লেস্টারের পর ২য় দফা লকডাউনের শঙ্কায় অনেক অঞ্চল
শনিবার থেকে যখন ইংল্যাণ্ডে প্রায় সবকিছু খুলতে যাচ্ছে ঠিক তখন বাড়ছে নতুন আশঙ্কাও। পাব, রেস্টুরেন্টসহ বেশীরভাগ দোকানপাট খোলার অনুমোদন দিয়ে ওই দিনটিকে ‘ইনডিপেণ্ডেন্স ডে’ ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কিন্তু শঙ্কা যেন কেটেও কাটতেই চাচ্ছে না। অনেক এলাকায় হঠাৎ করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে লেস্টার সিটিকে দ্বিতীয় দফায় অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। লেস্টারের পর ব্রার্ডফোর্ড, বার্নসলী ও রচডেলসহ অনেক অঞ্চল আবার লকডাউন হওয়ার বেশী সম্ভাবনা। দ্বিতীয় দফায় এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া মহামারি এখনই শেষ হয়নি বলে সতর্ক করে দিয়ে আরো ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, বুধবার পর্যন্ত বৃটেনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৩ হাজার ৯শ‘ ৬ জনের। আর এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৪শ‘ ৮৩ জন। সামগ্রিকভাবে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার ক্রমশ পাওয়ার প্রেক্ষিতে লকডাউন শিথিল করে প্রায় সবধরণের দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু লেস্টারে আবার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই এলাকাকাকে আবার স্থানীয়ভাবে লকডাউন করা হয়। একই সাথে কিছু কিছু সিটি ও বারায় নতুন করে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব এলাকা স্থানীয়ভাবে লকডাউনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গার্ডিয়ান ও স্কাই নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এলাকাভিত্তিক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধির ফলে ইংল্যাণ্ডের অন্তত ৩৬টি কাউন্সিল দ্বিতীয় দফা কঠোর লকডাউনে যেতে পারে। এছাড়াও সরকারের গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে ১৫১টি এলাকা। লেস্টারের পর দ্বিতীয় দফা লকডাউনে যেতে পারে দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের ডনকাস্টার এবং ব্রাডফোর্ড। উল্লেখ্য, নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া এলাকাগুলো এথনিক মাইনোরিটি তথা সাউথ এশিয়ান বংশোদ্ভুত জনসাধারণ অধ্যুষিত।
লণ্ডন ইম্পেরিয়েল কলেজের প্রফেসর এবং সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নেইল ফারগুসন এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, লেস্টারের মতো ডনকাস্টার এবং ব্রাডফোর্ডে আপাতত এতোটা ঝুঁকি নেই কিন্তু প্রতি ১শ হাজারে সংক্রমণের হার এই দুই এলাকায় যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে লকডাউনের যাবার জন্য খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। ডনকাস্টারে গত মঙ্গলবার আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সাউথ ইয়র্কশায়ারে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ২২৩ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডনকাস্টারে গত ১৩ থেকে ১৯ জুনের ভেতরে নতুনভাবে সংক্রমিত হয়েছিল মাত্র ১১ জন। কিন্তু ২০ থেকে ২৬ জুনের ভেতরে সংক্রমিত হয় ৩২ জন। ডনকাস্টারে বর্তমানে ৯৫০ জন করোনা রোগী রয়েছে। আর দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের মধ্যে ডনকাস্টারে গত মঙ্গলবার সবচাইতে বেশি মৃত্যু হয়েছে।
হেল্থ সেক্রেটারী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, “লেস্টার সিটিতে ১০ শতাংশ করোনা পজেটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাই বৃহস্পতিবার থেকে লেস্টার সিটি দ্বিতীয়বারের মত লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তবে লেস্টার, ডনকাস্টার এবং ব্রাডফোর্ড ছাড়াও গ্রেটার লণ্ডনের বেশ কয়েকটি কাউন্সিল দ্বিতীয়বার লকডাউনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে বার্কিং অ্যাণ্ড ডেগানহ্যাম, ব্রেন্ট, ইলিং, এনফিল্ড, হ্যারিংগে এবং হান্সলো। আরো আছে নর্থ ইস্ট অ্যাণ্ড গেইটসেইড, সাণ্ডারল্যাণ্ড, রেডক্যার, ক্লেভেল্যাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি বারা কাউন্সিল। এগুলোসহ ইংল্যা-ের অন্তত ৩৬টি বারা কাউন্সিল দ্বিতীয় দফায় এলাকাভিত্তিক লকডাউনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছড়া আরো ১৫১ টি এলাকা সরকারের পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে হেলথ সেক্রেটারি জানান। এই সব এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা বেশী।
হেলথ সেক্রেটারী জানান, দ্বিতীয় দফায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন হবে আরো বেশী কঠোর। লকডাউন এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে, নন এসেন্সিয়েল দোকান পাট, শপিং মলসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাতায়াতের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। বাইরের কাউকে লকডাউন এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
প্রসংগত, গত ২৩ মার্চ বৃটেনে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ১শ দিন পর ৪ জুলাই থেকে ইংল্যাণ্ডে খুলতে যাচ্ছে পাব, রেস্টুরেন্টেসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। গত ২৩ জুন, মঙ্গলবার ডাউনিং স্ট্রিটের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বৃহদাকারে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দেন। এসময় সরকারের শীর্ষ বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও চীফ মেডিকেল অফিসার উপস্থিত ছিলেন।