হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ প্রতিনিধি: ব্যবসায়িক কাজের জন্য মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে গিয়েছিলেন। এরপর সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা তাকে আটক করেন। ২০২১ সালের ২০মাচ তারিখে তার পকেটে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ায় তাকে আটক করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভোগ শেষেও বিভিন্ন জটিলতায় দেশে ফেরত আসা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে সেই দেশের দুইটি কারাগারে আড়াই বছর কারাবন্দি জীবন কেটেছেন। এরপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির)সহযোগিতায় স্বদেশে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমি টেকনাফ স্থল বন্দরের একজন প্রতিষ্ঠিত কাঠ ব্যবসায়ী। কারাগারে তারা মানবেতর জীবনযাপন করেছেন।
এসব কথা বললেন কক্সবাজারের মহেষখালী বাসিন্দা ও টেকনাফ স্থলবন্দরের কাঠ ব্যবসায়ী মং সিন (৪২) ।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষে ২৯ বাংলাদেশিকে ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ(বিজিপি)। ফেরত আনা বাংলাদেশিদের মধ্যে টেকনাফের ৭জন, উখিয়ার ৩জন, মহেশখালীর ১৩জন, রাঙ্গামাটির ৩ জন এবং বান্দারবানের ৩জন বাসিন্দা রয়েছেন।
মঙ্গলবার মিয়ানমারের মংডু শহরে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর প্রতিনিধিদলের কাছে এই ২৯জনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে দুপুর দুইটার দিকে নাফনদী পেরিয়ে তাদেরকে ফেরত আনা হয়েছে টেকনাফে।
বিভিন্ন মেয়াদের সাজা শেষ হওয়া ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন- কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ধোপাপাড়ার আনছারুল হকের ছেলে শাকের উল্লাহ (২৮), একই এলাকার কামাল পাশার ছেলে এখলাছ মিয়া (২৬), একই উপজেলার মুন্সির ডেইল এলাকার আবুল কালামের ছেলে শফি আলম (২৫), একই এলাকার হোসেন আহমেদের পারভেজ (২৪), রহমত উল্লাহর ছেলে মিজানুর রহমান (১৮), একই উপজেলার লম্বাঘোনা আদর্শ গ্রামের আলতাস হোসেনের ছেলে মোবারক মিয়া (২৪), একই এলাকার মো. আবদুর রহিমের ছেলে মো. মহিউদ্দিন (২২), একই উপজেলার দবঙ্গপাড়ার আব্দুল শুক্কুরের ছেলে ছালামত উল্লাহ (১৭), উখিয়ার ইনানীর মাদারবুনিয়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. শাহেদ (১৮), মহেশখালীর রাখাইনপাড়ার ইউ হ্লা তুন সিং এর ছেলে মং সিন (৪২), বান্দরবন সদরের কিবুকপাড়ার মং সিং মারমার ছেলে সিন থোয়ে মং মারমা (৩২), লামার ইউ থোয়ে সিনের ছেলে থান তুন হ্লা (৩৬), একই কিবুকপাড়ার ইউ আরি মনের ছেলে থুইচিং প্রু (২৩), রাঙ্গামাটির কাউখালীর ইউ হ্লা থুন পিউর ছেলে ইয়ং ছা থুই মারমা (২৬), টেকনাফের নাইট্যংপাড়ার শামসুল আলমের ছেলে মো. ইরফান (২২), একই এলাকার নুর হোসাইনের ছেলে মো. ইলিয়াছ (১৯), মো. সালামের ছেলে মো. জহির আহমেদ (৩১), জালিয়াপাড়ার মো. ইব্রাহিমের ছেলে মো. আব্দুল আজিজ (২১) ও মোহাম্মদ তৈয়েব (৩২), হ্নীলা দক্ষিণ লেদার হায়দার আলীর ছেলে আব্দুর সিদ্দিক (২৭), নুরুল ইসলামের ছেলে রুবেল (২০), রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া এলাকার আর পিউ সিনের ছেলে ইউ তান ওয়ারা ওরফে স্যার থুই ইউ (৩৪), কাউখালীর সুইবাই অং মারমার ছেলে থান হ্লা সিন সোয়ে সিন ইউসিচিং মারমা (৩০), মহেশখালীর পানিছড়ার আবদুল হকের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (২২), দবঙ্গপাড়ার আবদুস সামাদের ছেলে রাকিবুল হাসান রাকিব (২২), সিপাহী পাড়ার মোহাম্মদ শফির পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), লম্বাঘোনা আদর্শ গ্রামের নেজাউল করিমের ছেলে মোবারক উদ্দিন (১৮), উখিয়ার ইনানীর মাদারবুনিয়া এলাকার আবদুল গফুরের ছেলে মো. তারেক (১৯) ও রশিদ আহমেদের ছেলে মো. সাবের (২৩)।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়া ট্রানজিট জেটিঘাট দিয়ে স্পিডবোট যোগে মিয়ানমারের মংডু শহরে যান। যেখানে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ১ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পিইন ফিউ এর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মিলিত হয়। আলোচনার পর বিজিবির কাছে এই ২৯ জনকে হস্তান্তর করা হয়।
দুপুর দুইটার দিকে টেকনাফের ট্রানজিট জেটি ঘাটে ফিরে এসে গণমাধ্যম কমীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন- টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী, টেকনাফ-২বিজিবি উপ অধিনায়ক মেজর মাসুদ রানা, টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রাজ্জাক প্রমূখ।
অধিনায়ক লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, পতাকা বৈঠকের উভয়পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সীমান্তে চোরাচালান রোধ, মাদক, অনুপ্রবেশ রোধে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার। আলোচনার পর বিভিন্ন সময় সীমান্তে অনুপ্রবেশের কারণে আটক ২৯জন বাংলাদেশির কারাভোগ শেষ হওয়ায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি এবং মিয়ানমারের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার ফলে মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ২৯জন বাংলাদেশিকে কূটনৈতিক যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ফেরত আনা হয়েছে। ফেরত ২৯জন পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিকেরা বিভিন্ন সময়ে নাফনদী, বঙ্গোপসাগরের মাছ শিকার এবং সমুদ্র পথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে মিয়ানমারের আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে তাঁরা আটক হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন ,বিজিবির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জেলা পুলিশ ও অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) পুলিশের সদস্য ছিল। এদের ফেরত আনার পর তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই বাছাই শেষে স্ব-স্ব থানা পুলিশের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তবে ফেরত আনাদের মধ্যে কোন মামলার আসামি বা অপরাধী থাকলে তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।