২০২৩ সালে সড়কে প্রাণ গেছে ৭৯০২ জনের

অহিদুর রহমান: বিদায়ী বছরে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত ও ১০ হাজার ৩৭২  জন আহত হয়েছেন।

এছাড়া একই সময়ে রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫১২জন, আহত হয়েছেন ৪৭৫ জন। নৌপথে ১৪৮ দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত এবং ১০৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন।

একই সময়ে ২০৩১ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২১৫২ জন নিহত এবং ১৩৩৯ জন আহত। সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে বিদায়ী বছরে ৬৯২৯ টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত এবং ১০ হাজার ৯৯৯ জন আহত হয়েছেন।

রবিবার  (১৪ই জানুয়ারি) রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, বিদায়ী বছরে ২০২৩ সালে ৬২৬১ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯০২ জন নিহত এবং ১০ হাজার ৩৩২ জন আহত হয়েছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মোজাম্মেল হক  বলেন, বাংলাদেশে দুর্ঘটনার নামে সড়কে প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ড চলছে। চলমান ইসরাইল আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজায় যে পরিমাণ প্রাণহানি হয়েছে, বাংলাদেশের সড়কে বছরে তার থেকে প্রাণহানি অনেক বেশি।

মোজাম্মেল হক বলেন, বিভিন্ন সময়ে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটলে, সরকার তড়িঘড়ি করে দু-একটা মিটিং করে নানান আশ্বাস দিয়ে সবকিছু আবার ধামাচাপা পড়ে যায়। সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে সড়কে প্রাণহানি বেড়েই চলছে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীতে বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্রাণহানি হয়েছে তার চেয়ে প্রতিবছর সড়কে বেশি প্রাণহানি হচ্ছে।

করোনায় প্রাণহানি নিয়ন্ত্রণ  করার জন্য সরকার যতটা তৎপর ছিল তার থেকে বেশি প্রতিবছর সড়কে প্রাণহানি হচ্ছে এদিকে সরকারের নজর নেই। তিনি আরো বলেন, সড়কের অবকাঠামো নির্মাণে সরকার  সাফল্য অর্জন করলেও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে প্রাণহানি কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার ২৩ টি কারণ উল্লেখ করা হয়। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং, ফিটনেস বিহীন যানবাহনের অবাধ  চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, সড়কে আলোকসজ্জা না থাকা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে   যানবাহনের ১১.২২ শতাংশ ব্যাটারি চালিত রিক্সা- ভ্যান- ইজি বাইক , ২.৮২ শতাংশ বাস- এ সমস্ত বাহনে সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ২৪.৩৬ শতাংশ কার -জীব মাইক্রোবাস, ২৩.২২ শতাংশ নসিমন -লেগুনা, ২৩.৩ শতাংশ সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ১৯.৯% মোটরসাইকেল, ৯.৮৪ শতাংশ ট্রাক কাভার ভ্যান- এই জাতীয় বাহনে  সড়কে দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে।

বিগত ২০২২ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২৩ সালে ৬.৭৩ শতাংশ গাড়ি চাপা ১১.৯৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ ৩৭.৩ শতাংশ যানবাহনে ওড়না পেঁচিয়ে, ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষের গঠনা ৩৫.২ শতাংশ, ১৬.৪ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পরে এমন দুর্ঘটনা ঘটনা কমেছে। এছাড়াও অন্যান্য কারণে ১৮.৩৪ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে।

তাদের পর্যবেক্ষণে আরো জানানো হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্য থেকে ১৯৫০ জন চালক, ৯ ৬৮ জন পথচারী, ৪৮৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী, ৯৭ জন শিক্ষক, ১৫৪ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৮৫ জন নারী, ৬১২ জন শিশু, ৩০ জন সাংবাদিক, ৩২ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৮ জন আইনজীবী, ১০ জন  প্রকৌশলী, এবং ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ১৪টি সুপারিশ করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে-করোনার চেয়ে ভয়াবহ মহামারী বিবেচনায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার প্রকল্পে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। গণপরিবহন চালকদের যুগোপযোগী পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। সড়ক নিরাপত্তায় প্রণীত যাবতীয় সুপারিশ মালা বাস্তবায়ন করা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে  ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহাসিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।