আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার সকাল ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থা রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি মারা যান।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে গত ১ জুন দুপুরে ঢাকার শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন নাসিম। সেখানেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাতে ওই পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ আসে। তার পরের তিন দিন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গত ৫ জুন সকালে নতুন জটিলতা তৈরি হয়। হঠাৎ করে তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করেন। ওই দিন বিকেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সফল অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা নাসিমের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর গত বুধবার তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলেও কোভিড টেস্ট নেগেটিভ এসেছে বলে জানান তার চিকিৎসক।
লাইফ সাপোর্টে থাকার সময় করোনা নেগেটিভ হলে নাসিমকে সিঙ্গাপুরে পাঠাতে চেয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু তার আগেই তিনি পরপারে চলে যান।
মোহাম্মদ নাসিম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন। যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম তিন সন্তানের জনক ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
মোহাম্মদ নাসিমের বাবা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিজয়ী হন। প্রাদেশিক পরিষদের মন্ত্রীও হন। সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন পান। দ্রুতই তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতায় পরিণত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী ও স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি নিজ এলাকার উন্নয়নে ভূমিকার কারণে এখনো এখানকার মানুষের কাছে স্মরণীয়-বরণীয়।
পিতার পরে রাজনীতিতে এসে সবার অন্তরে ঠাঁই করে নেন মোহাম্মদ নাসিমও। ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে মোহাম্মদ নাসিম মামলাবিষয়ক জটিলতায় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় ছেলে তানভীর শাকিল জয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এবং সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। সিরাজগঞ্জের অবকাঠামোসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের হাত ধরে। সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতিতেও তিনি আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা ও নিজ নির্বাচনী এলাকায় অসহায় মানুষকে সহায়তা করেছেন।
ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পরে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার সন্তান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। দাদা ও বাবার পথ ধরে জাতীয় সংসদে প্রবেশ করেন নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়ও। জাতীয় সংসদে এই তিন প্রজন্মের ভূমিকা ও বক্তব্য নিয়ে একটি বই সম্পাদনা করেন মোহাম্মদ নাসিম। ‘সংসদে তিন প্রজন্ম’ নামে বইয়ে জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, মোহাম্মদ নাসিম এবং নাসিমের সন্তান তানভীর শাকিল জয়ের সংসদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত