
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পরিকল্পিতভাবে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী অপহরণের ১ মাস ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার করেনি পুলিশ। এ ঘটনায় নানাভাবে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্র আরো বে-পরোয়া হয়ে উউঠেছে।
জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় উপজেলার শোভাগঞ্জ কলেজ মোড় থেকে অপহরণের শিকার হয় ঐ ছাত্রী। তাকে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে একই স্কুলের ছাত্রী অপহৃতার প্রতিবেশী রঞ্জিনা আক্তার (আর্জিনা) ও তার ছোট ভাইসহ ফাঁকি দিয়ে উক্ত কলেজ মোড়ে ডেকে আনে। সেখানে আগে থেকেই অটোবাইক (মিশুক) গাড়ি নিয়ে ওঁৎপেতে থাকা অপহরণকারী চক্রের ৮-১০ জন সদস্য জোড়পূর্বক ঐ স্কুলছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর রঞ্জিনা প্রথমে অস্বীকার করার চেষ্টা করলও তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান স্থানীয়দের কাছে ঘটনা বলে দেয়। কিন্তু, কোন নাম বলতে পারেনি। পরে রঞ্জিনা একেক বার একেক নাম ও ঠিকানা বলে। বিষয়টি স্থানীয়রা জানার চেষ্টায় রঞ্জিনাকে প্রশ্ন করতে থাকে। এছাড়া, রঞ্জিনার মোবাইলফোন ও ২টি সীমকার্ড যাচাই করলে তার সঙ্গে অপহরণকারী চক্রের গোপন সখ্যতা ও যোগসূত্রের তথ্যচিত্র সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় রঞ্জিনাসহ অপহৃতার বাবার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধীয় পক্ষেরও যোগসূত্রের প্রমাণ বেরিয়ে আসতে থাকে। অপহরণকারীদের অধিকাংশই পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সমস গ্রামের বাসিন্দা। এরপর অপহরণকারী চক্রটি অপহৃতার বাবার পরিবারকে প্রতারণা, হুমকীসহ অনৈতিক দাবী করছে। অপহৃতার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিনক্ষণে অপহৃতা বাড়ির নিজের শয়নঘরে পড়তে বসে। তার মা রান্নার কাজ করছিল। এসময় ছোট ভাই কামরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে রঞ্জিনা তার মোবাইলফোনে মিনিটকার্ড রিচার্জের কথা বলে ঐ স্কুলছাত্রীকে ডেকে নিয়ে যায়। রঞ্জিনা ও অপহরণকারী চক্রকে সহযোগিতায় ছিল অপহৃতার বাবার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধীয় পক্ষের আরো ৩ জন।
গত ২১ মার্চ থেকে ঘটনার ১ মাস ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও ১৩ বছর বয়সী অপহৃতা ঐ স্কুলছাত্রী উদ্ধার ও জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। ফলে বে-পরোয়া হয়ে জড়িতরা অপহৃতার পরিবারের প্রতি নানান হুমকী ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখায় পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
পরিকল্পিত অপহরণেরর ২দিন পর (১৮ ফেব্রুয়ারী) শ্রীপুর ইউনিয়ন কাজী আব্দুল মান্নান তার বড়ুয়াবাজারস্থ কাজী অফিসে ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম রাজা’র সভাপতিত্বে সালিশের নামে অপহৃতাকে ফেরৎ দেয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজে সহি-স্বাক্ষর গ্রহণের পর একটি রহস্যজনক সালিশ ও অঙ্গীকারনামা প্রস্তুত করেন। এরপর অপহৃতাকে সালিশস্থলে আনতে কাজী আব্দুল মান্নান, তার ছেলে সামিউল ইসলাম ওরফে সোহেল, আব্দুল ও জাহাঙ্গীর চলে যান কাজীর ভগ্নিপতি জেলা সদরের মালিবাড়ি ইউনিয়নের কচুয়ার খামার গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়ি। তারা ৩ জনই অপহৃতাকে জেলা শহরে রেখে গভীর রাতে একাকী ফিরে এসে কাজী আঃ মান্নান অপেক্ষমান অপহৃতার পরিবারবর্গকে মিথ্যা কথা বলে কিছু ব্যক্তির নামে মামলা করার কথা বলেন। সেসব ব্যক্তির মধ্যে একমাত্র তার ভাই আব্দুল ওরফে আব্দুর রহিম ছাড়া অন্যরা সকলেই কাজীর মেয়ে নিয়ে চলমান মামলার প্রতিপক্ষ। এখানেই থেমে যায়নি ছেলে সোহেল, ভাই আব্দুলসহ কাজী আঃ মান্নানের কেরামতি। তারা অপহৃতাকে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা, কথিত মানবাধিকারকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীকে ডেকে ১৩ বছর বয়সী ঐ অপহৃতাকে নানাভাবে বাধ্য করে বক্তব্যের ভিডিওসহ স্থিরচিত্র ধারণ, বিভিন্ন কাগজে সহি-স্বাক্ষর গ্রহণ করা অব্যাহত রেখেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে অপহৃতার পরিবারকে অবগত করাচ্ছেন। এছাড়া, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ভেবে অপহৃতার বাবাকে কাজী, তার ছেলে ও কাজীর ভাই আব্দুল বিভিন্ন সময় নানান ব্যক্তিকে দিয়ে মোবাইলফোনে মেয়ে ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে মুক্তিপণ দাবী করছেন। এমনকি, হুমকীও অব্যাহত রেখেছেন।
উক্ত ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও কথিত সালিশের সভাপতি নজরুল ইসলাম রাজা বলেন- সালিশনামা ও অঙ্গিকারনামাসহ যেসব ঘটনা ঘটেছে। তা কাজী আঃ মান্নান, তার ছেলে সামিউল ইসলাম ওরফে সোহেল, কাজীর ভাই আব্দুল ও সাবেক মেম্বর আঃ হামিদ সরকারের পরিকল্পনা মাফিক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন- এতে অপহৃতার পরিবারকে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও প্রতারণা করা হয়েছে। কাজী আঃ মান্নান পক্ষ ঘটনা থেকে ঘটনাবহুল যা করেছে- সবই অপহৃতাসহ তার পরিবারের জন্য চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছেন। তিনি আরো বলেন, সভাপতির আসনে থাকলেও ঐ সালিশনামা ও অঙ্গিকারনামা লেখা শেষে তিনি স্বাক্ষর করেননি।
ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম আজহারুল ইসলাম মুকুল বলেন, মেয়ে ছোট। তাই, ফেরৎ দেয়ার প্রস্তাব দিলেও ওরা মৌখিকভাবে বলা ছাড়া কার্যকরী ভূমিকায় নেই।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, অপহৃতা উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, পরিকল্পিত অপহরণের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহে অপহরণকারী চক্রের পক্ষে পৃথক রাজনৈতিক দলের ২ নেতা তদবীর চালাচ্ছেন।জড়িতরা অর্থিক তহবিল গঠন করে তা ঐ নেতাদের মাধ্যমে প্রয়োগ করায় অপহৃতা উদ্ধার ও জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়াটা রহস্যজনক বলে মনে করছেন অপহৃতার পরিবারবর্গ।