বাউফল প্রতিবেদক: ইলিশের ভরা মৌসুমেও পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে দেখা মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। অনেকটা খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন তেঁতুলিয়া পাড়ের জেলেরা। এতে জেলেপাড়া জুড়ে বিরাজ করছে হতাশা।
জেলে ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগর মোহনায় ডুবোচরে বাঁধা পেয়ে ইলিশ গতিপথ পাল্টাচ্ছে। যার কারণে সাগরে ইলিশ ধরা পড়লেও তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীতে প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশের দেখা মিলছে না।
ভোলার উত্তরে মেঘনা নদী থেকে উপত্তি তেঁতুলিয়ার। নদীটির দৈঘ্য প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। বাকেরগঞ্জের অংশ হয়ে, বাউফলের ধুলিয়া, নিমদী, কালাইয়া দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দশমিনা উপজেলার রনগোপালদি নামক স্থানে বুড়াগৌরঙ্গ নামে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। আবার ভোলার নাজিরপুর, চরকলমী, চরকুকরি, ডালচর হয়েও সাগরে মিশেছে। তেঁতুলিয়া নদীকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহিৃত করেছে মৎস্য বিভাগ। কয়েকবছর আগেও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের আনাগোনা ছিল বেশ সরব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারনত সোজা পথে ঝাঁক বেধে চলে। চলার পথে বাধা পেলে সেখান থেকেই ইলিশ ফিরে যায়। ভিতরে আর প্রবেশ করে না। পটুয়াখালী ও ভোলার সাগর মোহনায় দীর্ঘ ডুবোচর ও নদীর গভীরতা কম যাওয়ায় ইলিশ চলার পথে বাধপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে ইলিশ আর নদীতে প্রবেশ করে না। যার কারনে ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাক্সিক্ষত রূপালী ইলিশ। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি, বর্জ্য থেকে পানিদূষণ, নির্বিচারে জাটকা নিধণও ভরা মৌসুমে ইলিশের দেখা না মেলার অন্যতম কারণ।
তেঁতুলিয়া নদী ঘুরে দেখা যায়, চর রুস্তুম থেকে দশমিনার বাশবাড়িয়া পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য ডুবোচর জেগেছে। দেখা দিয়েছে নব্যতা সংকট। আকাঁবাকা হয়ে পড়েছে নদীর গতিপথ। শুধু তেঁতুলিয়া নয়, সাগর মোহনার রামনাবাদ. আগুনমুখা, আন্ধারমানিক ও বলেশ্বর নদীতেও অসংখ্য ডুবোচার জেগেছে। যাতে পরিবর্তন এসেছে নদীর গতিপথে।
জেলেরা বলছেন, সাগর মোহনায় প্রভাবশালী কিছু অসাধু জেলেরা ছোট ফাঁসের বিভিন্ন জাল পেতে রাখেন। যার ফলে ছোট বড় সকল প্রজাতির মাছ আটকা পড়ে। অপরদিকে ওই সব অঞ্চল দিয়ে সাগর থেকে নদীতে পানি প্রবাহ কমে যায়। সৃষ্টি হয় ডুবোচরের। এতে ইলিশের প্রবেশ ও প্রজননে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
নদীতে ইলিশ না থাকায় পরিবার ও ঋণের দায় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তেঁতুলিয়া পাড়ের প্রায় ৫ হাজার জেলে। ইলিশ কেন্দ্রিক বাণিজ্য এই সময়টাতেই জমে। তা না হলে ইলিশ ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা পথে বসবেন। না খেয়ে মরবেন জেলেরা।
চর মিয়াজানের ইলিশ জেলে মো. আলতাফ মাঝি বলেন, বর্ষায় নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। যা বিক্রি করে এনজিও’র ঋণ, আড়তদারের দাদন পরিশোধ করি। মৌসুমি শেষে আবার ধার দেনা করে চলি। এবছর নদীতে ইলিশ নেই। ইলিশ না থাকাও জেলেরাও ভালো নেই।
কালাইয়ার মৎস্য ব্যবসায়ী মো. জুয়েল মাহমুদ মৃধা বলেন, ইলিশ মৌসুমের আগে জেলেদের জাল নৌকা তৈরি ও মেরামত করতে টাকা দিয়েছে। ইলিশ ধওে তাদেও সংসার চালাবে। আমাদেরও মাছ দিবে। তবে নদীতে মাছ না থাকায় ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লোকমান আলী বলেন, সাগর মোহনায় ডুবোচরের বিষয় নিয়ে আমরাও ভাবছি। ইলিশ যখন মাইগ্রেড করে সাগর থেকে নদীতে আসে তখন তার একটি নিদিষ্ট গভীরতার প্রয়োজন। কিন্তু সাগর থেকে নদীতে ঢুকতে মোহনায় যখন পর্যাপ্ত গবীরা পায় না তখন তারা আবার সাগরে ফিরে যায়। এটা থেকে উত্তোরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ড্রেজিং। তবে আমাদের দেশে সাগর মোহনা ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা চালু হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, বেহুন্দি জাল, চরঘেরা জাল, নদীতে ঝোপ দিয়ে মাছ শিকারের কারনে নব্যতা সংকট দেখা দেয়। এসব বন্ধে আমারে অভিযান চলছে। আর সাগর মোহনায় ডুবোচরের কারনে যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তার সমাধানে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছেন।