ন্যায়বিচার জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া জনগণের প্রতি দয়া নয় বরং এটি জনগণের সহজাত অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, এই অধিকারকে কেবল সাংবিধানিক অধিকার বলে সাব্যস্ত করতে রাজি নই। ন্যায়বিচারের সৌন্দর্য এবং আইনের রাজকীয়তা প্রকৃতপক্ষে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন বটে। সেই কারণে দেশের সকল বিজ্ঞ বিচারককে নিরপেক্ষতার সাথে, নির্মোহ হয়ে, নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সহজাত অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া সংবর্ধনায় তিনি একথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ যদি দূর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হয় তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দু’টি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বারবার স্মরণ করতে হবে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচার বিভাগে কোনো দুষ্ট ক্ষতকে ন্যূনতম প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সুপ্রিম কোর্টের সব শাখার অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, অলসতা এবং অযোগ্যতাকে নির্মূল করতে যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণে আমি সবাইকে পাশে পাবো এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যারা নিয়ামক শক্তি রয়েছেন তারা সকলে আমাদের প্রতি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এটা আমার একান্ত আবেদন। ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয় এমন সকল কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর হবো।
তিনি জানান, দেশের অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসন তথা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ৮টি বিভাগে একজন করে হাইকোর্টের বিচারপতিকে প্রধান করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতিমাসে আমি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করবো। পুরাতন মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইস এবং মনিটরিং করা হবে।
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগকে নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে যেকোন গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। আপনারা যারা বিচার বিভাগের আলোচক ও সমালোচক বন্ধু রয়েছেন তারা বিচার বিভাগের সমস্যা উপলব্ধি করবেন। নিঃসংকোচে আলোচনা বা সমালোচনা করবেন, তবে রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকামীতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে আয়োজিত এই সংবর্ধনায় উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ, আ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।