১৭ আগস্ট ২০০৫। সাধারণ একটি দিনই ছিল। তবে সাধারণ দিনটিকে ভয়াবহ বানিয়ে ফেলেছিল সন্ত্রাসীরা। জেএমবি। সেই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের নাম। ধর্মের নাম করে তারা সেদিন ভয়াবহ তাণ্ডবলীলায় মেতে উঠেছিল। সঙ্গে ছিল বিএনপি-জামায়াতের বেশকিছু মন্ত্রী-এমপি’র প্রকাশ্য মদদ।
এরই ফলশ্রুতিতে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়। মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় ৫০০ পয়েন্টে বোমা হামলায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হয়।
এ ঘটনার পরপরই সারা দেশে ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে আটটি, আরএমপিতে চারটি, কেএমপিতে তিনটি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৭টি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে সাতটি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে আটটি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ছয়টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে তিনটি। যার মধ্যে ১৪২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বাকি ১৭টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও পুলিশ আসামি শনাক্ত করতে না পারার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ১৩০ জন এবং গ্রেপ্তার করা হয় ৯৬১ জনকে। এক হাজার ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এখন ৫৫টি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যার আসামি সংখ্যা হচ্ছে ৩৮৬ জন। এই সিরিজ বোমা হামলার রায় প্রদান করা মামলাগুলো থেকে ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এরমধ্যে আটজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এসব মামলায় জামিনে রয়েছে ১৩৩ জন আসামি। এ ছাড়া ঢাকায় বিচারাধীন পাঁচটি মামলা সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
২০০৫ সালের পরবর্তী সময়ে কয়েকটি ধারাবাহিক বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হয়। আহত হয় চার শতাধিক। ওই বছরের ৩ অক্টোবরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের আদালতে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে তিনজন নিহত এবং বিচারকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়।
জঙ্গি হামলার সেই ধারাবাহিকতা বহুদিন ছিল। সেই প্রেক্ষাপট হলি আর্টিজানের সঙ্গেও বাঁধা। তবে এখন আর জঙ্গিরা আগের অবস্থানে নেই। নেতিয়ে পড়ছে তারা। এই সফলতা সরকারের, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, সর্বোপরি জনগণের। তারা প্রশ্রয় দেয়নি বলেই শেষ পর্যন্ত জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা পরাজিত। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
এ নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোন উপায় নেই। কারণ, জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা কমে আসলেও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আর আসবে না ১৭ আগস্টের মত ভয়াবহ দিন।