পূত্রবধূ, ওসি ও ডিআইজির বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবে বৃদ্ধের প্রতিবাদী অবস্থান

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় পূত্রবধূ সালমা আক্তার কর্তৃক মঠবাড়িয়া থানার ওসি এবং বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির প্রত্যক্ষ মদদে প্রবাসীর পরিবারকে হয়রানির প্রতিবাদে আজ ২১ জুন বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদী অবস্থান ও সংবাদ সম্মেলন করেছে আলকাজ উদ্দিন নামের এক বৃদ্ধ।

গণমাধ্যমে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, আমি একজন ৭৩ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ। আমি বাটন মোবাইলও ঠিকমতো চালাতে পারি না, শুধুমাত্র কল রিসিভ করা ছাড়া। অথচ আমি একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার আসামী। এক প্রতারক তরুণী কর্তৃক ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগশাজশে লাগাতার হয়রানির শিকার হয়ে আপনাদের সম্মুখে আসতে বাধ্য হয়েছি।

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের দেবত্র গ্রামের রত্তন তালুকদারের মেয়ে সালমা আক্তার আমার বড় ছেলের ২য় স্ত্রী। সে ইতোমধ্যে আমাদের অন্তত ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যা আদালতে প্রমাণিত। কিন্ত তারপরও সে দীর্ঘদিন যাবৎ আরও মোটা অংকের অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে আমার পরিবারকে ভয়ানকভাবে হয়রানি করে আসছে বিভিন্ন থানা ও আদালতে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ এবং মামলা দিয়ে। সালমা বেগমের সকল অভিযোগ ও মামলা আদালত ও পুলিশের তদন্তে বরাবরই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। উপরন্ত আমরা তার হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে সালমার বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া মোকাম বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি (সূত্র- মোকাম মঠবাড়িয়া উপজেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে- এমপি কেস নং- ৪৮৮/২০২২)। সেই মামলায় সালমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও হয়। আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি বিষয়টি তুলে ধরে একটি গণমাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্ট (ভিডিও প্রতিবেদন) ও প্রিন্ট পত্রিকায়ও সকল তথ্যপ্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সম্প্রতি। এতে সালমার প্রতারণার মুখোশ উন্মোচিত হলে সে ক্ষুব্ধ হয় এবং সে আমাদের হয়রানির নতুন পথ খুঁজতে থাকে। অবশেষে সে বিভিন্ন কৌশলে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি আক্তারুজ্জামানকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়৷এবং বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজিও আমাদের সাথে অন্যায়ভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ শুরু করে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৯ বছর বয়সী সালমা আক্তার নিজেকে কলেজ ছাত্রী ও অসহায় বাচ্চা মেয়ে পরিচয় দিয়ে ডিআইজি আক্তারুজ্জামানকে আবেগতাড়িত করেছে বলে আমাদের ধারণা। ঠিক এ কারণেই উভয় পক্ষের মামলা আদালতে চলমান থাকার পরও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি আক্তারুজ্জামান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে প্রতারক সালমার পক্ষ নিয়ে পর পর ২টি ভিত্তিহীন মনগড়া ও একপেশে কল্পকাহিনী নির্ভর পোস্ট করেন৷ ওই পোস্টে ডিআইজি আক্তারুজ্জামান প্রতারক বিএনপি নেত্রী সালমাকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ হাসিনার সাথেও তুলনা করেন৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন সচেতন মানুষের প্রতিবাদের জেরে তিনি ফেসবুক থেকে পোস্টগুলো ডিলেট করলেও স্কিনশট রয়ে গেছে। একজন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার এমন সেচ্ছাচারিতামূলক আচরণে আমরা হতভম্ব হয়ে যাই৷ কিন্তু আসলে সালমা আক্তার কয়েকবছর ধরে কলেজে পড়ে না এমন প্রমাণও আছে আমাদের কাছে। এমনকি সালমা আক্তার লন্ডন প্রবাসী এক বিএনপি নেতার নির্দেশে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তাকে টার্গেট করে প্রতারণা করে যাচ্ছে মর্মে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

