁচ তলা কয়েকটি বাড়ী।

অভিযোগে জানা যায়, ২০২১ সালে রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত চন্দ্রঘোনা থানায় গুপ্তধন চোরাচালান করতে গিয়ে ইউনুছ চৌধুরী আটক হলে কৌশল বের হয়ে যায় মাষ্টারমাইন্ড হোসাইন আহমদ। বর্তমানে ঢাকা শহরের মাদক চোলাচালানসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। চোরাচালানের জন্য রয়েছে তার একটি গাড়ী। উক্ত গাড়ীটি স্হানীয় সরকার বিভাগের স্টিকার লাগিয়ে নারী ব্যবসাসহ বিভিন্ন চোরাচালান কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

পিএসসিসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তেরর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে হোসাইন আহমদের বিরুদ্ধে। সরকারী কর্মচারী হয়েও আজিমপুরে একটি চাকরির কোচিং ব্যবসা শুরু করেন। পূর্বে তার স্ত্রী পিএসসিতে চাকরী করার সুবাদে পিএসসির প্রশ্ন ফাস চক্রের সাথে জড়িত হয়ে বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে প্রায় ৩০০ জনকে সরকারী চাকরি দিয়ে ঘুষ বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়েছেন।

হোসাইন আহমদ জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের কাছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর জালিয়ে দেয়ার তথ্য সংগ্রহণ করে ভিডিও ডুকুমেন্টারী প্রস্তুত করে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে সরবরাহ করে ২০ কোটি টাকা আয় করেন। এছাড়া এখনও স্থানীয় সরকার বিভাগের আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। হোসাইন আহমদের নেতৃত্বে সেই কমিটির সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন হোটেল/রেস্তোরায় সমবেত হয়ে অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী তদবিরে বিনা পরীক্ষায় চাকরি পান সোহাগ
মেধাবী চাকরিপ্রার্থীরা মেধার জোরে চাকরি না পেলেও স্থানীয় সরকার বিভাগে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সচিব আবদুল মালেক এর তদবিরে বিনা পরীক্ষায় চাকরি পেয়েছেন মোঃ সোহাগ। এক্ষেত্রে একটাই যোগ্যতা ছিল তার, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন সোহাগ। ইউনিয়ন পরিষদ-১ শাখা এবং জেলা পরিষদ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। ইউনিয়ন পরিষদ-১ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নামে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে অর্থ গ্রহণ করতেন। বিএনপিপন্থী তৎকালীন একাধিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তার দ্বারা ভুক্তভোগী ছিলেন বলে জানিয়েছেন। একাধিক সূত্রে জানা যায় যে, জেলা পরিষদ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্হায় বিশেষ বরাদ্দ নামে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। বিভিন্ন জেলা পরিষদে ১৩ জনকে চাকুরি দিয়েছেন। পটুয়াখালী জেলা শহরে তৈরি করেছেন পাঁচ তলা বাড়ী। গ্রামের বাড়ী বাউফলে তৈরী করে আলিশান বাড়ী।

মাহবুবউল আলম হানিফ পালালেও বহাল তবিয়তে মশিউর
অন্যদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরী করতেন ঝিনাইদহের শিতালী গ্রামের মোঃ মশিউর রহমান। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে ২০১৬ সালে চাকরি নেন তিনি। এরপর আওয়ামী প্রভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জেলা পরিষদ শাখায় পদায়ন হয় মশিউরের। জেলা পরিষদ শাখায় পদায়িত থাকার কারণে তার ভাইয়ের নামে ঠিকাদারী লাইসেন্স করে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন অফিসে ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন তিনি। পানি সরবরাহ-২ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠেন। মশিউর রহমান ওয়াসায় বিভিন্ন পদে ১১ জনকে নিয়োগ দিয়ে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ। করেন। তার নামে ঢাকার নিকট ৫ কাঠার ২টি প্লট রয়েছে। স্ত্রীর নামে এবং আত্মীয়ের নামে রয়েছে ৩০ লক্ষ টাকার শেয়ার, কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে এলাকায় ছিল তার আধিপত্য এবং মাদক চোরাচালানের সংগঠন। সীমান্ত জেলা ঝিনাইদহ থেকে প্রতিনিয়ত মাদকের চালান ঢাকায় নিয়ে এসে মশিউর বিপুল সম্পদে মালিক হয়েছে। আওয়ামী লীগের মাহবুবউল আলম হানিফ পালিয়ে গেলেও স্থানীয় সরকার বিভাগে এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন তার দোসর মোঃ মশিউর রহমান।

