ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন মাস পর ১০ নভেম্বর প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির ডাক দেয় দলটি। নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে দলটির বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা ঘিরে আগের দিন রাত থেকে সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্য ছড়াতে শুরু করে। এমন অনেক অপতথ্যের প্রমাণ পেয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
এসবের মধ্যে রয়েছে, বিএনপির কর্মসূচি আওয়ামী লীগের বলে চালিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়েও ভুয়া তথ্য প্রচার ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে অপতথ্য প্রচার।
মঙ্গলবার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমার স্ক্যানার। তারা ১৫টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে, এর মধ্যে তথ্যকেন্দ্রিক দাবি ছিল দুটি, ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছিল দুটি, পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে একটি, পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে নয়টি এবং কর্মসূচির দিনের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার করা হয়েছে একটি।
রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, শহীদ নূর হোসেন দিবস ঘিরে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি উপলক্ষ্যে মঞ্চ নির্মাণের দৃশ্য বলে দাবি করে ৯ নভেম্বর রাতে ফেসবুকে কিছু ছবি প্রচার হয়। রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে- ওই ছবিগুলো ছিল জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ৮ নভেম্বর রাজধানীর পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির তৈরি করা মঞ্চের ছবি।
শুধু তাই নয়, ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নেন। এ দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে সময় টেলিভিশন। এ ফুটেজ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া দিবসটিকে ঘিরে ৮ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনার কথিত ফোনালাপ ফাঁস হয়। এ ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের আদলে একজনকে ১০ নভেম্বর দলীয় নেতা-কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি হাতে মিছিল করার নির্দেশ দিতে শোনা যায়।
কথিত ফোনালাপ ফাঁসের পর একই ধরনের নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ওঠে। দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর করা কথিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটির একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে যাচাই করে রিউমার স্ক্যানার দেখতে পেয়েছে, আওয়ামী লীগের প্যাডে দপ্তর সম্পাদক কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিই দেননি।
এছাড়া ৯ নভেম্বর রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ডসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ায়- গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্সে একটি পোস্ট করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প এক্সে এ নিয়ে কোনো পোস্টই করেননি।
ওই দিন রাতেই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ ঢাকার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের মিছিল করতে দেখা গেছে বলে দাবি করা হয়। তবে রিউমার স্ক্যানার অনুসন্ধান করে দেখেছে, ২০২০ সালে কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ভিডিও ছিল সেটি।
এছাড়াও সেনাবাহিনী রাজনৈতিক সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করবে না বলে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গেছে—শহীদ নূর হোসেন দিবস ঘিরে এমন তথ্যও প্রচার হতে থাকে ইন্টারনেটে। এ দাবির সূত্র হিসেবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) নাম উল্লেখ করা হয়। তবে আইএসপিআর রিউমার স্ক্যানারকে জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর যে দায়িত্ব তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আইএসপিআর বলেছে, তাদের সূত্র দেখিয়ে যে দাবিটা প্রচারিত হচ্ছে, তা–ও সঠিক নয়।
আওয়ামী লীগের শোডাউনের দৃশ্য দাবি করে ২০২২ সালে নয়াপল্টনে ছাত্রলীগের মিছিল-শোডাউনের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। কখনো গত আগস্টে গোপালগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্যকে ঢাকা ‘গণসমুদ্রে’ পরিণত হওয়ার দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে। আবার কখনো ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে গত আগস্টে গোপালগঞ্জে যে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছিল, তার ভিডিওকে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।