সংক্রমণের উচ্চহারের কারণে ওই এলাকাকে লকডাউন করা হয়। বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালে একমাত্র চিকিৎসক ও সংবাদকর্মী ছাড়া কেউ ওই এলাকা থেকে বের হতে কিংবা নতুন করে ঢুকতে পারবে না।বাংলাদেশে এর আগে এমন কঠোরভাবে লকডাউন আরোপ করা হয়নি।
পূর্ব-রাজাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় ঢোকার সব কয়টি প্রবেশমুখে তালা দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। কোন কোন প্রবেশমুখে লোহার গেটে তালার বাইরে বাঁশ আর কাঠ দিয়ে ব্যারিকেড বানানো হয়েছে।
গেটে প্লাস্টিক ব্যানার ঝুলিয়ে লিখে দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক রেড জোন ঘোষণা করে এলাকায় লকডাউন করা হয়েছে।বড় বড় লাল হরফে লেখা হয়েছে ‘প্রবেশ নিষেধ’।
ইন্দিরা রোড-পান্থপথ-তেজতুরি বাজার সংলগ্ন সব বন্ধ প্রবেশমুখে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে। তেজতুরি বাজার সংলগ্ন একটি মাত্র গেট খোলা, যেখান দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের জরুরি খাদ্য সরবারহ এবং ওষুধবাহী দুয়েকটি পিকআপ ঢুকছে।
যারাই ভেতরে ঢুকছেন, তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। হ্যান্ডমাইক নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা মাইকিং করে সচেতন করছেন বাসিন্দাদের।
সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, যদিও মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে পূর্ব-রাজাবাজারে লকডাউন হবে, কয়েকদিন ধরে এলাকায় এমন মাইকিং হয়েছে।
বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালীন কেউ এলাকা থেকে ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না। এসময় কোন বাজার বা জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রয়োজন হলে সিটি কর্পোরেশনের স্বেচ্ছাসেবকদের জানাতে হবে, কোন সার্ভিস চার্জ ছাড়াই তারা সেটি বাড়ি পৌঁছে দেবেন।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যেহেতু অন্তত আগামী দুই সপ্তাহ লক-ডাউন চলবে, ফলে সাধ্যমত প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রায় সবাই।কিন্তু সাধারণ ছুটি চলাকালে যাতায়াতে যে শিথিলতা ছিল, তেমনটি চলবে না জেনে কেউ কেউ রোববার থেকে এলাকা ছেড়ে কিছু দিনের জন্য অন্যত্র চলে গেছেন এমন কথাও জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
ঢাকার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পূর্ব-রাজাবাজার আয়তনে খুবই ছোট একটি এলাকা, ভেতরে মাত্র আটটি সড়ক রয়েছে।একদিকে ফার্মগেট, আরেকদিকে পান্থপথ ও কাওরানবাজার এবং আরেকপাশে ধানমন্ডি, ভৌগলিকভাবে এমন একটি জায়গায় অবস্থান হওয়ায় এবং ঢাকার যেকোন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবার কারণে এই ছোট্ট জায়গাটুকুর মধ্যেই ৪০-৪৫ হাজার মানুষ বাস করেন।
স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, কোনও এলাকায় প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা যদি ৩০-৪০ জন হয়, তাহলে সেই এলাকাকে ‘রেডজোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। আর আজকের দিন পর্যন্ত হিসাবে পূর্ব-রাজাবাজারে মোট ৩১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
পূর্ব-রাজাবাজারের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান জানান, লকডাউনে বাসিন্দাদের সেবা দেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
“খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেয়া এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আমরা পালন করবো, এজন্য এই মুহূর্তে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। অর্থাৎ একজন মানুষের যাতে কোন দরকারেই বের হতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি আমরা।”