আবদুর রাজ্জাকের প্রভাবে স্থানীয় সরকারে চাকরি, বদলি বাণিজ্য করে কোটিপতি
এছাড়াও স্থানীয় সরকার বিভাগে আওয়ামী সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক (পরবর্তীতে কৃষি মন্ত্রী) এর পরিচয়ে চাকরী নেয় আরেক ছাত্রলীগ কর্মী, টাঙ্গাইলের সখিপুরের মোঃ আব্দুল মজিদ। তিনি ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগে চাকরিতে যোগদান করে পদায়িত হন পৌর-১ শাখায়। পৌর-১ শাখায় ৪ বছর কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় পৌরসভার কর্মচারীদের বদলি বাণিজা করে প্রায় কোটি টাকা অর্জন করেন। বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ শাখায় পদায়িত না করে জেলা পরিষদ শাখায় পদায়ন করা হয়। জেলা পরিষদ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় বিশেষ বরাদ্দের নামে, জেলা পরিষদের স্হায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের জেলা টাঙ্গাইলের মোঃ আব্দুল মজিদ।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে তার ছোট ভাইকে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরী দিয়েছেন। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলায় বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে ৯ জনকে চাকুরী দিয়ে ঘুষ নিয়েছেন প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। বেনামে ঠিকাদারী লাইসেন্স করে ঠিকাদারী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয়ে।

এখনও লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান দুলাল, নারী সহকর্মীরা ছিল অসহায়
স্থানীয় সরকার বিভাগে সিরাজগঞ্জের আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী নাসিমের তদবিরে চাকরি পায় মোঃ দুলাল হোসেন। নাসিমের তদবিরে পদায়িত হয় গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা-২ শাখায়। উপজেলা পরিষদের থোক বরাদ্দ দিয়ে সে অর্জন করে কোটি টাকার সম্পদ। পরবর্তীতে তাকে পদায়িত করা হয় এলজিইডি শাখায়। প্রকল্পের অর্থ ছাড়, ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়ে অর্জন করেন আরও কোটি টাকার সম্পদ। প্রাধিকার না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বসবাস করেন আজিমপুর সরকারী কলোনীর উচ্চ শ্রেণীর বাসায়। তিনি সবসময় নারী সহকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে/রেস্তোরায় আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকর্মীকে নিয়ে প্রায় সময় হোটেলে রাত্রী যাপন করতেন। স্থানীয় সরকার বিভাগে বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট কর্মীদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করেন। এই সমিতির নাম করে সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন হোটেল/রেস্তোরায় সমবেত হয়ে ছাত্রলীগের এজেন্ডা কিভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে এখনও প্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং বিএনপি ও জামায়াত সমর্থনপুষ্ঠ কর্মচারীগণকে কিভাবে স্হানীয় সরকার বিভাগ হতে বিতাড়িত করা যায় এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে বর্তমানে দুলাল হোসেন প্রায় ২০০ কোটি টাকার মালিক।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আশিবার্দপুষ্ট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান
দিনাজপুরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম নেতৃত্বকারী ইকবালুর রহিম এর আশীর্বাদে জেলা কোটা না থাকা শর্ত্বেও ২০১৬ সালে চাকরি পায় মোঃ মিজানুর রহমান। তার একটি যোগ্যতা ছিল ছাত্রলীগ কর্মী। স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্হায় কর্মচারী বদলি, নিয়োগ ও পদোন্নতির নামে অর্জন করেন ২০ কোটি টাকা। ঢাকা শহরে রয়েছে তার আত্মীয় স্বজনের নামে একাধিক ফ্ল্যাট। রাজশাহী ও দিনাজপুর রয়েছে একাধিক জমি। অভিযোগে ভিত্তিতে জেলা পরিষদ শাখা হতে বদলি করার কয়েকদিনের মধ্যে ইকবালুর রহিম এর সুপারিশে পদায়ন করা হয় পরিকল্পনা-১ শাখা। উক্ত শাখায় থাকাকালে প্রকল্প সংশোধন, অনুমোদন ও মেয়াদ বৃদ্ধির নামে প্রকল্প পরিচালকগণের নিকট হতে গ্রহণ করেন প্রায় ১০ কোটি টাকা। পানি সরবরাহ-১ শাখায় কর্মরত থাকায় জনস্বাস্হ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা প্রকৌশলীগণের নামে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাথের জড়িত মিথ্যা অভিযোগ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাসার প্রাধিকার না থাকা সত্বেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বসবাস করে উচ্চ শ্রেণীর সরকারি বাসায়। মিজানুর চোরাচালান কারবারের সাথে জড়িত থাকায় সম্পর্ক রয়েছে আওয়ামী ব্যাকগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসী সংগঠনের। প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে উত্তর বঙ্গ থেকে ঢাকা শহরে মাদকের চালান নিয়ে আসে এবং আওয়ামী ছাত্রলীগের কর্মীদের দ্বারা বিক্রী করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছে। এছাড়া একাধিক সূত্রে জানা যায় যে, তার নারী সহকর্মীকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাসায় নিয়ে রাত্রী যাপনে সুযোগ করে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছে।

