মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী-শিশুসহ ২৪ রোহিঙ্গা উদ্ধার

হেলাল উদ্দিন: সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া এলাকা থেকে নারী ও শিশুসহ ২৪ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ছয়জন শিশু, ছয়জন নারী ও ১২ জন পুরুষ রয়েছেন। তারা সকলেই উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

বুধবার ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন বাহারছড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টায় উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া এলাকায় থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।

বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার পাহাড়ে বেশ কিছু অপরিচিত মানুষের আনাগোনার খবর পায় পুলিশ। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন দালাল কৌশলে পালিয়ে যায়। এসময় পাহাড়ের ঝোপ-জঙ্গলে ভেতর থেকে ২৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে পুলিশ পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান জানান, ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া দালাল চক্রের সদস্যরা এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবির ভেতর থেকে বাহির করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ভালো চাকরি, বিয়ের আশায় তারা সাগরপথে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জড়ো করেছিল। রাতের যেকোন সময় তাদের ট্রলারে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

হামিদা বেগম ও রশিদ উল্লাহ বলেন, তারা দু’জনই রোহিঙ্গা তরুণী ও যুবক। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই সাগর পথে ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া যাবার চেষ্টা চালায়। এরমধ্যে জনপ্রতি ট্রলারে তুলে দেওয়ার কথা বলে ১০ হাজার টাকা করে আগাম হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা। অবশিষ্ট টাকা মালয়েশিয়া পৌঁছানো পর দেওয়ার কথা ছিল। জনপ্রতি আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকায় তাদের সাথে চুক্তি হয়।

বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান বলেন, রাতে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক এসব রোহিঙ্গাদের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা মাঝি বলেন, দালাল চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে তারা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে বাহির হয়ে যাচ্ছেন। এ চক্রটি রোহিঙ্গাদের নানান ধরণের প্রলোভনের পাশাপাশি ভালো চাকরি ও বিয়ের কথা বলে সাগরপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। এসব প্রতিরোধে এখনিই স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গারা আশ্রয়শিবিরে প্রচারণা চালালে আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দারা নিরুৎসাহিত হবেন। এভাবে আশ্রয়শিবির গুলোতে প্রচারণা করতে হবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের টেকনাফ থানা পুলিশ স্থানান্তর প্রক্রিয়াধীন রযেছে। তাদের উখিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে। তাদেরকে যাচাই-বাছাই করার পর তারা কোন কোন আশ্রয়শিবিরে বাসিন্দা কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করা হবে। মিয়ানমার থেকে এসে টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা বলা হচ্ছে কিনা। যদি তারা উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে বাসিন্দা হলে তাদেরকে স্ব স্ব আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানো হবে।