মাউশি‘র নির্দেশ উপেক্ষা করে স্ব-পদে বহাল প্রধান শিক্ষক

পটুয়াখালীর বাউফলের বিলবিলাশ আব্দুর রশিদ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগে ব্যপক অনিয়ম ও অর্থ লেনদেনর অভিযোগে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর তার নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় মাধ্যমকি ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। বিগত সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই বাতিল আদেশ উপেক্ষা করে স্বপদে বহাল রয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষক, উপজেলা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের  শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মো. খায়রুল আলম।
জানাগেছে,  ২০২১ সালে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ কমিটি গঠিত হলে কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন একজন অভিভাবক সদস্য। একই সালের ১৩ ডিসেম্বর সেই রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট তার অভিযোগ নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ১৫ ডিসেম্বর নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি। পূর্ব নির্ধারিত সময়ে (১৫ ডিসেম্বর সকাল) নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ২৭ জন প্রার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হন। হাইকোর্টের আদেশের দোহাই দিয়ে পরীক্ষা হবে না বলে সকলকে ফেরৎ যেতে বলেন নিয়োগ কমিটির সদস্য ও পটুয়াখালী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ততকালীন প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন। কিন্তু ওইদিন গোপনে মাত্র ৫ জনের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। একই দিন সন্ধ্যার মধ্যে তড়িঘড়ি করে খায়রুল আলমকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। 
এসব অনিয়ম তদন্তের দায়িত্বভার আসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বরিশাল অঞ্চল উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের উপর। দুই দফা তদন্ত শেষে মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। প্রতিবেদনে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি বলে অধিদপ্তরকে জানানো হয়। তদন্তে ৮জন নিয়োগ প্রার্থীর অভিযোগে বর্নিত অনিয়ম ও নিয়োগ বোর্ডের ত্রুটিপূর্ণ কর্মকান্ডের কারণে নিয়োগ কার্যক্রম বিতর্কিত হয়েছে বলে প্রতীয়মাণ হয় মর্মে তদন্ত  প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে নিয়োগ কার্যক্রম শতভাগ স্বচ্ছ হয়নি। এই ক্ষেত্রে জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণ এবং নিয়োগ কর্মকর্তা ও পটুয়াখালী জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গাফিলতি ও ত্রুটির বিষয়টিও উঠে আসে  প্রতিবেদনে।
নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত মাউশির ওই চিঠি উপেক্ষা করে সভাপতির যোগ সাজসে মাউশির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন প্রধান শিক্ষক। চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি রিটের শুনানি শেষে মাউশির নির্দেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট।
 এআদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন মাউশির মহাপরিচালক। গত ২০ মার্চ হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এসময়ের মধ্যে এই আদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি ও আপীল নিষ্পত্তির আবেদন করেন মাউশির মহাপরিচালক। আপীল বিভাগের সর্বশেষ অফিস আদেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের এ্যাপিল এন্ড ডিভিশনের ১৭/১০/২০০৬ এর অফিস আদেশ অনুযায়ী স্থগিত আদেশ বহাল আছে। আদেশানুরুপ নিয়োগ বাতিলের নির্দেশসহ মাউশি প্রেরিত চিঠি এখনও কার্যকর আছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে নিয়োগের বিরুদ্ধে অভিযোগ কারীদের একজন ওই বিদ্যালয়েরই সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম রাজা। এ কারণে তার বিদ্যালয় প্রদত্ত ভাতা বন্ধ করাসহ তার রুমের চাবি আটকে রাখার অভিযোগ আছে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, মামলা জটিলতার কারণে নিয়োগের প্রায় তিন বছরে সরকারি বেতন-ভাতা চালু হয়নি খায়রুল আলমের। তৈরি হয়েছে ইনডেক্স জটিলতা। ফলে প্রধান শিক্ষক পদের এই বেতন তিনি বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে গ্রহণ করেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে খায়রুল আলম বলেন, ষড়যন্ত্র করে আমার নিয়োগ বাতিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। সুপ্রীম কোর্টের শুনানির পরে নিয়োগের বিষয় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আমি কখনো ঘুষ লেনদেন করিনি এবং করবোও না। দলীয় কোন পদে আছেন কিনা জানতে চাইলে, আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
সাংগঠনকি পদ সম্পর্কে বাউফল সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান লিটন মোল্লা মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন, প্রধান শিক্ষক খায়রুল তার বর্তমান কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক।
অভিযোগের বিষয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পটুয়াখালীর  শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা: মুজিবুর রহমান। তবে মাউশির নির্দেশ বাস্তবায়ন করার বিষয় প্রশ্নের জবাবে, কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের কিছু করনীয় নেই বলে জানান তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক কাওছার আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইন শাখার মতামত ছাড়া এর বাইরে কিছু বলা সম্ভব  না বলে জানান। তিনিই গতবছর নিয়োগ বাতিলের সেই চিঠি সাক্ষর করেছিলেন।
মাউশির আইন শাখার কর্মকর্তা মো. আল আমিন সরকার বলেন, ‘সুপ্রীম কোর্টের আদেশ ও আইনানুসারে, প্রধান শিক্ষক খাইরুল আলমের নিয়োগ যথাযথ না হওয়ায় নিয়োগ বাতিলের জন্য মাউশির চিঠির কার্যক্রম চলমান আছে। ইউএনও যদি কোর্টের কাগজ বুঝতে না পারে তাহলে তার উচিত এ বিষয়ে মাউশির কাছে জানতে চাওয়া। মাউশি অবশ্যই তাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে এ বিষয়ে কাগজ-পত্র  যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’