সালমার অপকর্ম গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশ হলে তার জের ধরে ডিআইজি আক্তারুজ্জামান এর নির্দেশে গত ১১ মে রাত আনুমানিক ৮টায় মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার আমাকে থানায় ডাকেন। আমি আমার দূর সম্পর্কের নাতি আল আমিনকে সাথে নিয়ে মঠবাড়িয়া থানায় হাজির হই। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমার নাতি আল আমিনকে থানার হাজতে বন্দি করে এবং ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার আমাকে বলে ওপরের নির্দেশ আছে, সাংবাদিককে কল করে সালমার বিরুদ্ধে যে নিউজ আছে তা ডিলেট করান নয়তো আপনার নাতিকে মামলা দিয়ে চালান করে দেবো। এরপর আমার কাছ থেকে ঐ রিপোর্ট করা সাংবাদিক মেহেদী হাসান এর নম্বর নিয়ে তাকে কল করে ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার নিউজ ডিলেট করতে বলে নতুবা সাংবাদিককেও ফাঁসিয়ে দেবার কথা বলে। এরপর সাংবাদিক কর্তৃক প্রমাণসহ প্রকাশ করা ভিডিও রিপোর্টটি ফেসবুক থেকে ডিলেট করা হলে আমার নাতি আল আমিনকে হাজত থেকে বের করা হয়। কিন্তু আমাকে ও আমার নাতিকে সারা রাত থানায় বসে থাকতে বাধ্য করে পরদিন দুপুর ২ টায় ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার একটি সাদা কাগজে আমাকে সাক্ষর দিতে বলে। আমি ওসিকে জিজ্ঞেস করি কাগজে কিছু লেখা নেই কেন? তখন ওসি বলে অপারেটর আসলে বাকীটা লিখে নেবো আপনি সই দেন। এরপর আমি সেই কাগজে সই দেই। অতপর ওসি কামরুজ্জামান আমাকে বলে সালমাকে যেন ২ লাখ টাকা দেই এতে সে আমাদের আর হয়রানি করবে না। কিন্তু আমি বারবার যুক্তি দিয়ে বলতে থাকি আমার পূত্রবধূ সালমার প্রতারণার বিষয়টি বিভিন্ন তদন্তে প্রমাণিত। সে আজ পর্যন্ত কেবলমাত্র হয়রানি করা ছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও কোথাও প্রমাণ করতে পারেনি। তাহলে কেন আমরা তাকে টাকা দেব? তখন ওসি কামরুজ্জামান বলেন, কখনো কখনো হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকা দিতে হয়৷ কিছু করার নাই। কিন্তু অন্যায়ভাবে আমার পূত্রবধূ চিহ্নিত প্রতারক সালমা আক্তারকে কোন টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় সে ডিআইজি ও পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের লাগাতার হয়রানির হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া পুলিশ কর্তৃক বেআইনি ভাবে আমার পরিবারকে থানা হাজতে আটকে রাখা, সাদা কাগজে সাক্ষর রাখা, ও প্রতারক সালমাকে টাকা দিতে বলা পুরো বিষয়টিতে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি আক্তারুজ্জামান এর নির্দেশে পুলিশকে ব্যবহার করে জোর পূর্বক প্রতারক সালমার পক্ষে প্রমাণ তৈরি ও তার বিপক্ষে থাকা প্রমাণ লোপাটের প্রচেষ্টা চলছে। সম্প্রতি জানতে পেরেছি সালমা আমার ছেলে নাসির উদ্দিনের সাথে তার বিয়ে অস্বীকার করে আমার ছেলে ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়েরের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এ লক্ষ্যে ঐ বিয়ে পড়ানো মঠবাড়িয়া পৌরসভার কাজী মাওলানা মাহমুদুল হাসান এর কাবিন বইও বেআইনিভাবে জব্দ করার অপচেষ্টা চালায় বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা। কাজী মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে জোরপূর্বক কাবিনের বই নিয়ে তা গায়েব করে ফেলার অপচেষ্টা ছিল পুলিশের, যা সম্পূর্ণ ডিআইজির নির্দেশে হচ্ছে। এছাড়া প্রতারক সালমা আক্তারও ডিআইজি আক্তারুজ্জামান এর নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের ও সেই কাজীকে সরাসরি হামলার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশে কর্মরত একজন ডিআইজি কিভাবে বিনা যাচাইয়ে একজন প্রতারক নারীর পক্ষ নিলো তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না৷ সম্প্রতি ডিআইজির পরামর্শে প্রতারক তরুণী সালমা আক্তার বরিশাল সাইবার ট্রাইবুনালে আমিসহ আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যে মামলাটি করেছে সাধারণত সেই মামলার তদন্তভার সিআইডি বা পিবিআইয়ের পাবার কথা থাকলেও ডিআইজি আক্তারুজ্জামান সুকৌশলে এই মামলাটির তদন্ত মঠবাড়িয়া থানাতে নিয়েছেন, যাতে আমাদেরকে আরো ভয়ানকভাবে হয়রানি করা যায়।

এমতাবস্থায় ডিআইজি আক্তারুজ্জামান এর নির্দেশনায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের এহেন সব অপতৎপরতায় আমরা রীতিমত ভীত, শঙ্কিত, বাকরুদ্ধ। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা পুলিশ সদরদপ্তরে আইজিপি বরাবর মঠবাড়িয়া থানার ওসি ও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এরপর প্রতারক সালমা আক্তার আমাকে, আমার পূত্রবধূ, কাজী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৭ জনকে আসামী করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাদের হয়রানি করছে। অথচ আমি বৃদ্ধ মানুষ, ইন্টারনেট সম্পর্কেই কিছুই জানি না। প্রতারক সালমা আমাদের, সাংবাদিকদের এবং পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অন্তত ৩০ টি অভিযোগ,জিডি, এবং মামলা করেছেন থানা, আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে। অথচ একটি অভিযোগেরও প্রমাণ দিতে পারেনি সে। কিন্তু তার হয়রানি মিশন চলমান রয়েছে। উপরন্ত বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির অন্যায় ও অন্ধ সমর্থন পেয়ে সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবং লাগাতারভাবে আমাদের হয়রানি করে যাচ্ছে। প্রতারক সালমা আক্তারের এমন হয়রানির জেরে আমরা ইতোমধ্যে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। আমরা এখন চরম অসহায়।

জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নেওয়া ওই বৃদ্ধ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেন, উপরোক্ত বিষয়ে হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে উপস্থিত সম্মানিত সাংবাদিক ভাই ও বোনদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন, আমরা ন্যায়বিচার চাই৷ সকল হয়রানি থেকে মুক্ত হতে চাই। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অভিযোগ সংক্রান্ত সংযুক্ত নথি ছাড়াও সকল প্রমাণাদি ও সম্পূরক নথি আমার কাছে রয়েছে।