সিনহা হত্যাকাণ্ড: শিপ্রার পর জামিন পেলেন সিফাত

টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশের করা দুই মামলায় জামিন দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সোমবার রামুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ আসামি পক্ষের করা জামিন আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

আদালতে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ মোস্তফা ও মাহবুবুল আলম টিপু।

এ বিষয়ে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু গণমাধ্যমকে বলেন, মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশ সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মাদক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে একটি এবং অপরটি হত্যা মামলা। এ দুটি মামলায় আজ আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। একই সঙ্গে এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

অপর আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার ঘটনায় পুলিশ দুটি মামলা করে। এসব মামলা র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের বোন একটি মামলা করেছিলেন। সেটিও র‍্যাব তদন্ত করছে। আমরা শুনানিতে বলেছি, পুলিশ ঘটনাকে আড়াল করতেই দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। ইতোমধ্যে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে। আদালত যুক্তিগুলো নিয়ে সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন।’

এর আগে গতকাল রোববার অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় জামিন দিয়েছিলেন আদালত। পরে তিনি বিকেলে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

গত ৩১ জুলাই রাতে সিনহা নিহতের ঘটনার পর পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কক্সবাজার কারাগারে ছিলেন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী—শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর। পুলিশ সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মাদক দ্রব্য, অস্ত্র ও হত্যা মামলা এবং কক্সবাজারের রামু থানায় মাদক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে মামলা করে। শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত বুধবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

এর আগে গত ২ আগস্ট বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। আর ওসি প্রদীপকে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।

এরপর গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। অপরদিকে বাদীপক্ষ তাদের আটক ও পরে রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলালকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। আর বাকি চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।