করোনাভাইরাস: গার্মেন্টসে জীবনের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি?

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি বাড়ানো হলেও রোববার থেকে খোলা হয়েছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলো। এতে গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা ঢাকামুখী হওয়ায় জনসমাগম ও ব্যক্তিগত দূরত্বের বিষয়টি লঙ্ঘিত হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে এ ছুটির মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়কালে জনসমাগম এড়াতে এবং মানুষ যাতে বাসায় থাকে তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকামুখী একজন পোশাকশ্রমিক বলেন, আগামীকাল গার্মেন্টস খুলবে, তাই ফেরা। এপাড়ে এসে শুনলাম কারখানার বন্ধের সময় বাড়বে। এখন ঢাকা যাব, নাকি ফিরে যাব, বুঝতে পারছি না।

শরীফুল নামের এক পোশাকশ্রমিক ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, গার্মেন্টসে আমরা সবসময়ই কঠোর পরিশ্রম করি। সেই অনুপাতে আমাদের অনেক অভিযোগ থাকলেও আমরা বলি না, কাজ করে যাই। সরকার শুরুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও তখন সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ছুটি দেয়নি। ৫ হাজার কোটি টাকার নিশ্চয়তা পেয়ে মালিকপক্ষ ছুটি দিয়েছে। এখন সরকার ভাইরাসের কারণে ছুটি বাড়ালেও আমাদের ছুটি বাড়েনি। মালিকদের কাছে কি আমাদের জীবনের চেয়ে টাকার মূল্যই বেশি?

রিমন নামের আরেক পোশাকশ্রমিক বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় আমাদের গার্মেন্টসের পোশাক যায় বেশি। সেসব দেশ এখনও লকডাউন। সেখানে হাজার হাজার মানুষ মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। তারা কি এখন পোশাক কেনার চিন্তায় আছে? এরপরও আমাদের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে এখন কারখানায় আসতে বাধ্য করা হলো। গার্মেন্টসে একজন যদি আক্রান্ত হন, তাহলে ওনারা (মালিকপক্ষ) কি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন? এই ভাইরাস দেশব্যাপী ছড়াবে না?

বাগেরহাট থেকে কর্মস্থল গাজীপুরের পোশাক কারখানায় যাচ্ছেন দুই বোন মোরশিদা আক্তার ও রিক্তা আক্তার। দুই বোন আজ সকাল সাতটায় অন্যদের সঙ্গে মাইক্রোবাস ভাড়া করে রওনা করেন। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। তিনিও বলেন, ‘একদিকে গাড়ি নেই, আরেক দিকে করোনার ঝুঁকি, এভাবে কি আসা যায়?’

এর আগে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্রেতারা এখন পর্যন্ত ২৯১ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা) এর তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে সামনে এ খাত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারে।

রুবানা হক বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। একের পর এক পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে এ খাত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। তাই কঠিন এ সংকটময় মুহূর্তে ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ স্থগিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক কারখানা মালিকেরা।

সাধারণ ছুটিতে কারখানা বন্ধ রাখলেও বিজিএমইএ জানিয়েছিল, রপ্তানীমুখী যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ বহাল রয়েছে এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জরুরী অপরিহার্য পণ্য (পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডওয়াস, ওষুধপত্র ইত্যাদি) উৎপাদনের কাযর্ক্রম চলমান রয়েছে, সেসব কলকারখানা চালু রাখা যাবে।