পদ না থাকার পরও সচিবের দপ্তরে পদায়িত হয় খলিলুর রহমান
স্থানীয় সরকারের একাধিক সূত্রে জানা যায়, সচিবের দপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ না থাকার পরও স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব মুহমদ ইব্রাহিমের নির্দেশে পদায়ন করা হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমানকে। তিনি সচিবের দপ্তরে বসে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীদের থেকে মাসিক টাকা উত্তোলন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য ৫ থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন, ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ঠিকাদারদের থেকে টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করেন।

একাধিক সূত্রে আরও জানায়, এলজিইডির একজন দক্ষ প্রধান প্রকৌশলী মহসীনের নামে বদনাম রটিয়ে আলী আকতার হোসেনকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বসানোর জন্য ৫০ কোটি টাকা গ্রহণ করে। টাকার ভাগবাটোয়ার দায়িত্ব নেয় খলিলুর রহমান। ৫ আগস্টের পর এ বিভাগের সকল গোপনীয় তথ্য আওয়ামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকদের নিকট নিয়মিত প্রচার করাই এখন তাদের মুখ্য কাজ। মুহমদ ইব্রাহিম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পিএস থাকাকালে খলিলুর রহমান তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও সে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের একজন অন্যতম সহযোগী। আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট সাবেক জনপ্রতিনিধিদের নামে অভিযোগ আসলে গ্রহণ ও প্রেরণ শাখার অফিস সহায়ক তাপসের মাধ্যমে খলিলুর রহমান। গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিগণের নিকট ফেরত পাঠায়।

শেখ হাসিনার বেয়াইয়ের সহকারী একান্ত সচিব ফোয়াদ হোসেনের ক্যাশিয়ার লুৎফর রহমান
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসনের এর সহকারী একান্ত সচিব ফোয়াদ হোসেনের ক্যাশিয়ার হিসেবে ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান। স্হানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ৫টি স্তরের (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন) উন্নয়ন সহায়তার বিশেষ বরাদ্দ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে ফোয়াদ হোসেন বন্টন করতেন। ফোয়াদ হোসেন ২০০০ কোটি (দুই হাজার কোটি) টাকা অবৈধ অর্থ উপার্জনের দায়ে বর্তমানে জেলে আছে। ব্যক্তিগত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি টাকা উপার্জন করেছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থাকাকালে বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন তদবীর করে বিপুল টাকার মালিক হয়েছে। বর্তমানে মোঃ লুৎফর রহমান সচিবের দপ্তরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি আওয়ামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করেন। এ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও তথ্যাদি আওয়ামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের কাছে প্রকাশ/প্রচার করেন। আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগীদের নামে কোন অভিযোগ আসলে তা গোপন করা হয়। আওয়ামী সরকারের মেয়র, চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা গ্রহণের পূর্বেই লুৎফর রহমান প্রকাশ/গোপনে জানিয়ে দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার পরিবারের সকলে আওয়ামী সরকারের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর জন্য বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করে থাকেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় তার সম্পদ পাহাড় পরিমাণ।

হেলালুদ্দীন জেলে গেলেও স্থানীয় সরকার বিভাগে বহাল তার ক্যাশিয়ার ইমরান হোসেন
মোঃ ইমরান হোসেন সাঁট-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সুপারিশে চাকরী পান। জুন ২০১৯ তারিখে সচিবের দপ্তরে পদায়ন করা হয়। নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ স্থানীয় সরকার বিভাগের যোগদানের পর অর্থ উত্তোলন করার জন্য ক্যাশিয়ার হিসেবে নিয়োগ করা হয় মোঃ ইমরান হোসেনকে। ইমরান হোসেন সচিবের পক্ষ হয়ে এলজিইডি, ডিপিএইচই/সিটি কর্পোরেশন/ওয়াসাসমূহের কর্মকর্তা/ কর্মচারীগণের বদলি/পদায়নের জন্য ক্যাশিয়ার হিসেবে টাকা উত্তোলন করেন।

একাধিক সূত্রে আরও জানায় যে, হেলালুদ্দীন আহমেদ এর নির্দেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা উত্তোলন করে মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব জাহিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিকট টাকা বন্টনের দায়িত্ব প্রদান করা হয় মোঃ ইমরান হোসনকে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সকল আওয়ামী সমর্থনপুষ্ঠ জনপ্রতিনিধি/কর্মকর্তা/ কর্মচারীগণকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়মিত প্রচার করেন মোঃ ইমরান হোসেন। দপ্তর/সংস্থার আওয়ামী সমর্থনপুষ্ঠ জনপ্রতিনিধি/কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের নামে কোন অভিযোগ আসলে তা গায়েব করেন ইমরান হোসেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্হায় সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে ব্যবহার করে ১৯ জনকে চাকুরি দেয় এবং ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান এর মুখে ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনা পলায়ন করার পর সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জেলে গেলেও তার প্রেতাত্মা এখনো বহাল রয়েছে সচিবের দপ্তরে। যোগ্যতা না থাকার পরও জ্যেষ্ঠ কর্মচারীদের অতিক্রম করে মতিঝিলের মত গুরুত্বপূর্ণ স্হানে একটি সরকারি বাসা বরাদ্দ নিয়েছেন ইমরান হোসেন। সচিবদের আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে বদলি করার সাহস পায়নি প্রশাসন।

কুমিল্লার আওয়ামী এমপির প্রতাপে বেপরোয়া ছিল ইউনুছ চৌধুরী
২০১৬ সালে কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহার উদ্দিনের তদবিরে ২০১৬ সালে চাকরি নেয় ইউনুছ চৌধুরী। স্হানীয় সরকার বিভাগের যোগদানের পর হয়ে লুটপাটের জন্য হয় উঠে বেপরোয়া। স্হানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন দপ্তর/সংস্হায় সাবেক এমপি বাহার উদ্দিনের নাম ভাঙ্গিয়ে বদলি বাণিজ্য, আউটসোর্সিং চাকরি দেয়ার নাম করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন। ২০১৯ সালে তাজুল ইসলাম স্হানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার পর শুরু করেন চোরাচালানের ব্যবসা। ২০২১ সালে বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত চন্দ্রঘোনা থানায় গুপ্তধন চোরাচালান করতে গিয়ে আটক হয় ইউনুছ চৌধুরী। স্হানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মোঃ এরশাদুল হক এবং উপসচিব শেখ মনিরুজ্জামানের সহায়তায় থানা থেকে মুক্তি পায়। বর্তমানে ইউনুছ চৌধুরী নারী পাচারসহ বিভিন্ন চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত। জামালপুরের আওয়ামী মাফিয়া চক্রের আরেক জ্বলন্ত বারুদ ওসমান গণি ছাত্রলীগের কর্মী ও মির্জা আজমের অন্যতম সহযোগী ওসমান গণি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নাম মাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে দলবাজ সচিব আবদুল মালেক এর সময়ে চাকরি নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগে। চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব খাইরুল ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত থেকে এলজিইডি, ডিপিএইচই এর মাধ্যমে বদলি, পদোন্নতি, পৌরসভার বদলি পদোন্নতির নামে অর্জন করে শত কোটি টাকা। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে সচিবালয় কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ক্যাশিয়ার পদ তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে দখল করেন। প্রতিদিন অফিসের কাজ ফেলে সমিতির নামে লুট করতেন পাঁচ কোটি টাকা।

মির্জা আজমের নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাদের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থায় বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ-পদোন্নতির বাণিজ্য করে এক কাপড়ে ঢাকা আসা ওসমান হয়ে উঠেন কোটিপতি ওসমান গণি। সচিবালয় কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও মির্জা আজমের সহচর হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে ভয়ে কথা বলেনি। বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনে মির্জা আজমের প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৫০ জনকে আউটসোর্সিং পদে চাকুরি দেয়। গত ৪ আগস্টও সচিবালয়ে জাতীয় শোক দিবসের প্রস্তুতি সভায় মো. খাইরুল ইসলামের উপস্থিতে ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করা এবং সরকারের সব আদেশ নির্দেশ অনুসরণসহ ছাত্রদেরকে উপযুক্ত শাস্তির দাবীতে ওসমান গণির বক্তব্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

