দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ১৬২৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৮০৩ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে।এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৬৭ হাজার টেস্ট করা হয়েছে । এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১০২২৯২ জন। নতুন করে মারা গেছেন ৩৮ জন, মোট মৃত্যু ১৩৪৩ জন।দেশের ৫৯টি ল্যাবে ১৬ হাজার ২৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্তের এই সংখ্যা পাওয়া গেছে।এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৯৭৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ১৬৪ জন।বিশ্বে এখন ৮৩ লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী আছে।মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ।
বিশ্বব্যাপী এখন মারা গেছে ৪ লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষ। কিন্তু এটাই সঠিক সংখ্যা নয়।অন্তত আরো ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা গেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যেটা লিপিবদ্ধ হয়নি।অন্তত ২৭টি দেশের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই মহামারিতে সেসব দেশে মৃত্যুর সংখ্যা এবং হার বেশি।বিশ্বব্যাপী নানা দেশের সরকার যে তথ্য দিচ্ছে তার চেয়ে আসল মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি।যুক্তরাজ্যে অন্য বছরের তুলনায় একই সময়ে ৪৩ শতাংশ বেশি মানুষ মারা গেছে।৬৪ হাজার ৫০০ মানুষ বেশি মারা গেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে।স্পেনে ৫০ শতাংশ মানুষ বেশি মারা গেছে।প্রায় ৪২ হাজার ৯০০ মানুষ বেশি মারা গেছে।এই পরিসংখ্যান দোসরা মার্চ থেকে ১৭ই মে পর্যন্ত।একই সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত রোগে আনুষ্ঠানিক মৃতের সংখ্যা ২৭,৭০৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অভিজ্ঞতা বিচারে বিশ্বে এবং বাংলাদেশে আরো দুই তিন বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ চলবে। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে যা অনুমান করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তা হলো কিছুদিন পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসতে পারে। তিনি জানান তিনি নিজেও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন।
তবে বেশ কিছুদিন আগে তিনি ফিরে আসেন দপ্তরে এবং কাজ শুরু করেন বলে জানান।মি. আজাদ বলেন, টেস্ট বাড়ালে মৃদু ও সুপ্ত করোনাভাইরাস বের হয়ে আসবে, সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা যে কমেছে সেটা বোঝা যাবে না।করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হবে না বলছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
“এটি দুই থেকে তিন বছর ধরে চলতে পারে. যদিও সংক্রমণের মাত্রা একই হারে নাও থাকতে পারে।”বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ও পরিস্থিতি সামাল দিতে কী কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার এবং এখন পর্যন্ত কী কী করা হয়েছে তার একটা তালিকা তুলে ধরেন মি. আজাদ:
- ১)দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ হয়েছে।২) স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ এবং মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট নিয়োগ করা হবে ৩) দীর্ঘস্থায়ী কোভিড-১৯ চিকিৎসা পরিকল্পনা ৪) কোভিড পরীক্ষা হবে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ ৫) জেলা পর্যায়ে আরো বেশি পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানো হবে ৬) নতুন এবং সহজ কোভিড-১৯ পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে আসা হবে ৭) জেলা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেয়া হবে ৮)সকল সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেয়া হবে ৯) হাসপাতালে ‘হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা’, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর দ্রুত সরবরাহ করা হবে ১০)পরীক্ষার কিট ও পিপিই সংগ্রহ করা হচ্ছে
সরকারি ও বেসরকারি খাত যাতে যৌথভাবে এই দায়িত্ব পালন করে সেটার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন মি.আজাদ।
রাশিয়া
রাশিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি সংস্থা বলছে, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৪৮৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছে।সর্বশেষ হিসেবে বলা হচ্ছ গত মাসে যেখানে মারা যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০১ জন, সেখানে এক লাফে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ তে।রাশিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ক তদারক সংস্থা রসড্রাভনাডজরের প্রধান আলা সামোইলোভা বলেন, প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দিতে না পারা এর অন্যতম কারণ।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।জার্মানীর পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির ফলে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে বাঁচতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য দেশের একসঙ্গে কাজ করা জরুরী।তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় প্রজেক্ট যে কতটা নাজুক, তা এই মহমারি স্পষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য এবং সংহতি এতটা গুরুত্বপূর্ণ এর আগে কখনো ছিল না।জার্মানি আগামী পহেলা জুলাই হতে ছয় মাসের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে।
বেইজিংয়
চীনের শহর বেইজিংয়ে আরো ২৮ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ২১ জন স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত।গত কয়েকদিন ধরেই শহরটিতে সংক্রমণে একটা উচ্চ গতি দেখা
ভারত
যদিও দক্ষিণ আমেরিকার দিকে নজর বেশি, তবু ভারতে বেড়েই চলেছে প্রতিদিন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা।ভারতে আরো ১২ হাজার ৮৮১ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে।দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই বিপর্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
পেরু
পেরুতে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ৯০৮ জন।দেশটিতে মারা গেছেন ৭২৫৭ জন।ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪৫ হাজার।লাতিন আমেরিকার পেরুতে ৩০শে জুন পর্যন্ত লকডাউন থাকবে বলা হয়েছে।তবে দৈনিক সংক্রমণ এখন নিচের দিকে নামছে। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী ৩৭০০ মানুষ শনাক্ত হয়েছে যা মে মাসের তুলনায় অর্ধেক।
দক্ষিণ আমেরিকা
পেরুতে এখন ইতালির চেয়ে বেশি রোগী, দেশটিতে ২ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমণ।লাতিন আমেরিকাই এখন করোনাভাইরাসের উপকেন্দ্র। যদিও কিছু দেশে কড়াকড়ি কমিয়ে আনা হয়েছে কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি শেষ হতে দেরি আছে।দক্ষিণ আমেরিকায় এখন চল্লিশ লাখের বেশি রোগী আছে। মারা গেছে ২ লাখের মতো। জার্মানিতে হাজারো মানুষকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে।