আহমেদ শরীফ রনি, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেহাবি) গাড়িচালক পদে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল হোসাইন এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজ (৫৫) নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার আশিয়ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মামলার বাদী আল আমিন (২৬) একই উপজেলার বিক্রমশ্রী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে।
মামলার অভিযোগ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সাজ্জাদুল ও আল আমিন পূর্ব পরিচিত। সাজ্জাদুলের কথামতো শেহাবিতে গাড়িচালক পদে আবেদন করেন আল আমিন। পরে গত বছরের শুরুতে চাকরি পাইয়ে দিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ বাবদ ৫ লাখ টাকা নেন তিনি। কিন্তু চাকরি না হওয়ায় শর্ত অনুযায়ী টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি। পরে গত ২৭ ডিসেম্বর থানায় অভিযোগ দেন আল আমিন। থানা পুলিশ আল আমিনকে এ বিষয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল হোসাইনের আদালতে মামলা দায়ের করেন আল আমিন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এদিনই এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জরি করেন।
মামলার বাদী আল আমিন বলেন, ‘সাজ্জাদুল হককে এলাকার অনেকের সামনে টাকা দিয়েছি। চাকরি না হলে টাকা ফেরত দেবেন বলেছিলেন। এখন চাকরিও হয়নি, টাকাও দিচ্ছেন না। থানায় অভিযোগ দেওয়ায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন। শেষে আদালতে মামলা করেছি। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
অভিযুক্ত এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ডিসেম্বরে বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর আর সাজ্জাদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। অসুস্থতা জনিত কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটির আবেদন পাঠিয়ে কোথায় যেন চলে গেছেন। যদিও তার ছুটি মঞ্জুর হয়নি। তার মোবাইলফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, দুইদিন আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌছেছে। শুনেছি বেশকিছু দিন ধরে এলাকাছাড়া সাজ্জাদুল হক। তবে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। অবস্থান সনাক্ত হলেই অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীর সভায় ভোট চান শিক্ষক সাজ্জাদুল হক। এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদ পারভেজ। পরে এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে শিক্ষা বিভাগ। মামলার পরপরই সাজ্জাদুল হক নিজেকে অসুস্থ দাবি করে একমাসের ছুটির আবেদন করে এলাকার বাইরে চলে যান। শিক্ষা অফিসের সাথেও আর যোগাযোগ রাখেননি।