এখনও দাপটের সাথে বহাল ছাত্রলীগ নেতা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন
আওয়ামী দলবাজ সচিব আবদুল মালেক আত্মগোপনে থাকলেও এখনো বহাল রয়েছেন প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে দাপট দেখানো সিটি কর্পোরেশন-২ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন। দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ী হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক এর তদবিরে চাকরী পায় আরিফ হোসেন। ছাত্রলীগের বিপ্লবী কর্মী হওয়ায় পদায়ন হয় পরিকল্পনা-১ শাখায়। এলজিইডির প্রকল্প অনুমোদন, সংশোধন ও মেয়াদ বৃদ্ধির কাজ করে বিগত ৫ বছরে প্রায় ৯০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন। ঢাকার আশে-পাশে আত্মীয় স্বজনের নামে প্রায় ১০টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। বরিশাল শহরে রয়েছে বিপুল সম্পদ। আবদুল মালেক আত্মগোপনে থাকলেও আরিফ প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে দাপটের সাথে চাকরি করছে। কতিপয় নারী সহকর্মীদেরকে দিয়ে বিভিন্ন হোটেলে রাত্রি যাপনের ব্যবস্হা করে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের কাছ থেকে মাসে আয় করতেন কোটি টাকা। আজিমপুর কলোনীতে ডি-১ শ্রেণীর বাসার যোগ্যতা না থাকলেও ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয়ে বাসা বরাদ্দ নিয়েছেন।

ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ আবদুর রহিম মোল্লা
স্হানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহিম মোল্লা ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পায়। পদোন্নতি পাওয়ার পর পদায়ন করা হয় পানি সরবরাহ-১ শাখায়। তৎকালীন উপসচিব মোঃ খাইরুল ইসলাম এর সহযোগী এবং ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে জনস্বাস্হ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ ও পদোন্নতির অনিয়ম, মাঠপর্যায়ে জনস্বাস্হ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ঠিকাদারী শুরু করেন। প্রথমে মোঃ খাইরুল ইসলাম এর সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে নিজের ছেলের নামে ঠিকাদারীর লাইসেন্স করে ঠিকাদারী শুরু করেন। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে আওয়ামী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এর সহযোগিতায় জনস্বাস্হ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রশাসনিক শাখায় কাজের সুবাদে মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলীদের সাথে যোগাযোগ করে টেন্ডার দাখিল করে প্রায় ১২০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। তার নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের নামে ঢাকায় একাধিক বাড়ী ও গাড়ী রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায় যে, ডিপিএইচই এর জেলা পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলীদের বদলি ভয় দেখিয়ে মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে পরিকল্পনা-১ শাখায় প্রকল্প সংশোধন, অনুমোদন ও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প পরিচালকদের কাজ থেকে প্রতিমাসে প্রায় তিন কোটি আদায় করেন। হাসিনা পালালেও রহিম প্রকাশ্যে দুর্নীতি করে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি পাহাড়সম।

নেত্রকোনার ছাত্রলীগের নয়নের মনি নয়ন মিয়া
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মসলেম উদ্দিনের ছেলে নয়ন মিয়া স্হানীয় সরকার বিভাগে চাকরি নেয় আওয়ামী সরকার সংসদ সদস্য অসিম কুমার উকিলের তদবীরে। নিজ যোগ্যতা না থাকা শর্ত্বেও ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করার কারণে চাকুরী হয় স্হানীয় সরকার বিভাগে। বর্তমানে কর্মরত আছেন উন্নয়ন-১ শাখা। এলজিইডি বিভিন্ন পর্যায়ে বদলী, পদোন্নতি, বহিঃবাংলাদেশ ছুটি, পেনশন মঞ্জুরীসহ নির্বাহী প্রকৌশলী পদে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় বদলির জন্য প্রতিমাসে অবৈধ আয় করেন ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। উন্নয়ন-১ শাখা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে নয়ন মিয়া। এলজিইডির অধিকাংশ প্রকৌশলীদের নিকট থেকে জানা যায়, নয়ন মিয়ার নয়নে ছায়া না পড়লে কোন ফাইল উপস্হাপন হয়নি।

