ডা. ইউনুস আলী সরকার এমপির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাকে একজন মানবতা প্রেমী রাজনীতিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে ডা. মো. ইউনুস আলী খান সরকারের মৃত্যুতে গৃহীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় একথা বলেন।
ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন: ‘তিনি (ডা. ইউনুস) অত্যন্ত অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন এবং তাকে আমি সেই ছাত্রজীবন থেকেই চিনি। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসে তিনি ডাক্তার হিসেবে মানুষের সেবা করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিনা পয়সায় মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া, তাদের ওষুধটা কিনে দেওয়াসহ তাদের পাশে তিনি সবসময় থেকেছেন। প্রতিটি আন্দোলন -সংগ্রামে তাকে আমরা সবসময় সক্রিয় দেখেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন: এত মানবতা প্রেমী একজন মানুষ যে এত দ্রুত চলে যাবেন তা কল্পনাও করতে পারিনি।
তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার গত ২৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মারা যান।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, স্থপতি রবিউল হুসাইন, সাবেক মহিলা এমপি ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, তার (প্রধানমন্ত্রীর) সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নাল আবেদীন, সাবেক কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর মৃত্যুতেও প্রধানমন্ত্রী দু:খ প্রকাশ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন: শোক প্রস্তাবের তালিকাটি দীর্ঘ এবং যাদের নাম আছে তারা সকলেই সমাজে আমাদের জন্য কিছু না কিছু দিয়ে গেছেন। ‘বীরাঙ্গনা’ বা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বা ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত-আমি সকলেরই আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা স্যার আবেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন: তিনি (স্যার আবেদ) এনজিও করতেন। কিন্তু তার কাজের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি একজন অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন এবং যথেষ্ট সম্মান দেশের জন্য বয়ে এনেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: ৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং ব্র্যাক ব্যাংক অনুরোধ করে তাকে দিয়ে আমি করিয়েছিলাম। আমি জানতাম তার দক্ষতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: আমাদের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী যুব মহিলা লীগের একজন সদস্য। তিনি ৯ম এবং ১০ম সংসদে সংসদ সদস্য এবং একজন মেধাবী রাজনীতিক ছিলেন। ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইমার্জেন্সী দেওয়া হয় এবং আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আমাকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন সেসব মামলার সকল কাজের সঙ্গে বাপ্পী যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সমারিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নাল আবেদীনের মৃত্যুতেও গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন: তার মত সৎ এবং দক্ষ সামরিক অফিসার খুব কমই পাওয়া যায়।
২০০১ সালে বিএনপির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর পরবর্তী সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন: যেহেতু মাঝে ৭ বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। তাই আমার সামরিক সচিব ছিলেন বলে বিএনপির দ্বারা অনেক নির্যাতনও তাঁকে পোহাতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: ৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জয়নাল আবেদীন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী সামরিক সচিব হিসেবে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্থপতি রবিউল হুসাইনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন: তিনি শুধুই স্থপতি ছিলেন না, একাধারে ভাল কবি এবং সাহিত্যিক ছিলেন। আমরা যে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট করেছি সেই ট্রাষ্টি বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন তিনি।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী অত্যন্ত দক্ষ একজন কূটনীতিক এবং সর্বশেষ ভারতে হাইকমিশনার হিসেবে থাকাকালীন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন: ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এই পররাষ্ট্রনীতির আলোকে সৈয়দ মোয়াজ্জেম অত্যন্ত সুন্দরভাবে কাজ করে গেছেন।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শায়খুল হাদিস আশরাফ আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শায়খুল হাদিস আশরাফ আলী কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান প্রদানের সময় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন বলেও স্মরণ করেন তিনি।
বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. হাবিব-ই-মিল্লাত, আবুল কালাম মো. আসাদুল হক ও খালেদা খানম, বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন।