মেট্রোরেলে চলছে নিষিদ্ধ এসএমসি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন

এসএমসি ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় আদালত এই পানীয়টি বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেও মেট্রোরেলে এখনও চলছে সেই নিষিদ্ধ জুসের বিজ্ঞাপন। মেট্রোরেলে নিষিদ্ধ ও অনুমোদনহীন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হওয়ায় সচেতন যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

মেট্রোরেলে নিয়মিত যাতায়াত করেন শিপন রহমান। তিনি বলেন, বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত বেশ কয়েকদিন আগে আদেশ দিয়েছিল। ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য আদালত এই পণ্যটি নিষিদ্ধ করে বাজার থেকে সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের জন্য বলেছেন। সেই নির্দেশনার কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও এখনও সরকারি প্রতিষ্ঠান মেট্রোরেলের ভিতরে ওই পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব? এর সাথে যারা জড়িত তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এর কোম্পানী সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। মেট্রোরেলে বিজ্ঞাপনের বিষয়টি বিজ্ঞাপন এজেন্সী দেখে থাকে। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মেট্রোরেলে চলছে নিষিদ্ধ এসএমসি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন

কেন নিষিদ্ধ হয়েছিল এসএমসি ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোন পণ্য উৎপাদনের লাইসেন্স পাওয়ার পর উৎপাদন শুরু করবে। কিন্তু কোম্পানিগুলো কোন অনুমতি ছাড়াই বাজারজাত করা শুরু করেছে। একই সাথে ওই সব পণ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণাও করছে।

অসত্য তথ্য দিয়ে ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা ও অনুমোদন ছাড়া পণ্য বিক্রি করায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে গত ১৪ মে মামলা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদনহীন ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বিক্রির অভিযোগে ৫টি কোম্পানীর মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর আদালতে উপস্থিত হয়ে দোষ স্বীকার করে জামিন চান এসএমসি প্লাসের কর্ণধার তানভীর সিনহা। পরে আদালত তাকে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইসাথে এসএমসি ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন আদালত।

এসএমসি ছাড়াও আদালতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসগুলো হলো- প্রাণের অ্যাক্টিভ, ব্রুভানা বেভারেজ লিমিটেডের ব্রুভানা, দেশবন্ধু ও আগামী কোম্পানির রিচার্জ এবং আকিজের টারবো।

মেট্রোরেলে চলছে নিষিদ্ধ এসএমসি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন

ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস হতে পারে স্বাস্থ্যঝুুঁকির কারণ
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, কেউ যদি পর্যাপ্ত পানি খায় এবং প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকে, তবে নিয়মিত ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যে পরিমাণ পানি গ্রহণ করেন, এর চেয়ে বেশি তরল হারালে এবং ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে ইলেক্ট্রোলাইট হারাবেন। তবে এই ক্যাটেগরির ড্রিংকসটি বাজারে আসার পর অনেকে সাধারণ এনার্জি ড্রিংকের সাথে গুলিয়ে ফেলছে। যে যার ইচ্ছামতো এগুলো খাচ্ছে। এটা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।

স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. তুষার বলেন, এনার্জি ড্রিংকও যেমন অতিরিক্ত খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনই ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এটি উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও একটা ভূমিকা রাখে। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স তৈরি হলে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যে কারণে আমরা অতিরিক্ত ডাব খেতেও নিষেধ করি।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই ধরনের পানিতে অত্যধিক পরিমাণ সোডিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে। যে কারণে অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনে এ জাতীয় পানীয় পান করলে উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়ার জন্য হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে। এটি ঘটে যখন শরীরে অত্যধিক পটাসিয়াম থাকে, যা বিপজ্জনক হতে পারে হৃদযন্ত্রের জন্যও। এর ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ইচ্ছেমত এসব পানীয় পান করা হলে স্বাস্থের জন্য উপকারের বদলে উল্টো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

সেই নিষিদ্ধ ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন এখনও কীভাবে মেট্রোরেলের মতো একটি গণপরিবহনে চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।