বাংলাদেশে মোট ১৮০৯৯টি পরীক্ষা করে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪,০১৪ জন।৪৩ জন নতুন মারা গেছেন, এনিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ১৭৩৮ জন।বাংলাদেশে এপর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয়েছে ৭ লাখ ৩০ হাজার ১৯৭।বিশ্বে এখন ৯৯ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী আছে।বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়ালো
বাংলাদেশ
নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছে যে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪,০১৪ জন। মোট শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪১,৮০১ জনে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ১,৭৮৩ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী।
হাসপাতালে মারা গেছেন ৩০ জন, বাড়িতে ১৪ জন এবং হাসপাতালে মৃত নিয়ে আসা হয়েছে একজনকে।
বিভাগ বিশ্লেষণে ৪৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, খুলনা বিভাগে পাঁচ জন, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে এবং সিলেট ও বরিশাল বিভাগে তিন জন করে। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.২৬%।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২,০৫৩ জন সুস্থ হয়েছেন এবং বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫৭,৭৮০ জন সুস্থ হয়েছেন বলে জানান নাসিমা সুলতানা।শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০.৭৫%।
বাংলাদেশে সরকারিভাবে করোনাভাইরাস টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর নমুনা পরীক্ষা করতে ২০০ টাকা দিতে হবে। বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলেও গুনতে হবে একই পরিমাণ অর্থ। তবে কারো বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করলে পরীক্ষার ফি হবে ৫০০ টাকা। সরকার বলছে, খুব শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থায় এসব টেস্ট বিনা মূল্যে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, একারণে উপসর্গ না থাকার পরেও অনেকে এই পরীক্ষার সুযোগ নিচ্ছে। অনেকেই এই ফি নির্ধারণের সমালোচনা করে বলছেন, মহামারির মধ্যে সরকার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এই অর্থ নিতে পারে না। সরকারের কাজ হলো মানুষের জীবন রক্ষা করা। বেসরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষার জন্য আগে থেকেই সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীণ থাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী মারা গেছেন।মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: ভাষানী মির্জা জানান গত ২৯শে মে ৫৭ বছর বয়সী মিস্টার চৌধুরীকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছিলো।আজ সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এর আগে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে গত ৬ই জুন তাকে আইসিইউতে নেয়া হয় এবং পরে ১৭ই জুন থেকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হলে ১৮ই জুন থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।এর মধ্যেই প্লাজমা দেয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটৌকল অনুযায়ী সব ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়েছিলো তাকে। ভাষানী মির্জা জানান আজ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।মিস্টার চৌধুরী সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর ভাই।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি’র স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু মারা গেছেন। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর।মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ বিবিসি বাংলাকে জানান লায়লা আরজুমান্দ বানু সকাল ৭:৪৫ মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুকালে তিনিস্বামী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এক পুত্র, দুই কন্যা ও ছয় নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।গত ১৩ই জুন মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রীর করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসলে তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।মিস্টার হক পরে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও চিকিৎসাধীন ছিলেন তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু।
চীন
চীনে আবারো কড়া একটি লকডাউন দেয়া হয়েছে এখন পর্যন্ত লকডাউন করা লোকের সংখ্যা চার লাখ বলে জানা গেছে।তবে সংক্রমণ বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম। হেবেই প্রদেশের অ্যানজিনে এই লকডাউন দেয়া হয়েছে। এটি বেইজিংয়ের খুব কাছে।গত বছরের শেষদিকে চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে এখন ব্যবস্থা নিচ্ছে চীন।বেইজিংয়ে নতুন রোগী পাওয়া গেছে ১৪ জন।জুনের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া এক সংক্রমণে চীনে মোট ৩১১ জন রোগী পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা যখন কোভিড-১৯ রোগের টিকা উদ্ভাবনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, চীন তখন জোর দিচ্ছে এর চিকিৎসায় সনাতন ওষুধ ব্যবহারের ওপর। এই চিকিৎসা ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিন বা টিসিএম হিসেবে পরিচিত। চীন সরকারের সরকারি কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে, দেশটিতে যতো মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তাদের ৯২% কোনো না কোনোভাবে এই চিকিৎসা নিয়েছেন। বিশ্বের প্রাচীনতম এক চিকিৎসা এই টিসিএম যাতে ভেষজ ও আকুপাংচার থেকে শুরু করে তাই চি পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। চীনে এই চিকিৎসা প্রচণ্ড জনপ্রিয়। তারপরেও প্রায়শ এটি নিয়ে বিতর্ক হতে দেখা যায়। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বেইজিং টিসিএমকে দেশে বিদেশে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এর কার্যকারিতা নিয়ে খুব একটা নিশ্চিত নন।
সনাতন ওষুধ দিয়ে চীনে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা
এদিকে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের উৎপত্তির পর গত ছয় মাসে সারা বিশ্বে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।এই ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে এক কোটিরও বেশি মানুষ।এর মধ্যে ৪০ লাখ আমেরিকায় এবং ২৬ লাখ ইউরোপে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর সারা বিশ্বে এর সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে যায়। আর এখন সেটা বাড়ছে ব্রাজিল, মেক্সিকো ও চিলিতে।আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়াতেও প্রচুর সংক্রমণ হচ্ছে ও প্রাণহানি ঘটছে।ভারতেই আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ।
বিশ্বে জনসংখ্যার হিসেব অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যেসব দেশগুলোতে- স্যান ম্যারিনো, বেলজিয়াম, অ্যান্ডোরা, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, সুইডেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস।
ভারত
ভারতে আরো ১৯৪৫৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে মারা গেছেন আরো ৩৮০ জন। এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৮ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৭২৩ জন। মোট মারা গেছেন ১৬ হাজার ৪৭৫ জন। ভারতে লকডাউন খোলার পর দ্রুতগতিতে বেড়েছে সংক্রমণ। লকডাউন ৪.০ পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ ছিল সংক্রমণ বাড়ার হার। সেটা আনলক ১ এ এসে ৫৮.৬৭% হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
১০ মিলিয়ন বা এক কোটি ছাড়িয়েছে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এবারে নতুন ভয়াবহ একটা পর্যায়ে ঢুকছে বিশ্ব। ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু দেশে নিয়ন্ত্রণ এসেছে বটে কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত বাড়ছে উচ্চগতিতে।
১ মিলিয়ন বা দশ লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছে তিন মাস, কিন্তু শেষ ১০ লাখ রোগী মাত্র আট দিনে পাওয়া গেছে।দক্ষিণ আমেরিকা কর্তৃপক্ষের একজন বলছেন, “যে সংখ্যা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেটা হলো শনাক্ত হওয়ার পরিমাণ, কিন্তু এটা একটা পানির ওপর ভেসে থাকা বরফের টুকরোর মতো আমরা কেউ জানি না আসল সংখ্যা কত বেশি হতে পারে।”
দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকা এবং আফ্রিকার কিছু দেশে গ্রাফ উর্ধ্বমুখী।যুক্তরাষ্ট্র শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে সবার থেকে এগিয়ে থেকেও এখনো নতুন রোগী শনাক্ত করছে বেশি।কিছু রাজ্যে লকডাউন শিথিল করার পর রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে।ব্রাজিল ১০ লাখ রোগী ছাড়িয়ে গেছে, সেখানেও রোগী বাড়ছে হু হু করে।জুন মাসের এই সময়টায় এসে ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকায় রোগী শনাক্ত বেড়েছে।