৫ আগস্টের মতো আবারও নেতাকর্মীদের রাস্তার নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ঠাকুরগাঁও সদরের শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় মির্জা ফখরুল এ আহ্বান জানান।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা কি সত্যি সত্যিই পরিবর্তন চান? নাকি আবারো সেই আওয়ামী লীগের নৌকাতে ফিরে যেতে চান? তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা না সূচক কথা বললে মির্জা ফখরুল বলেন, ওই যে যেমন ৫ আগস্টে সবাই মিলে যেভাবে রাস্তায় নামছিলেন, তাহলে আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। ভাতের অধিকার এবং ন্যায়বিচার ও সামাজিক অধিকার পাওয়ার জন্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি, অনেক কষ্ট করেছি এবং অনেক কষ্ট ভোগ করেছি। তাই আজকে আমাদের কাছে সবচেয়ে যেটা বড় প্রয়োজন আমরা শান্তিতে থাকতে চাই, আমরা শান্তিতে একটি নির্বাচন করতে চাই। সে নির্বাচনে আমরা ভোট দিয়ে আমাদের যাকে পছন্দ তাকে নির্বাচিত করতে চাই।
আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন আর জেলে যেতে হবে না । আমরা এখন ওই শান্তিতে আছি যে রাত্রি হলে পুলিশ আমাদের বাড়িতে গিয়ে আক্রমণ করবে না। অন্তত এটুকু শান্তিতে আছি আমাদেরকে ওই খেত বাড়িতে ধান বাড়িতে অথবা গাছের ওপরে বসে থাকতে হবে না রাত্রে। যেটা আমাদেরকে গত ১৫ বছর ধরে থাকতে হয়েছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম যুদ্ধ করে। বুকের রক্ত দিয়ে লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়ে গিয়েছিল। হিন্দু-মুসলমান ভাইয়েরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলাম। আমরা সেটা ভুলি নাই। আমরা যে ভারতে গেলাম, উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম, আমাদের দেশের বাড়িঘর লুট হয়ে গেছে। পাক হানাদার বাহিনীরা লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা স্বাধীন হলাম যুদ্ধ করে এবং একটি দেশ পেলাম। আমাদের মনে আশা ছিল যে, শেখ মুজিবুর রহমান বড় নেতা। তিনি আমাদেরকে পাকিস্তান থেকে এসে একটি সুন্দর দেশ দেবেন, শান্তির দেশ। যেখানে আমরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ভাই ভাইয়ের মতো বাস করব। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা সেটা পাই নাই। ওই স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে এই দেশে হানাহানি কাটাকাটি খুন যখম হিংসা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার মানুষ যে নেতাকে (শেখ মুজিবুর রহমান) এত ভালোবাসলো, যে দলটাকে ভালোবাসতো (আওয়ামী লীগ) সে দলটাই এ দেশের মানুষের ওপর চড়াও হয়ে গেল। রব সাহেবের জাসদ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সেই সময় বাহির হয়ে আসছিল। এ দলটা মনে করেছিল আওয়ামী লীগ সেই সময় ঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছিল না। ওই সময় আওমীলীগ দুর্নীতি চুরি লুটতরাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। স্বাধীনতার পরপরই সে জাসদের প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগ হত্যা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছর ধরে আমরা লড়াই করেছি সংগ্রাম করেছি, শান্তির দেশ ভালোবাসার দেশ উন্নয়নের দেশ গড়ার জন্য। দুর্ভাগ্য আমাদের আওয়ামী লীগের হাতে যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসল ২০০৮ সালে। এরপর আবার শুরু হল অত্যাচার নির্যাতন। এবারের কায়দাটা ভিন্ন কয়েকটি দল রাখল গণতন্ত্রের একটা ফাসাদ থাকলো। আবার শুরু করল বাকশালী। একদলীয় ব্যবস্থা করার জন্য। আওয়ামী লীগ আসার পরে ২০১২ সালে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিল। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তিনবার ভোট দিতে পারিনি। আওয়ামী লীগ ভোটের ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন একটা দাবি উঠেছে যে আমরা একাই সব করে ফেলেছি, আর আমরা যে ১৫ বছর ধরে মাইর খেলাম, মামলা খেলাম গাইবি মামলা হলো জেল জুলুমের শিকার হলাম।
উপস্থিত নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু আপনারাই হামলা হামলার শিকার হন নাই, একই সঙ্গে সদরের প্রায় সাত হাজার আসামি ১০০টির ওপরে মামলা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ। ৭০০ মানুষকে গুম করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই দেশটা কারো বাপের না। আমাদের রক্ত পানি করে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা সবাই জান দিয়ে পেয়েছি বাংলা। কারো দানে পাওয়া নয়। এই দেশটা আপনাদের এই মাটি আপনাদের । এই মানুষগুলো আপনাদের । আপনাদেরকেই রক্ষা করতে হবে এ মাটি ও দেশ।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা কারো ওপর প্রতিহিংসা চালাতে চাই না, কারো ওপর প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা সবাইকে নিয়ে ভালোবেসে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আসুন আমরা সবাই মিলে সে লক্ষ্যে কাজ করি।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরীফ ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।