সিইসি হঠাৎ কেন মাহবুব তালুকদারের ওপর ক্ষেপলেন

জাতীয় ভোটার দিবসে সিইসি হয়তো ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন। কিন্তু সেখানে বাধ সাধলেন ইসি মাহবুব তালুকদার। বিএনপির পক্ষে কথা বলে ভারসাম্য রক্ষা করা এই নির্বাচন কমিশনার। ভোটার দিবসেও তিনি কথা বললেন ভোটের অনিয়ম নিয়ে। এতেই তার ওপর ক্ষেপেছেন সিইসি নূরুল হুদা।

ওই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সিইসি বলেন, কমিশনকে অপদস্থ করতে যা করা দরকার, যতটুকু করা দরকার ততটুকু করেছেন মাহবুব তালুকদার।

এর আগে একই অনুষ্ঠানে মাহবুব তালুকদার বলেন, স্থানীয় নির্বাচন এখন ‘অনিয়মের মডেল’। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভোটের হার ছিলো যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৩৪ ও ২৯ দশমিক ০৭। আর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ।

চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মেয়র ও ১২ কাউন্সিলর সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সারা দেশে এই মডেলে সবাই যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি হতে পারেন তাহলে আর্থিক সাশ্রয় হবে ও সহিংসতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব তেমন থাকবে না। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের আর প্রয়োজন হবে কিনা সেটা এক বড় প্রশ্ন।

মাহবুব তালুকদার বলেন, স্থানীয় নির্বাচনেও হানাহানি, মারামারি, কেন্দ্র দখল, ইভিএম ভাংচুর ইত্যাদি মিলে এখন অনিয়মের মডেল তৈরি হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার না হলে নির্বাচনের মান আরও নিম্নগামী হওয়ার আশংকা আছে।

এর জবাবেই মূলত ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে এসে নজিরবিহীনভাবে মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

সিইসি বলেন, মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে তিনি কাজ করেন না। ব্যক্তি স্বার্থে ও একটা উদ্দেশ্য সাধনে কমিশনকে অপদস্থ করতে যা করা দরকার, যতটুকু করা দরকার ততটুকু করেছেন উনি।

নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতেই কমিশনার মাহবুব তালুকদার ধারাবাহিকভাবে ভিন্নমত পোষণ করে আসছেন। তবে এবারই প্রথম প্রকাশ্যে এবং তার উপস্থিতিতে তার বক্তব্য নিয়ে এভাবে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেল সিইসি’কে। এমন এক অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটলো, যেটির আয়োজন করা হয়েছিল জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষ্যে।

কমিশন বলছে, দেশে এখন মোট ভোটার ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে গত বছর মার্চে ভোটার ছিলো ১০ কোটি ৯৮ লাখ ১৯ হাজার ১১২ জন। আর এখন ভোটার তালিকার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে কমিশন তাতে মোট ভোটার এখন ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন।

তবে দেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ বা পরিবেশ কতটা আছে, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, ভোটার বাড়লেও ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ও পরিবেশ কমতে কমতে এখন নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, ভোটাধিকার একটা সাংবিধানিক অধিকার। ভোট দেয়া নাগরিকের দায়িত্ব। কিন্তু ভোটের পরিবেশ তৈরিতে যেই প্রতিষ্ঠান পক্ষপাতদুষ্টহীনভাবে কাজ করার কথা তারা সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভোটাধিকার যারা হরণ করেই যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। অথচ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে।

সম্প্রতি নির্বাচনে জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে যে ৪২ জন নাগরিক চিঠি দিয়েছিলেন তাদের একজন বদিউল আলম মজুমদারের অভিযোগ যে কমিশন ভোটাধিকার প্রয়োগের কার্যত কোনো সুযোগ বা পরিবেশ এখন আর কমিশন তৈরি করতে পারছে না।

এর আগে তাদের চিঠিতে বলা হয়েছিলো একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২১৩ টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, আবার ৫৯০টি কেন্দ্রে একটি প্রতীকেই সব বৈধ ভোট পড়েছে। এছাড়া সম্প্রতি স্থানীয় নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা ও লক্ষ্মীপুরের দু জন রাজনৈতিক নেতার ভোটে অনিয়ম সম্পর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এর মধ্যে একজন প্রকাশ্য জনসভায় দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন কিভাবে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে হবে।