সৌদিতে ভুয়া কোম্পানীর ফাঁদে প্রবাসীরা সর্বশান্ত

রফিকুল ইসলাম
সৌদি আরবে নামসর্বস্ব কোম্পানীর ভিসায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে গিয়ে প্রবাসীরা সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন। সেখানে গিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আবার অনেকে ধারদেনায় সৌদি আরব গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন।

সৌদি আরব থেকে অনেক প্রবাসী প্রিয়দেশ নিউজকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভালো বেতনের কথা বলে সৌদি আরবে নিয়ে তাদেরকে কাজ দিচ্ছে না, খাবার দিচ্ছে না এবং আকামাও দিচ্ছে না। কোনো কোনো এজেন্সি প্রবাসীদেরকে ৩ মাসের অনলাইন আকামা ধরিয়ে দিচ্ছে, যদিও সেটা কোনো কাজে আসছে না।

প্রবাসীরা জানান, সৌদি আরবে করোনার পর অনেক নামেমাত্র কোম্পানী খোলা হয়েছে। সেখান থেকে ভিসা বের করে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের হয়ে কাজ করছে। সৌদির কোনো কোনো কোম্পানী আবার বাংলাদেশের অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরাই খুলেছে। সেখানে ভিসা দেওয়ার নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে বলা হয়, ‘ডাইরেক্ট কোম্পানীতে কাজ দেওয়া হবে’। এসব চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রবাসীরা সর্বশান্ত হারাচ্ছে।

সৌদি আরব থেকে একাধিক প্রবাসী প্রিয়দেশ নিউজকে জানান, প্রবাসীদের কাছ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদেরকে সৌদিতে নিয়ে নানা ধরনের অত্যাচার করা হয়। এমনকি তাদেরকে খাবার পর্যন্ত দেওয়া হয় না। মারধর করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই। যেন তারা সেখান থেকে বাইরে চলে যান। কারণ, বাইরে চলে গেলেই কোম্পানী দায়মুক্ত। এভাবেই সৌদির ভুয়া কোম্পানী আর দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে সৌদি আরব প্রবাসীদের জীবন।

সৌদি আরব বাংলাদেশের শ্রমবাজারের অন্যতম প্রধান জায়গা। ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে যাওয়া প্রবাসীদের ৩৬ শতাংশের বেশি মানুষ গেছেন সৌদি আরবে। এখন পর্যন্ত মোট বিদেশে গেছেন ১ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ২৯০ জন প্রবাসী। এরমধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৬২ জন কর্মী। সেই সৌদি আরবের শ্রমবাজার এখন ভুয়া আর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে হাতছাড়া হতে চলেছে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। প্রতারণার শিকার শ্রমিকদেরকে বিএমইটিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ জানানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়েও কেউ যদি প্রতারণার শিকার হন, তাহলে লিখিত অভিযোগটা অন্তত আমাদেরকে দিতে হবে। সরকার এবং মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এছাড়া সাইনবোর্ড নির্ভর সৌদির প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়েও সেদেশের সরকারকে জানানো হবে। বাংলাদেশের কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সংশ্লিষ্টতা যদি পাওয়া যায়, তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ অপরাধী যেই হোক, তাদেরকে যথাযথ আইনের আওতায় আনা হবে।

বিএমইটি বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানানোর বিষয়ে বলা হয়, প্রবাসীদের বিএমইটি কার্ডে রিক্রুটি এজেন্সির লাইসেন্স নাম্বার (আরএল নং) লেখা থাকে। ওই নাম্বার ও নাম দিয়ে অনলাইনে সার্চ করলেও বিস্তারিত চলে আসবে। পরে সেই এজেন্সির কাছে পরিবারের কাউকে পাঠিয়ে সমাধান না হলে বিএমইটি বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হবে। এই অভিযোগের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় খুব কঠোর।