কুষ্টিয়ার ছাত্রলীগ কর্মী জনাব মোঃ রবিউল ইসলাম
২০২১ সালে স্হানীয় সরকার বিভাগে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এর ঘনিষ্ট মাহবুব উল হক হানিফের তদবীরে চাকরী নেয় ছাত্রলীগ কর্মী মোঃ রবিউল ইসলাম। উন্নয়ন-২ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্হায় এলজিইডির প্রকল্পের অর্থ ছাড় বাবদ টাকা আদায় করত। এলজিইডির প্রতিটি ক্রয় প্রস্তাবের জন্য ১.০০ লক্ষ থেকে ২.০০ লক্ষ টাকা দিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে আউটসোসিং পদে প্রায় ২০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগে কল্যাণ সমিতির নির্বাচনের নামে আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও অর্ন্তবর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ছাত্রলীগের কর্মী হোসাইন আহমদের নেতৃত্বে স্হানীয় সরকার বিভাগে আওয়ামী সরকারের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতি বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগে কর্মরত প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রলীগের কর্মী হোসাইন আহমদের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়েছে আওয়ামী বিরোধীদের দমাতে। এসময় তারা নৃশংস মব ট্রায়ালের প্রস্তুতি নেয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের স্মরণকালের ভয়াবহ পতন ঘটলেও বিন্দুমাত্র অনুশোচনাবোধ নেই আওয়ামী সমর্থনপুষ্ঠ স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের। হোসাইন আহমদের নেতৃত্বে উল্টো একের পর এক ইস্যু তৈরি করে দেশকে কিভাবে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়া যায় এবং ঠুনকো বিষয়কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ইস্যু বানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করা যায়- তারই ছক কষছে। গোপনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে মিলিত হয়ে সচিবালয়ে একটি আত্মঘাতি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিন ৭নং ভবনের দ্বিতীয় তলার পূর্ব পার্শ্বের করিডোরে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্যান্টিনে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মসজিদের নিকটে এবং সচিবালয়ে অভ্যন্তরে বিভিন্ন করিডোরে গোপনে চা খাওয়ার কথা বলে প্রতিনিয়ত মিলিত হচ্ছে তারা। স্হানীয় সরকার বিভাগসহ সচিবালয় বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের হত্যার পরিকল্পনা ছক কষছে এবং বিভিন্ন উৎকানীমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। সচিবালয়ে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতার সাথেও তাদের সংশ্লিষ্টতা একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্হার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্হানীয় সরকার বিভাগে কল্যাণ সমিতির নির্বাচনের নামে আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগকৃত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে স্হানীয় সরকার বিভাগে একের পর এক ইস্যু তৈরি করে সচিবালয়কে অস্হিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে সচিবালয় ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন হোটেলে চা খাওয়ার আড্ডা বসিয়ে স্হানীয় সরকার বিভাগে কল্যাণ সমিতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর পদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য সমর্থন নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ। অর্ন্তবর্তী সরকারকে কিভাবে বিতর্কিত করা এবং আওয়ামী সরকারের পলিসি ও এজেন্ডা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগের হোসাইন আহমদ এর নেতৃত্বে আওয়ামী সমর্থনপুষ্ঠ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ।

নির্যাতিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উপর আত্মঘাতি হামলার ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা ভয়ঙ্কর। এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে আসার পরও স্হানীয় সরকার বিভাগসহ সচিবালয় থেকে যদি আওয়ামী দোসরদের বিতাড়িত করা না যায়, তাহলে সারাদেশের প্রশাসনিক দপ্তরগুলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। অন্তর্বতী সরকার ব্যর্থ হবে।

অনেক অফিসের কেরানীও ফ্যাসিবাদের দোসর: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
স্থানীয় সরকার বিভাগকে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করার লক্ষ্যে এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক আসিফ মাহমুদ। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই তিনিও স্বীকার করেছেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের সক্রিয় থাকার কথা। রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে গণঅভ্যুত্থানের ৩ মাস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও ফ্যাসিবাদের দোসরদের শেকড় অনেক গভীরে রয়ে গেছে। অনেক অফিসের কেরানীও তাদের দোসর।

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, বিগত সময়ে যে ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল, তাদের পলিসিগুলোই ছিল গণবিরোধী, গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং মানুষের জীবন নেওয়ার মতো পলিসি ডিসিশন তারা দিয়েছে এবং প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা সেগুলো বাস্তবায়ন করেছে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাথে একমত পোষণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগসহ প্রশাসনের সকল জায়গায় ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দীর্ঘদিন আওয়ামী নিপীড়নের শিকার ও বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা বলছেন, কেরানী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন বা পুনর্বাসনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেজন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মতো তার দোসরদেরও প্রশাসনের সকল স্তর থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। নাহলে গণঅভ্যুথানের মূল স্পিরিট কখনও বাস্তবায়ন হবে না।